নিজস্ব প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুন্দরী মেয়ের ছবি ব্যবহার করে ফেক আইডির মাধ্যমে ৬ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল সুজাউল হক (২৭) নামের এক যুবক। এই প্রতারণার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তবে, তার শেষ রক্ষা হয়নি। চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ফাঁদে আটকা পড়েছে এই চৌকস প্রতারক। বৃহস্পতিবার এই প্রতারককে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসিন জানান, একজন দুর্ধর্ষ ফেসবুক প্রতারক সুজাউল হক। তার জন্ম গাইবান্ধা জেলায়। জন্মের পর থেকে তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। এই প্রতারক প্রথমে ফেসবুকে স্টিভ ডেভিড নামে ফেইসবুক আইডি খুলে মানুষের সাথে সম্পর্ক জড়াতে চেষ্টা করে। কিন্তু পুরুষ আইডিতে সাড়া না পাওয়ায় স্টিভ ডেভিড নাম পরিবর্তন করে ‘রাইসা মেহজাবিন’ নাম দিয়ে নতুন আইডি খুলে বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে থাকে। সুন্দরী তরুণীর ছবি ব্যবহারের ফলে তার কাছে একে একে আসতে থাকে বন্ধুত্বের আহ্বান। এভাবে রাইসা মেহজাবিন ফেইসবুকে আইডিটি হয়ে ওঠে সেলিব্রেটি আইডি। রাইসা মেহজাবিন আইডিতে এই প্রতারক প্রতিদিন আপলোড করতে থাকে সুনির্দিষ্ট একটি আইডি থেকে সংগৃহীত সুন্দরী এক তরুণীর বিভিন্ন ধরনের ছবি। আর ইনবক্সে যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষের দুর্বলতাগুলোকে পুঁজি করে আয় করতে থাকে হাজার হাজার টাকা।
তার ফ্রেন্ডলিস্টে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, গামেন্টসকর্মী থেকে শুরু করে আছে মাল্টিলেভেল কোম্পানির কর্মকর্তারাও। ফেসবুক দুনিয়ার সেলিব্রেটি রাইসা মেহজাবিন ফেসবুকে বিজ্ঞাপন ছাড়ে তার মায়ের অসুস্থতার খবর। প্রয়োজন হয় চিকিৎসার টাকা। আর রাইসা মেহজাবিনের ফাঁদে পড়ে সকলে দু’হাত খুলে টাকা দান করতে থাকে তার দেয়া বিকাশ নম্বরে। টাকা সংগ্রহের পরই বন্ধু হয়ে যায় ব্লক। ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ভিকটিম বাদও পড়েন। গড়ে তোলেন নতুন বন্ধুত্ব। রাইসা মেহজাবিন কখনো ফোনে কথা বলতেন না। তিনি সবসময় ফেসবুক চ্যাটে বিশ্বাস করতেন। যদি কখনো কথা বলতে হয়, আর তখনই রাইসা মেহজাবিন হয়ে যায় সুজাউল হক প্রকাশ তানভীর। তানভীর কথা বলে পরিচয় দেয় রাইসা মেহজাবিন তার কাজিন। এভাবে কখনো যদি রাইসা মেহজাবিন কোনো অসুস্থতার ছবি প্রকাশ করতে হয় তখনই তিনি ইন্টারনেটের দুনিয়া থেকে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসারত রোগীর ছবি নামিয়ে তা নিজের খবর হিসেবে ফেইসবুক দুনিয়ায় তার বন্ধুদের পাঠাতেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, সম্প্রতি রাইসা মেহজাবিন আইডি থেকে চট্টগ্রামের এক ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। ওই ব্যক্তি রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করার পর তার সাথে ইনবক্সে কথোপকথনের মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করে।
ওই ব্যক্তির সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে জানায় রাইসা মেহজাবিনের মা খুবই অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। এই ব্যক্তি প্রথমে বিকাশের মাধ্যমে ৩২ হাজার টাকা প্রদান করে। পরে আবার এই ফেক আইডি থেকে ওই ব্যক্তিকে বলা হয় তার মা মারা গেছে লাশ আনার জন্য আরো ২০ হাজার টাকা দরকার। এই সময় ওই ব্যক্তির সন্দেহ হলে তিনি ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করেন। মূল ঘটনা বুঝতে পেরেই পুলিশ অভিযানে নামে।
কোতোয়ালি থানার এসআই সজল কান্তি দাশের নেতৃত্বে দীর্ঘ প্রচেষ্ঠায় এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক সুজাউলকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। পরে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানার বায়েজিদ নগর আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে রাইসা মেহজাবিন তথা সুজাউলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তার কাছ থেকে ফেক আইডি সম্বলিত একটি রেডমি মোবাইল ফোন, বিকাশ নম্বর সম্বলিত সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। গেপ্তারের পর গত ৬ বছর ধরে ফেসবুকে মেয়ে সেজে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন সুজাউল।