!! দেশীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বিদেশী ব্যাংকেও তার টাকা রয়েছে বলে প্রচার করতেন তার ক্যাশিয়ার সামদানি।বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাটপ্লট, ফ্যাক্টরি, হোটেল-মোটেল, বিদেশে সেকেন্ড হোম, সবই রয়েছে তার। অর্জিত সম্পদের মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডির ১১/এ ৬২নং কনকর্ড টাওয়ারে ১টি ফ্ল্যাট, একই রোডের ৭৯নং সুবাস্তু টাওয়ারে ১টি, ধানমন্ডির ১০ নম্বর সড়কের ১১নং কনকর্ড টাওয়ারের আরেকটি ফ্ল্যাট। গুলশানে আছে তার তিনটি ফ্ল্যাট। ইস্কাটন এবিসি টাওয়ারে রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। ধানমন্ডিতে তার দুটি, পল্লবীতে ৫ কাঠা জমির উপর বহুতল ভবন। মিরপুরে তার রয়েছে ৫টি বহুতল ভবন। এরমধ্যে সাততলা থেকে শুরু করে ১৫ তলা পর্যন্ত। মিরপুর-১ নম্বরে বেড়িবাঁধ চটবাড়িতে প্রায় ১২০ কোটি টাকা মূল্যের ১৭২ শতাংশ জমি, সিলেটে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা মূল্যের ১২০ কাঠা জমি। ঢাকা টু ময়মনসিংহ, গাবতলী টু নাগেশ্বর, ঢাকা টু কক্সবাজার, ঢাকা টু চট্টগ্রাম, ঢাকা টু সিলেট, ঢাকা টু ফেনীতে তার শতাধিক কাউন্টার রয়েছে। প্রত্যেকটি কাউন্টার জমি কিনে তৈরি করা হয়েছে। না হয় নগদ টাকায় কেনা হয়েছে। প্রতিটি কাউন্টারের জন্য ২০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত টাকা দেয়া আছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় ৭৫ বিঘা জমির উপর এনা ফুডস কোম্পানি ও তার পাশে রয়েছে আরও ১৫০ বিঘা জমি। পূর্বাচল ৩০০ ফিট রা¯তার পাশে প্রায় শত বিঘা জমি। সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনালে এনা পরিবহনের নিজস্ব টার্মিনাল। সেখানেই ২০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। মহাখালীতে নিজস্ব জমিতে এনা পরিবহনের অফিস। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা বিশ্ব রোডের কাল কচুয়া বাজারের কাছে খন্দকার ফুড গ্যালারি নামে একটি রেস্টুরেন্ট ও পেট্রোল পাম্প রয়েছে। কক্সবাজার ও কুয়াকাটাতে দুটি আবাসিক হোটেল। মালয়েশিয়া, কানাডা ও আমেরিকায় রয়েছে সেকেন্ড হোম। অভিজাত এসব বাড়ি কিনতে তার প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে !!
নিজস্ব প্রতিবেদক : আশির দশকের শুরুতে ইরাকে ফিডার মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন ফেনীর ছাগলনাইয়ার নীচপনুয়া গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। দেশে ফিরেও কোন সুবিধা করতে না পেরে রাজধানীর মিরপুরে আশ্রয় নেন। এখানে পরিচয় হয় তৎকালীন মিরপুর গুলিস্তান রুটের একটি পরিবহনের নেতা সাইফুল ও বাতেনের সঙ্গে। তাদের আশ্রয় প্রশয়ে একটি বাস নামান এনায়েত। এক সময় পরিবহন নির্দলীয় থাকলেও ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ৯৬ সালে হঠাৎ বিএনপি ছেড়ে কজন লোক নিয়ে ওঠে যান জনতার মঞ্চে। ব্যস। তারপর তার কপাল খুলে যায়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ পেয়ে যান। এ সময় তিনি দখল করে নেন এনা পরিবহনের একক কর্তত্ব। ২০০১ সালে আবারও বিএনপি জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর তিনি কিছুদিন আত্মগোপনে চলে যান। ওই সরকার পতনের শেষ মুহুর্তে তিনি এসে আবারও সক্রিয় হন পরিবহন সেক্টরে। ২০০৯ সালে আওয়মাী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের এনায়েতের নিয়ন্ত্রনে চলে যায় পরিবহণ জগতের একক কতৃত্বময় অফিস ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
সর্বশেষ বিগত ৫ আগষ্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সরকার পতনের আগ মুহুর্তে এনায়েত দেশ ছেড়ে যান অষ্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু মাঝখানে এই পনের বছরে আবির্ভূত হন পরিবহন জগতের একক মাফিয়া হিসেবে। এদেশের পরিবহন জগতের চাদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করা যায় তার নজির গড়ে গেছেন তিনি। এ নিয়ে টিআইবি সহ মিডিয়ায় তার চাদাবাজির ফিরিস্তি প্রকাশ করার পর তৎপর হয়ে ওঠে দুদক।কিন্তু এনায়েতের ক্ষমতার দাপটে দুদক চুপসে যেতে বাধ্য হয়। এক দুপুরে প্রধানমন্ত্রির কার্যালয়ের একটি ফোন কলেই থমকে যায় এনায়েতের বিরুদ্বে শুরু হয় দুদকের অনুসন্ধান।
জানা গেছে, এখন পরিবহণ সেক্টর থেকে ফের দাবি তুলেছে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা। তাদের অভিযোগ এনায়েত পালিয়ে গেলেও এখনো বিদেশ থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কলকাঠি নাড়ছেন। সে পালিয়ে গেলেও তার অবর্তমানে যারা ব্যবসার হাল ধরেছে তারা কিভাবে টাকা পাচার করছে সেটার তদন্ত দাবি করছে ঢাকা সড়ক। অভিযোগ রয়েছে- বর্তমানে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নতুন কমিটির পিছনে নানা চক্রান্তে লিপ্ত এনায়েত বাহিনীর সাইদ, রফিক,কাজল, আতিক,. সামদানি, খোকন, সোহরাব ও আজিজ। এদের মধ্যে তার ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত আতিক, আজিজ, সামদানি ও খোকন। রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন টার্মিনালে তাদের দোসরর্ াএখনো সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনায়েতের অনুপস্থিতিতে তার দুই শতাধিক বাস থেকে উপার্জিত টাকা কে নিচেছ কোথায় কিভাবে পাচার করা হচেছ তা তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহণ সূত্র জানিয়েছে- গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের আগ মুুহুর্তে এনায়েত সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পরও তার বাসের একক ব্যবসা এখনো রমরমা। প্রতিদিন মহাখালি টার্মিনাল থেকে তার এসব বিলাসবহুল বাস ময়মনসিংহ, সিলেট ও কক্সবাজারে চলছে।
এসব গাড়ি আগে চলতো তার নিজস্ব কোম্পানী এনার নামে। ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর বিএনপি গাবতলীর টাার্মিনালের হানিফ পরিবহনের মালিক মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল ১৪টি বাস কিনে নেয়। বাকিগুলো বিএনপির অপর এক নেতার সহায়তায় মহাখালি টার্মিনাল থেকে চলছে। এনায়েতের দুই ক্যাশিয়ার আতিক ও আজিজ দৈনিক মহাখালি থেকে আয়ের ২২ থেকে ২৪ লাখ টাকা নিয়ে কিভাবে এনায়েতের কাছে পাঠাচেছ সেটার তদন্ত হওয়া উচিত।
কারণ দেশে বর্তমানে এনায়েতের ব্যাংক হিসেবে দৈনিক এত টাকা জমা হচেছ নাকি, অন্যভাবে বিদেশে পাচার হচেছ সেটার সুষ্টু তদন্ত হলে, কেচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা সড়কের মহাসচিব এম এ বাতেন। তিনি অভিযোগ করেন, এনায়েত পালিয়ে গেলেও পরিবহন সেক্টরে তার আধিপত্য এখনো আগের মতোই রয়েছে। বর্তমানে এক বিতর্কিত বিএনপি নেতার মদদে এনায়েত আগের মতই ব্যবসা চালানোর সুযোগ পাচেছ। এমনকি গার্মেন্টস সেক্টরের মতো পরিবহণ সেক্টরকে অস্থিরতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
মালিক সমিতির ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, এনায়েত খুবই ধুর্ত ও লোভী। নিজের স্বার্থের জন্য মুহুর্তের মধ্যেই তিনি তার দুঃসময়ে থাকা লোকদের ক্ষতি করতে দ্বিধা করতেন না। যেই সাইফুল- বাতেনের আর্শীবাদে এনায়েত একটি মাত্র বাস চালানোর মাধ্যমে পরিবহনে আত্মপ্রকাশ করেন, তাদেরকেই তিনি ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হবার পরদিনই এনায়েত রাতের অন্ধকারে দখল করে নেন তৎকালীন নির্বাচিত কমিটি সাইফুল বাতেনের অফিস। সেই থেকে টানা পনের বছরে তিনি একটি বাসের মালিক থেকে হয়েছেন ২৭৮ টি বিলাসবহুল বাসের মালিক।
এসব বাসের মধ্যে এসি-নন এসি বাস রয়েছে। প্রতিটি বাসের দাম ২ কোটি টাকা থেকে শুরু করে ৫ কোটি টাকা পর্যšত। শুধু চাদাবাজির টাকায় এসব অর্জন করেন।চাদাবাজি কি পরিমাণ হতো সেটার নূন্যতম হিসেব দিয়ে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানায়- শুধু রাজধানীতে রয়েছে ৪ হাজার বাস। প্রতিটি গাড়ি থেকে দৈনিক কমপক্ষে ৭ শ ওপরে কোন কোন ক্ষেত্রে ১৮ শ টাকা পর্যন্ত চাদা তোলা হতো। গড়ে প্রতিটি গাড়ি থেকে ১ হাজার হিসেবে দৈনিক তোলা হত ৪ কোটি টাকা। মাসিক ১২০ কোটি টাকা। বছরে ১৪৭৮ কোটি টাকা।
এ হিসেবে গত পনের বছরে উত্তোলিত চাদার পরিমাণ হয় ২২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। কিন্তু নির্মম সত্য এটাকার একটিও নেই এখন ঢাকা সড়ক মালি পরিবহণ অফিসে। শুধু পরীবাগের বিলাসবহুল অফিসটা কেনা হয়েছিল কয়েক কোটি টাকায়। আবার এটাও তিনি নিজের নামে দলিল করে আত্মসাত করে নেন। এত হিম্মওয়ালা এই গডফাদারের বিরুদ্বে কেউ কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তবে সর্বশেষ জানা গেছে- দুদক এখন নতুন করে নড়ে চড়ে বসেছে সেই পুরানো নথি নিয়ে।
জানা গেছে- বিপুল বিত্ত বৈভবের বদৌলতে তিনি বরাবরই থেকে গেছেন ধরাছোয়ার বাইরে। এমনকি ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের (দক্ষিণ) সহ সভাপতির পদটিও তিনি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন শুধু অর্থের বিনিময়ে।। আর সরকার পতন পর্যন্ত তিনি পরিবহন সেক্টরে একক রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নানা অজুহাতে বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে গড়েছেন টাকার পাহাড়। দেশে- বিদেশে গড়ে তুলেছেন বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভব। বিদেশে পাচার করেছেন অšতত হাজার কোটি টাকা। সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তিনি পরিবহন সেক্টরকে জিম্মি করে রাখতেন।
সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল তার দখলে। এ সেক্টরে মাফিয়া বনে চাঁদাবাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক এনায়েতের বিরুদ্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটা আমলে নেননি। বরং সব সেক্টরকে ম্যানেজ করে দিব্যি প্রকাশ্য চাঁদাবাজি করতেন। তার জন্য সড়কের শ্খৃলার কোন সিদ্বান্তই কার্যকর করা যেত না। সব তিনি বাতিল করে দিতেন। সড়কে নানা অপ্রীতিকর ঘটনার পর ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। নৈরাজ্য রুখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ, কমিটি, সভা-মিটিং করা হয়েছিল।
কিন্তু এনায়েত ও তার কয়েকজন সহযোগীর কারণে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এতে করে সড়কে বাসচালকরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। যার ধারাবাহিকতা এখনো আছে। প্রতিদিনই সড়কে বেপরোয়া যানবাহন চালানোর জন্য একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। তার সঙ্গে ছিল বড় ধরনের একটি চক্র। সে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী নেতাদের চাঁদাবাজির ভাগ দিয়ে বশ করে নিতেন।
এছাড়া সরকারে সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাসে মাসে টাকা দিতেন। এসব কারণে প্রকাশ্য চাঁদাবাজির মতো ঘটনার পরও কেউ প্রতিবাদ বা মুখ খোলার সাহস পায়নি।
জানা গেছে-খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ১৯৮৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যে থেকে এসে দুবছর পর ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে পার্টনারশিপে একটি মিনি বাস কিনেন। বাসটি মিরপুর-গুলি¯তান রোডে চলাচল করতো। ৮৭ সালে তিনি মিরপুর-গুলি¯তান রুটের মিনিবাস মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক হন। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি নড়েচড়ে বসেন। ওই সময় ১১ দফা দাবি নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা দেশব্যাপী ধর্মঘট করে।
এনায়েত উল্লাহ ধর্মঘটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আলোচনায় আসেন। উপহার হিসেবে তিনি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। ৯৬ সালে সচিবালয়ে পাশে গড়ে ওঠা আওয়ামীলীগের আন্দোলনের প্লাটফর্ম জনতার মঞ্চে হাজির হবার পর কপাল খুলে যায়। ওখান থেকেই শেখ হাসিনার নেকনজরে পড়েন।
যে কারণে ১৯৯৯ সালের মধ্যেই তিনি ২০টি বাসের মালিক হন। এখন তিনি এনা পরিবহণের একক কর্ণধারে পরিণত হন। এটি মহাখালি থেকে ময়মনসিংহ সিলেট ও কক্সবাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্ভিস। বেশ লাভজনক। তবে গত মাসে সরকার পতনের পর বিক্ষুব্দ মালিক শ্রমিকরা এনায়েতের কাছ থেকে আত্মসাতকৃত হাজার হাজার কোটি ফিরিয়ে আনা ও তার শাস্তির দাবিতে মিছিল সমাবেশ করে।একই সঙেঙ্গ এনা পরিবহণ বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। এখন ইউনাইটেড নামে নতুন কোম্পানী করে এনার গাড়িগুলো চলাচল করছে।
এ সম্পর্কে এনার একটি বাসের মালিক জানান, ঢাকার প্রতিটি বাস টার্মিনালই তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ ছাড়া সারা দেশের বাস-মিনি বাস, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কাছ থেকেও চাঁদাবাজি করতেন। বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস মালিকদের কাছ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করেছেন। দৈনিক চাঁদার পাশাপাশি মাসিক চাঁদাও নিতেন। এ ছাড়া নতুন বাস কোনো রুটে দিতে হলে তাকে ২ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আবার কোনো কোম্পানি নতুন বাস কিনলে সেখান থেকে একটি ভাগ এনায়েতের ব্যাংক হিসাবে দেয় ওই কোম্পানি। না দিলে ওই কোম্পানির বাস সড়কে নামতে দেয়া হয় না। তাই ওই কোম্পানি বাস বিক্রির সময়ই মালিকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা বেশি নেয়। এভাবে প্রায় দেড় দশকে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
প্রশ্ন ্এত টাকা কোথায় রেখেছেন ? দেশীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বিদেশী ব্যাংকেও তার টাকা রয়েছে বলে প্রচার করতেন তার ক্যাশিয়ার সামদানি।বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাটপ্লট, ফ্যাক্টরি, হোটেল-মোটেল, বিদেশে সেকেন্ড হোম, সবই রয়েছে তার। অর্জিত সম্পদের মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডির ১১/এ ৬২নং কনকর্ড টাওয়ারে ১টি ফ্ল্যাট, একই রোডের ৭৯নং সুবাস্তু টাওয়ারে ১টি, ধানমন্ডির ১০ নম্বর সড়কের ১১নং কনকর্ড টাওয়ারের আরেকটি ফ্ল্যাট। গুলশানে আছে তার তিনটি ফ্ল্যাট। ইস্কাটন এবিসি টাওয়ারে রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। ধানমন্ডিতে তার দুটি, পল্লবীতে ৫ কাঠা জমির উপর বহুতল ভবন।
মিরপুরে তার রয়েছে ৫টি বহুতল ভবন। এরমধ্যে সাততলা থেকে শুরু করে ১৫ তলা পর্যন্ত। মিরপুর-১ নম্বরে বেড়িবাঁধ চটবাড়িতে প্রায় ১২০ কোটি টাকা মূল্যের ১৭২ শতাংশ জমি, সিলেটে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা মূল্যের ১২০ কাঠা জমি। ঢাকা টু ময়মনসিংহ, গাবতলী টু নাগেশ্বর, ঢাকা টু কক্সবাজার, ঢাকা টু চট্টগ্রাম, ঢাকা টু সিলেট, ঢাকা টু ফেনীতে তার শতাধিক কাউন্টার রয়েছে।
প্রত্যেকটি কাউন্টার জমি কিনে তৈরি করা হয়েছে। না হয় নগদ টাকায় কেনা হয়েছে। প্রতিটি কাউন্টারের জন্য ২০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত টাকা দেয়া আছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় ৭৫ বিঘা জমির উপর এনা ফুডস কোম্পানি ও তার পাশে রয়েছে আরও ১৫০ বিঘা জমি। পূর্বাচল ৩০০ ফিট রা¯তার পাশে প্রায় শত বিঘা জমি। সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনালে এনা পরিবহনের নিজস্ব টার্মিনাল।
সেখানেই ২০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। মহাখালীতে নিজস্ব জমিতে এনা পরিবহনের অফিস। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা বিশ্ব রোডের কাল কচুয়া বাজারের কাছে খন্দকার ফুড গ্যালারি নামে একটি রেস্টুরেন্ট ও পেট্রোল পাম্প রয়েছে। কক্সবাজার ও কুয়াকাটাতে দুটি আবাসিক হোটেল। মালয়েশিয়া, কানাডা ও আমেরিকায় রয়েছে সেকেন্ড হোম। অভিজাত এসব বাড়ি কিনতে তার প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
অসম্ভব ধূর্ত ও স্বার্থপর এই নেতা সর্বশেষ এক দশকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এসব টাকা দিয়ে বিদেশে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের হিসাবে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকা। নিজের ও পরিবারের সদস্য ছাড়াও এনায়েত তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও কাছের মানুষের নামে ফ্ল্যাট,প্লট, গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মালিক সমিতির কার্যালয় ছিল মতিঝিলে বিআরটিসি ভবনে। ছয় বছর আগে ইউনিক হাইটসে আট হাজার বর্গফুটের অফিস নেন এনায়েত। ওই অফিসের পেছনে প্রায় ১৫ কোটি টাকা খরচ করেন তিনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাস ও মিনিবাস থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। এই চাঁদার ভাগ পান দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা। বিআরটিএ’র হিসাবে দেশে বাস, মিনিবাস ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। তিন পদ্ধতির অধীন এসব যানবাহন থেকে বছরে অন্তত ১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা চাঁদা ওঠে।
এদিকে সর্বশেষ দুদক সূত্রে জানা গেছে- ২০১৯ সালে এনায়েতের বিরদ্বে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিসহ হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। তার আগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইসমাইল হোসেন বাচ্চু দাবি করেন, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত প্রতিদিন ঢাকার পরিবহন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন। ওই সময় অভিযোগ সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত দুদকেও জমা দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে চার বছর আগে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেয় সংস্থাটি। ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সম্পদের হিসাব দাখিল করেন।
এনায়েত ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পান অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। যাচাই-বাছাই শেষে তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে দুদকে প্রতিবেদন জমা দেন আড়াই বছর আগে। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রির অফিসের তদ্বীরের দরুণ ওই অনুসন্ধান থমকে যায়। জানা গেছে- প্রথমে দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সালকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যে তিনি শিক্ষা ছুটিতে গেলে আরেক উপ-পরিচালক মো. নুরুল হুদাকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। অনুসন্ধানের শুরুতে দুদক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়সাল খন্দকার, এনায়েত, তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের সম্পদের নথিপত্র চেয়ে সরকারি-বেসরকারি ৫৮টি ব্যাংকসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠান। এরপর কর্মকর্তা বদল হয়ে উপ-পরিচালক নুরুল হুদা দায়িত্বে এলে তিনি এ অনুসন্ধান এগিয়ে নেন।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিআরটিএ, নিবন্ধন অধিদপ্তর, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ পাঁচ সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজার পৌরসভা এবং জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তরসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নুরুল হুদা। এরপর ২০২১ সালের জুনে খন্দকার এনায়েত ও তার স্ত্রী নার্গিস সামসাদ, ছেলে রিদওয়ানুল আশিক নিলয় ও মেয়ে চাশমে জাহান নিশির নামে থাকা সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেয়া হয়। ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। পরে তাদের সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নুরুল হুদা।