নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকাকে জাল টাকা ও জাল রুপির নিরাপদ স্থান মনে করে জালিয়াতচক্র। এজন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বহুতল ও নির্মাণাধীন বাড়ি বেছে নেয় তারা। কারণ ছোটো শহরে বা গ্রাম্য জনপদে কাজটি করা রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ। তারা সর্বোচ্চ তিন থেকে ছয় মাসের জন্য ভাড়ায় বাসা নিয়ে কাজটি করে থাকে। আর জাল টাকা বা জাল রুপি বাজারজাত করে সীমান্ত এলাকায়। এ তথ্য জানিয়েছে সম্প্রতি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা। সম্প্রতি রাজধানীতে জাল টাকা, জাল রুপি তৈরিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দুই বিদেশিসহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা, রুপি এবং এসব তৈরির সরঞ্জামাদি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে কদমতলীর পূর্ব জুরাইন এলাকা থেকে ৪৫ লাখ জাল টাকা ও জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো—কাওসার হামিদ খান, হেলাল উদ্দিন ও বাবু শেখ।
এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের রবারি প্রিভেনশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোলায়মান মিয়া বলেন, গ্রেফতারকৃতরা জাল টাকা ক্রয়-বিক্রয় ও তৈরির সঙ্গে জড়িত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাদের পলাতক সহযোগীরা মিলে জাল টাকা তৈরি করে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারজাত করত।
গত ৩১ জানুয়ারি বাসাবোর একটি বাসায় ভারতীয় জাল রুপি তৈরির কারখানার অভিযান চালায়। জব্দ করা হয় ৪৯ লাখ জাল রুপি। এ অভিযানে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো চক্রের হোতা বশির উদ্দিন, মনিরুজ্জামান, মনির হোসেন, আবদুল কাদের ওরফে আল আমিন, এনামুল হক আশারি, আকবর আলী, কবির হোসেন ও সোহেল মাহমুদ। গ্রেফতারকৃতরা নগরীর কদমতলা এলাকার ৩৫/১ নম্বর বাসার ষষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে এই কারখানা চালিয়ে আসছিল। ডিবি পুলিশ গত ২৫ নভেম্বর কামরাঙ্গীচর এলাকার নির্মাণাধীন অ্যাপার্টমেন্ট আরকে টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় ৫০ লাখ টাকার জালনোট। গ্রেফতার করে জাল টাকা তৈরি চক্রের ৬ সদস্য।
তারা হলো দলনেতা সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি, গিয়াস উদ্দিন, আজাহার আলী, আসিফ, জীবন বেপারী ও ফোরকান।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, জাল টাকার অভিযোগেই তারা আগেও একাধিকবার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। দুই মাস আগে তারা কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় বসে ক্ষুদ্র পরিসরে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল। পরবর্তীতে কামরাঙ্গীচর এলাকার ১৬ তলা ভবনের ছয়তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। এখানেই তারা নিয়মিত জাল টাকা তৈরি এবং বাজারজাত করে আসছিল।
গত ২৩ জানুয়ারি মগবাজার মোড়ের ওভার ব্রিজের নিচে হোটেল তাজের সামনে লাখ টাকার জাল নোটসহ মালির নাগরিক বাকাও গামারাকে গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধানমন্ডি এলাকা থেকে পোওকাম টিসিডজিও এবং মোহামাদু বাহকে গ্রেফতার করা হয়।
সম্প্রতি এবং বিগত সময় রাজধানীতে যতগুলো জাল টাকা বা জাল রুপি প্রস্তুতকারী চক্রকে গ্রেফতার করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন ও মালির যেসব নাগরিক জাল টাকার তৈরি করে না, তারা ডলার ও ইরো নিয়ে নানাভাবে প্রতারিত করে থাকে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের দৌরাত্ম্য অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।