বিশেষ প্রতিবেদক : খুন করার পর খুনি নিজেই উপস্থিত থানায়। আত্মসমর্পণ করতে নয়; বরং অন্য মানুষের নাম বলে তাদের ফাঁসিয়ে দিতে। রাজধানীর কাওলা থেকে এমন অভিনব খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি। রাজধানীর কাওলা এলাকায় বাইশ বছরের পাভেলকে মারধর করছে তার বন্ধুরা। এমন তথ্য নিয়ে গেল ২২ ফেব্রুয়ারি থানায় হাজির হয় ১৪ বছরের কিশোর। পুলিশ তার কাছ থেকে সব শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত অবস্থায় পায় পাভেলকে। খুঁজতে থাকে হত্যাকারীদের।
মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশও। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে অভিযোগকারী কিশোরকে। কিশোররের ওপর বল প্রয়োগ করা যায় না বয়স বিবেচনায়। শুরু হয় কাউন্সেলিং। এক পর্যায়ে পুরো ঘটনা খুলে বলে সে। খুন হওয়া পাভেল উত্ত্যক্ত করতো কিশোরের বোনদের। তাকেও হয়রানি করতো নানা সময়।
এ থেকেই ক্ষোভ। আর ক্ষোভ থেকে হত্যার পরিকল্পনা। অভিযুক্ত কিশোর জানায় পাখির বাসায় সোনার চেন আছে এমন লোভ দেখিয়ে পাভেলকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় সে। তারপর ছুরিকাঘাতে হত্যা করে তাকে।
পুলিশ বলছে, পাভেলের বন্ধুদের ওপরও ক্ষোভ ছিল অভিযুক্ত কিশোরের। আর এ কারণেই থানায় তাদের নাম বলে সে।
এ বিষয় উপ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এটা কিশোর অপরাধীদের কাজ। পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে এ কাজ করেছে, যা বিরল। সিনেমা টেলিভিশনে এখন এমন অনেক কিছুই দেখা যায়। নানা গল্প সাজিয়ে প্রাথমিকভাবে সে পুলিশকে ধোকা দিতেও সমর্থ হয়েছে।
অভিযুক্ত কিশোর দৃষ্টিনন্দন পেন্সিল স্কেচ করে। রঙিন কাগজ কেটে বানাতে পারে নানা রকম খেলনা। এমন কল্পনাপ্রবণ, সৃষ্টিশীল কিশোর কীভাবে খুনি বনে গেল- প্রশ্ন ছিল অপরাধ বিশ্লেষকদের কাছে।
এ প্রসঙ্গে অপরাধ বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, অন্যায়ের প্রতিকার না পেলে মনের ভেতন ক্ষোভ জমে। তারই প্রকাশ ঘটে এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে। সত্যি বললে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাই মূলত এর জন্য দায়ী।
সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হলে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি।