লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই রোগে ও শোকে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হলেও পরিচ্ছন্নতার লেশ মাত্র নেই এখানে। মেঝেতে, দেয়ালে, গ্রিলে, ওপরে ওঠার সিড়ি সহ ভেতর বাহির সবখানেই অপরিস্কার আর অপরিচ্ছন্নতার আবরনে ছেয়ে গেছে হাসপাতাল কমপ্লেক্সটি। ভবনের বাইরে দেয়াল ঘেষে পানি এবং ময়লা নিষ্কাশনের ড্রেন গুলোতে পানি আর ময়লা একাকার হয়ে আছে অথচ সে দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন খেয়াল নেই। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে শুধু পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বাবদ প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আর এ কাজে পণ্য ক্রয় বাবদ উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে গত অর্থ বছরে আটটি বিল ভাউচারের মাধ্যমে আট লক্ষ পচানব্বই হাজার ৯২০ টাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাবদ উত্তোলন করা হয়েছে। দু’টি সাব সেন্টারে উত্তোলন করা হয়েছে উনপঞ্চাশ হাজার ৯৫০ টাকা। পরিচ্ছন্নতার জন্য যে সামগ্রীর প্রয়োজন, ওই পন্য ক্রয় করার জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে পয়ষট্রি হাজার ৯০০ টাকা। গত এক বছরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও তার পণ্য ক্রয় বাবদ ওই অর্থ ব্যয় দেখানো হলেও হাসপাতালের যে নোংরা পরিবেশ ওই পরিবেশে একজন সুস্থ লোকও অসুস্থ হয়ে পড়বে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
জানা গেছে ইনডোর এবং আউটডোরে চিকিৎসা সেবা পেতে প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাঁচ’শ রোগী আসে ওই হসপিটালে। এসব রোগীর মধ্যে নারী, শিশু, কিশোর ও বয়স্ক ব্যক্তিরা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ থাকে শিশুদের সর্দি কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া, মারামারি, বয়স্ক ব্যক্তিদের কাশি হাঁপানী এবং মহিলাদের প্রসবকালীন সমস্যা জনিত রোগ। কিন্তু হাসপাতালের অপরিস্কার, অপরিচ্ছন্ন আর নোংরা পরিবেশ রোগীরা আরও রোগী হয়ে পড়ছে।
সরকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি হসপিটালে ওষুধ বরাদ্দ ছাড়াও ভবন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করছেন। কিন্তু সরকারের বরাদ্দকৃত এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয় না করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে নিজেরা আত্মসাৎ করছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছাড়াও ভবন রং বার্নিশ, রিপেয়ারিং, আসবাবপত্র ক্রয়, অক্সিজেন, জেনারেটর তেল খরচ সহ বিভিন্ন খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিচ্ছেন। এসব অর্থ নামে মাত্র কাজ করে সমুদয় অর্থ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে নিজেরা পকেটস্থ করছেন।
গত ২২ ২৩ অর্থ বছরে ও দুর্নীতির চরমে শিখরে ছিল, পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পাটগ্রাম উপজেলা বহুল আলোচিত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ঔষধ ও আসবাবপত্র কেনার নামে অর্ধকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, গত-২০২১-২২ অর্থবছরে পাটগ্রাম উপজেলা দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ২০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ঔষধ ও আসবাবপত্র কেনার জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যাহা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রয় করার করার কথা। প্রকৃত পক্ষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েক দফায় ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা হাসপাতালে ঔষধ ক্রয় ও আসবাবপত্র কেনার জন্য সরকার কর্তৃক প্রায় অর্ধ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হলেও নামমাত্র অর্থে ঔষধ ক্রয় করলেও ভূয়া বিল ভাউচার সাজিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ সাইফুল ইসলামের যোগ সাজসে সমূদয় টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
গত অর্থ বছরের প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী দেখা যায়, ১৩/৬/২২ তারিখে ৪টি বিল ভাউচারে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা হাসপাতালে ২০২১-২২ অর্থ বছরের ইডিসিএল উৎপাদিত এমএস আর ঔষধ সামগ্রী ক্রয় বাবদ বিল ভাউচারে উত্তোলন করা হয়েছে ১৯লাখ ৮৭হাজার ৬শত ১০টাকা, একই মাসে ১২/৬/২২তারিখে ঔষধ সামগ্রী ক্রয় বাবদ বিল ভাউচারে উত্তোলন করা হয়েছে ১৫লাখ ৬হাজার ২শত ৯২টাকা, ২৮/৬/২২ তারিখে হাজী ট্রেডার্সের ইডিসিএলের বহির্ভুত এমএসআর গ্রুপ- নং ‘ক’ ঔষধ সামগ্রী বাবাদ ৭লাখ ৯৮হাজার টাকা, একই তারিখে ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে ৭লাখ ৬হাজার ২শত ৩০টাকা, ২৮/৬/২২ তারিখে আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে ৪লাখ ১৭হাজার ৯শত ৮৭টাকা।
মজুমদার ট্রেডার্সের ২৬/৬/২২ তারিখে আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ বিল ভাউচারে উত্তোলন করা হয়েছে ৪লাখ ১৭হাজার ৯শত ৮৭টাকা। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা হাসপাতালে প্রাপ্ত হিসেবে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরের হিসেবে আকাশ পাতাল ডিফারেন্স।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা হসপিটালের স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান আলী বলেন হসপিটালের যাবতীয় কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে হয়ে থাকে এখানে আমাদের কোন হাত নেই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কোথায় অপরিস্কার চলেন দেখি। পরে তাকে অপরিস্কারের স্থান দেখালে তিনি আর কোন মন্তব্য করেননি।