শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা বাংলা টিভির এমডি সৈয়দ সামাদুল হক।
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলা টিভির মালিকানা শেয়ার নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সামাদুল হকের বিরুদ্ধে। মাত্র ২০ কোটি টাকায় প্রতিষ্ঠানের ৩৭ ভাগ শেয়ার বিক্রি করলেও মালিকদের সেই শেয়ার বুঝিয়ে দেননি তিনি। তার ওপর এখন চেষ্টায় আছেন বিএনপিপন্থি আরেক ব্যবসায়ীর কাছে বেশি দামে নতুন করে শেয়ার বিক্রির। এরই মধ্যে এ অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলা টিভির মালিক তথা শেয়ার হোল্ডারদের নাম প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটি বলছে, আখতার ফার্নিচারের মালিক কে এম আখতারুজ্জামান, পরিচালক তার ছেলে কে এম রিফাতুজ্জামান এবং ভাইস চেয়ারম্যান বিটিভির সাবেক সংবাদ পাঠক মনিরুল ইসলামের কাছে সৈয়দ সামাদুল হক প্রায় ২০ কোটি টাকায় প্রতিষ্ঠানের ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছিলেন সামাদুল। এরপর ছয় বছর পার হলেও কাউকে সেই শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু এখন আবার বিএনপিপন্থি আরেক ব্যবসায়ীর কাছে বেশি দামে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযোগ গেলে নড়েচড়ে বসে দুদক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থ পাচার ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এমডি সামাদুল হকসহ বাংলা টিভির পাঁচ পরিচালককে তলব করেছিল দুদক। গত ৭ জুন তাদের বক্তব্য নেওয়ার দিন ধার্য ছিল। তবে গরমে অসুস্থতার কারণে দুদকের কাছে বক্তব্য না দিয়ে সময়ের আবেদন করেন সামাদুল হক।
এর আগে ২০১৭ সালে সম্প্রচারে আসার আগেই কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে চ্যানেলটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল সিলেটের ব্যবসায়ী রাগীব আলীকে। তার মালিকানাধীন সিদ্ধেশ্বরীর ভবন থেকে শুরু হয়েছিল চ্যানেলটির কার্যক্রম। তবে প্রবাসী কোটায় চ্যানেলটির লাইসেন্স তথা অনুমোদন হলেও মালিকানায় কোনো যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেই। এমনকি যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রয়াত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সুপারিশে লাইসেন্স পেলেও তাকে কিংবা তার পরিবারের কাউকে মালিকানায় বা অন্য কোনো পদে রাখা হয় নি।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ গণমাধ্যম কে জানান, সামাদুল হক এক সময় যুক্তরাজ্যে তার মালিকানাধীন ‘জনমত’ পত্রিকায় চাকরি করতেন এবং বাংলা টিভির লাইসেন্সের জন্য তিনিও সুপারিশ করেছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তার কোনো ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব নেই। যুক্তরাজ্য প্রবাসী কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকে শেয়ার দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, বিএনপি ক্ষমতায় এলে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য আওয়ামী লীগের কারও কাছে শেয়ার বিক্রি না করে বিএনপিপন্থি চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করেছেন সামাদ। বিএনপি সরকারের আমলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মোজাম্মেল হককে সঙ্গে নিয়ে ‘চ্যানেল এস’ নামে একটি ডাউনলিংক চ্যানেল চালু করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সেটি বন্ধ হয়। পরে মালিক নাসির উদ্দিন সাথীর প্রতারণার মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে লন্ডন চলে যান।
এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সামাদুল হকের বিরুদ্ধে। বাংলা টিভির সাংবাদিক, কর্মী ও মফজল প্রতিনিধিদের ঠিকমতো বেতন না দেওয়া আর টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধি নিয়োগ বাণিজ্যসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।