ইউনানি আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ঔষধের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন  : বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত ও নিম্নমানের ঔষধ সামগ্রী সেবনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক  : অত্যাবশ্যক ও জরুরি ওষুধের মান বজায় রাখতে এবং ওষুধের দাম সর্বনিম্ন প্রতিযোগিতামূলক স্তরে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতীয় ওষুধ নীতি ঘোষনা করা হলেও কিছু বিতর্কিত ঔষধ  কোম্পানী সমূহের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায়  ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও নিরব ভূমিকায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অন্য যেকোনো শিল্প উৎপাদের সাথে ওষুধ শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যের পার্থক্য রয়েছে এ অর্থে যে, এসব প্রোডাক্ট অত্যাবশ্যকীয়, জরুরি ও জীবন রক্ষাকারী। বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃহদাংশ দরিদ্র ও অসচেতন হওয়ায় ওষুধের দাম নির্ধারণ পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সকল জনগণের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকার সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সরকাররের এই মূল্যায়নকে পুজিঁকরে কিছু অসাধু ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হারবাল কোম্পানী শুরুতেই মূল্য নির্ধারণ নিয়ে নানাভাবে গরমিল করতে শুরু করে। এতে করে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, বেশকিছু গুণগত মানসম্পন্ন কোম্পানী রয়েছে তাদের ব্যবসা করতে অনেক ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে কারণ হিসেবে জানা যায় সুনামধন্য কোম্পানিগুলো মানসম্পন্ন ঔষধ তৈরি করতে তাদের অনেক বেশি কাঁচামাল ব্যবহার করতে হয় তাই তাদের ওষুধের মূল্য বেশি হওয়া উচিত ।


বিজ্ঞাপন

কিন্তু যে সমস্ত কোম্পানি শুধু কালার ফ্লেভার দিয়ে ওষুধ তৈরি করে তাদের ওষুধ মূল্য ৩৫০টাকা থাকলেও বিক্রি করছে ৩০ টাকা বা ৪০ টাকা এ সমস্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন ভোক্তারা। কিছু কোম্পানি রয়েছে তাদের লেভেল কার্টুনের চূড়ান্ত অনুমোদন নেই, লাইসেন্স নবায়ন নাই, নাই পরিবেশের ছাড়পত্র, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের  ছাড়পত্র মানছে না ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন ( ডাব্লিউ এইচও) এর গুড ম্যানুফ্যাক্সার প্রাক্টিস (জিএমপি) এর গাইডলাইন  এছাড়াও কোম্পানি চালানোর মতো তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নাই।


বিজ্ঞাপন

এদিকে হাকিম কবিরাজ নামমাত্র আছেন কিন্তু ফ্যাক্টরিতে গেলে পাওয়া যাবে না এবং ওষুধ প্রশাসনের ও নিয়মকানুন তোয়াক্কা করেন না। এমনকি ঠিকানা এক জায়গায় ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করে অন্য জায়গায়। হাজারো প্রশ্ন রয়েছে এসমস্ত কোম্পানীর বিরুদ্ধে। ওষুধ প্রশাসন বরাবর একটি শব্দ ব্যবহার করেন জনবল স্বল্পতার কারণে এ সমস্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না । তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করি ।

ইউনিয়নে ও আয়ুর্বেদিক শিল্প সমিতির কর্মকর্তারা মনে করেন এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের পাশাপাশি ইউনানী আয়ুর্বেদীক  ওষুধের বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর অনেক চাহিদা রয়েছে আমরা এই ওষুধগুলো যদি কোয়ালিটি ও মানসম্মত ঔষধ তৈরি করতে পারি তাহলে আমাদের বিশাল একটা সম্ভাবনাময় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারবো ও বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ আসবে ।

নকল ওষুধ সেবন করে মানুষ সুস্থ না হয়ে আরও বেশি অসুস্থ হচ্ছে। মহামারির চেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে নকল ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে। নকল ও ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তাদের মনিটরিং ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।আসল ওষুধের প্রকৃত দামের তুলনায় অনেক কম দামে নকল ওষুধগুলো বাজারে বিক্রি হয়।এগুলো মাদকের চেয়েও ভয়ংকর। মানুষ অসুস্থ হয়ে ওষুধ সেবন করে। আর নকল ওষুধ সেবন করে মানুষ সুস্থ নাহয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে লুৎফুল কবীর বলেন, কোভিড রোগীদের মোনাস-১০ ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়। কিন্তু নকল মোনাস-১০-এ কোনো কার্যকর উপাদানই নেই। এই ওষুধ সেবন করে রোগের প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে অবস্থা খারাপের দিকে গিয়ে মৃত্যু হয় রোগীর। তাই নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন গণহত্যার শামিল। এটা বন্ধ করা উচিত। এসব ওষুধ তৈরি, বিক্রি ও বিপণনে জড়িতরাও সমান অপরাধী।

এ দিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকটি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধ, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত ও বাজার জাতের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই সব ইউনানী আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবত ওষুধের ব্যানারে কালার ফ্লেভার ও কেমিকেল ব্যবহার পূর্বক ওষুধ প্রস্তুত করে বাজারজাত করছে ফলে এই সব ওষুধ সেবনে জনগণের কোন উপকার হচ্ছে না। উপোরন্ত জনগণ বিরুপ প্রতিক্রায়ার শিকার হয়ে নানা রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছে। এই অভিযোগ ভুক্তভোগি মহলের একাধিক সূত্রের।

যে সকল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধ, অন-অনুমোদিত, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বাজার জাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে এর মধ্যে। ফ্যান্টাসি ফার্মা ইউনানী ফেনী বাংলাদেশ  উক্ত কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধের মধ্যে রয়েছে,  জেলাম ৪৫০ মিলি (শরবত জিনসিন), ফেয়ারজেল ক্যাপসুল অমিপ্রাজল, ফান নিশি ক্যাপসুল (হাব্বে নিশদ), ফেন- টাসোনিক্স (৬০ পিস ট্যাবলেটের ভিটামিন),এভারগ্রিন আয়ু টাঙ্গাইল বাংলাদেশ জি- কোরাল ৪৫০ মিলি (ভিটামিন)  ইস্ট বেঙ্গল ইউনানী কিশোরগঞ্জ এর  ই- রুচি ৪৫০ মিলি (ভিটামিন) লাইফ কেয়ার হোমিও ল্যাবরেটরই যাত্রাবাড়ী – ঢাকা এর  লিউ কোরিয়া প্লাস ৪৫০ মিলি (শরবত) গ্যাসট্টোজিম ২০০ মিলি (শরবত এন্টাসিন) নোভারিন ফার্মা ইউনানী উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জ বাংলাদেশ এর নোভারোজ ৪৫০/২০০ মিলি (শরবত গাওজবান) ইস্টার্ন ল্যাবরেটরিজ (ইউনানী) সিলেট বাংলাদেশ এর  ইসি তুলসি ১০০ মিলি (শরবত তুলসি) এ্যান্টিক ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) ময়মনসিংহ বাংলাদেশ এর এনামন ক্যাপসুল (হাবেব নিশাদ), ফাইটোমন হালুয়া ( কৌটা), এনাকিং ক্যাপসুল (হাবেব নিশাদ) যুবক যুবতীর ছবি সহ।এই ওষুধ গুলি সেবনের কারনে মানুষের প্রতিটি ওরগান বিকল হয়ে যেতে পারে এবং মানুষ নেশা গ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।

হামজা ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী)   :  উক্ত কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধের মধ্যে রয়েছে,   এইচপি তুলসী ৪৫০ মিলি, এইচপি তুলসী ১০০ মিলি, ট্যাবলেট হামজা রুচিক্যাপ, ক্যাপসুল পেঙ্কুল, ক্যাপসুল হামজা গ্যাস্কুল, সিরাপ হামজাপ্লেক্স (শরবত আমলা), ট্যাবলেট সুপার ক্যাপ (ভিটামিন এ টু জেড), ক্যাপসুল নিমভিট, ট্যাবলেট স্লিফিট, হামজাক্যাল- ডি, সিরাপ কফকুল, ক্যাপসুল নোএজমা, সিরাপ জিনবিট ৪৫০ মিলি (শরবত জিনসিন), সিরাপ জিনবিট ১০০ মিলি (শরবত জিনসিন), হালুয়া গ্রেফোট, সিরতাপ এয়াপেলটন ৪৫০ মিলি, সিরাপ সিইলিভ। যৌন উত্ত্বেজক ওষুধ সিলড্রেনাফিন, সাইট্রেট ও ট্রাডালাফিন সাইট্রেট নামক ভায়গ্রার উপাদান ব্যবহার করছে বলে ও ওষুধ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত একটি সূত্রের দাবি। জ্বরের ওষুধে প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিক ও আলসারে ওষুধে এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিওপ্রাজল এবং ব্যথা ও ব্যথানাশক ওষুধে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বিপি নামক এলোপেথিক ওষুধের কাচা মাল ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে। এ ওষুধের বিষয়ে ভোক্তা ও হাকিম, কবিরাজ, ইউনানী বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন এই ওষুধগুলোর মান খুবই খারাপ যা মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে। এ বিষয়ে ওষুধ কোম্পানির মালিকের কাছে জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়টি অস্বীকার করে এবং এ নিয়ে কোন কথা বলতে রাজী হয়নি। ইউনানীর সমিতির উচ্চপদস্থ কর্মকতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, হামজা ল্যাবরেটরীজ তাদের নতুন সদস্য তাই তাদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানা নেই। তবে এদের বিরুদ্ধে যদি কিছু লেখা হয় তাহলে এতে তাদের কোন আপত্তি নেই। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, হামজা সহ যে সমস্ত কোম্পানীর নামে খবর প্রকাশিত হয় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করছি ও অব্যাহত রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সবার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এস এ ল্যাবরোটরীজ (ইউনানী) :  উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা একই ডিএআর নাম্বার ব্যবহার করে সরবত সেব দুই নামে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে যার ট্রেড নাম হিটোন (শরবত শেব) ও আপেল-জি (শরবত শেব), হেপঠো, ম্যাগফেরল, ম্যাগোজিন (শরবত জিনসিন), মিকোরেক্স (শরবত ছদর) নামক ঔষধ সমূহ লেবেল কার্টুনে চূড়ান্ত অনুমোদন ব্যাতিত উৎপাদন ও বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ উটেছে। আরো জানা যায় যে কোম্পানীটি লাইসেন্স নবায়ন না করে কোম্পানীর মালিক নিম্নমানের কেমিক্যাল ব্যাহার করে দীর্ঘ দিন ধরে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে।এস এ ল্যাবরেটরীজ ইউনানী: গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার কোম্পানিতে গোপনে অন্য কোম্পানির মাল তৈরি করে। এ সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ওষুধ প্রশাসনে সংশ্লিষ্ট ফাইল অফিসারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে চাচ্ছে।

জুরাইনের দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) :  এর বিরুদ্ধে নিম্নমানের ওষুধ তৈরী ও বাজারজাত করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও উক্ত কোম্পানী এনজয় প্লাস ক্যাপসুল, এনজয় প্লাস সিরপ, রুচিটন সিরাপ, দি-টন ও দি-গোল্ড নামক ট্যাবলেট দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ভাবে বাজারজাত করছে। এই বিষয়ে অভিযোগ এনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকের কাছে বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা হলেও কতিপয় কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।এ সকল বিষয় নিয়ে জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে ধারাবাহিক ভাবে ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা তুলে ধরার পর মাঝে মধ্যে ওষুধ প্রশাসন কোম্পানির বিরুদ্ধে আই ওয়াশ করে থাকেন বলে জানা যায়। ফলোশ্রুতিতে কিছু দিন পর থেকে নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করতে মহাব্যস্ত হতে দেখা যায় কোম্পানিগুলোকে। দিহান ল্যাবরোটারীজঃ সংশ্লিষ্ট ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন বর্তমানে ট্যাবলেট ক্যাপসুল তৈরি বাজার সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আয়ুর্বেদিক শিল্প সমিতির দিহান এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কিছু কোম্পানির জন্য আমাদের মানসম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আমরাও চাই ঔষধ ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনা করাই উচিত বলে আমরা মনে করি। দিহানের মালিকের জিএফসি গাইডলাইন অনুসারে আপনি ওষুধ তৈরি করেন কিনা তিনি বলেন আমাদের এত কিছু আইন-কানুন মানা সম্ভব না ।

জুরাইন জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) : উক্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত ওষুধের নামে বাহারী মোড়কে ভয়ংঙ্কর পাশ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধ বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। ওষুধে ডেক্সামেথাসন, সিপ্রোহেপ্টাডিন, থিয়ভিট (গাবাদী পশু মোটা তাজা জাত করণ (কেমিক্যাল) ও ক্যালসিয়াম ক্যার্বনেট ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যৌন উত্তেজক ওষুধ সামগ্রীতে সিলড্রেনাফিন, সাইট্রেট ও ট্রাডালাফিন সাইট্রেট নামক ভায়গ্রার উপাদান ব্যবহার করছে বলে ও ওষুধ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত একটি সূত্রের দাবি মুনইশ, দশ্মুলারিষ্ট, আমলকী প্লাস রসায়ন, ভারজিটন, জি- যমানী, জিওভিটা, ভিগো ওষুধের মধ্যে পাওয়া গেছে। জ্বরের ওষুধে প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিক ও আলসারে ওষুধে এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিওপ্রাজল এবং ব্যথা ও ব্যথানাশক ওষুধে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বিপি নামক এলোপেথিক ওষুধের কাচামাল ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। অথচ বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারী এবং বাংলাদেশ ইউনানী ফর্মুলারীতে এলোপথিক ওষুধের কাঁচামাল বা কোন প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহারের নিয়ম নেই।ইউনানী-আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ এই সব কেমিক্যাল এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত করেই চলছে। ভাবসাবে মনে হয় রাজধানী জুরাইন এলাকাটা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আওতামুক্ত। যেন উক্ত এলাকায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। থাকলে দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এবং জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) জনাস্বাস্থ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলে এমন সব ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারত না।অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মাঠ পার্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রহস্যজনক নিরাবতা পালন করছেন। কর্মকর্তাদের এই অত্যাধিক নিরবতাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন সচেতন মহল।

জিকে ফার্মা (ইউনানী) জিকে ফার্মা (ইউনানী)  : উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে , কোম্পানির   লাইসেন্সের এর ঠিকানা ষ্টেশন রোড, টঙ্গী, গাজীপুর কিন্তু ওষুধের লেবেলের গায়ে লেখা আছে ঢাকা, বাংলাদেশ। ফেইসবুকে পেইজ-এ ঠিকানা দেয়া আছে বনানী ঢাকা। এ কোম্পানীর মালিক শাহীন এক সময় ফুটপাথের হকার ছিল। ফুটপাথে ক্যানভাস করে যৌন শক্তি বর্ধক হালুয়া বিক্রি করতো। এখন কোম্পানীর মালিক। তিনি ৫০ টি ওষুধ প্রস্তুতের লাইসেন্স নিলেও মাত্র কয়েকটি যৌনশক্তি বর্ধক, রুচি বর্ধক ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রক ওষুধ ছাড়া আর কিছুই নেই তার ওয়েবসাইটে। তার উৎপাদিত ওষুধগুলো ফুটপাত ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায়না। তার প্রধান ব্যবসা যৌনশক্তি বর্ধক অনমোদনহীন ‘কমান্ড (ঈড়সসধহফ) ও গোল্ডেন লাইফ (এড়ষফবহ খরভব)’ নামক ঔষধ বিক্রি করা। কমান্ডের দাম ৩ হাজার টাকা, আর গোল্ডেন লাইফসহ পূর্ণ প্যাকেজের মূল্য ৪২০০ টাকা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রক ওষুধ ডায়কেয়ার সেবনকারীদেও সাথে আলাপ করে জানা গেছে এটা সেবন করলে ২/৩ দিনের মধ্যেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে ডায়াবেটিস এমন মাত্রায় বেড়ে যায় যে, ইনসুলিনেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয় না। ডায়কেয়ারের গোমর ফাঁস হয়ে যাবার পর নতুন ‘হলি ডাইকিউর (ঐঙখণ উওঈটজঊ) নামে একই ওষুধ ফুটপাতে ছেড়েছে।

ন্যাচার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) লিঃ : এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে,  পুদিনা-এস, এন মুন্ইশ, এন জিংগো, এন ভিট-বি, রুচি ভিট-বি, নিশাত রেইনবো, ভিয়েক্স নামক ঔষধ সমূহের লেভেল কার্টুনের চুরান্ত অনুমোদন ব্যতিত উৎপাদন ও বাজারজাত করছে উক্ত নেচার ল্যাবরেটরিজ ইউনানী এর কারখানা মিরপুর পলাশ নগর এবং মিরপুর স্টেডিয়ামের পিছনে নেচার ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর মালিক খলিল একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে সেখানে নেচার ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর গোপন একটি ঔষধের ডিপো বানিয়েছেন এখান থেকে ভেজাল ও নিম্ন। দীর্ঘদিন যাবৎ অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করে যাচ্ছেন । এই কোম্পানিটিকে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ওষুধ প্রশাসন যৌথ অভিযানে ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন । তারপরও আগের থেকেও বেশি পরিমাণ নিম্নমানের ও ভেজাল ওষুধ তৈরি অব্যাহত রেখেছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ায় ওষুধ প্রশাসন কে ম্যানেজ করেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ভুক্তভোগীরা মনে করেন এই ওষুধ কোম্পানিতে দূরত্ব সমস্ত প্রোডাক্ট ফ্যাক্টরি থেকে উত্তোলন করে ল্যাবে পরীক্ষা করলে এর সত্যতা মিলবে। এর আগে বেশ কয়েকটি পোডাক্ট নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে তারপরও থেমে নেই সুচতুর কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমানকে দূরত্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে সচেতন মহল দাবি করেন ।

চিত্রা ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী)  আশুলিয়া সাভার ঢাকাঃ : উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে,  ভেজাল ও নিম্মমানের উৎপাদন ও বাজারজাত করছে এমন অভিযোগ বহুদিনের। আমলকী , চিত্রাভিট, চিত্রা পুদিনা,তুলসি, সেবটন, চিত্রাকফ,চিত্রাটন,জিনসিন ৪৫০মিলি ও ১০০ মিলি।মাত্রাতিরিক্ত গবাদিপশু মোটাতাজা জাত করন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা যায়। কাশির ওষুধ চিত্রাকফ ও জিনসিন মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যাবহার করা হয়। সরজমিনে কারখানা থেকে ওষুধ সংগ্রহ করিলে ও ওষুেধর নমুনা পরীক্ষা করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। চিত্রা ল্যাবরেটরী মালিকের কাছে এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন ওষুধ প্রশাসনের উপ-পরিচালক আমার কোম্পানিটি করে দিয়েছে। পরবর্তীতে উপ-পরিচালক কে ফোন দিলে তিনি বলেন ওই মালিককে আমি চিনি না কোম্পানি করে দেয়ার প্রশ্নে ওঠে না অনেক সময় আমাদের নাম ব্যবহার করে থাকে অনেকে অনেক কোম্পানি। ঘটনা মোটেই সত্য না।

নারায়নগঞ্জের সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালসের (ইউনানী) : উক্আত কোম্রপানির উৎপাদিত বিতর্কিত ঔষধের মধ্যে  আরক পুদিনা (সুরমিন্ট), সেব-এস (শরবত সেব) নামক ৪৫০মিলি সিরাপ রাজধানীসহ সারাদেশে মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে এর কারন সরুপ জানা যায় উক্ত ভিটামিন সিরাপ দুটিতে মাত্রাতিরিক্ত গবাদিপশু মোটাতাজা জাত করন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে কারন এই দুটি ভিটামিন সিরাপ সেবন করলে অতিদ্রুত স্বাস্থ্য বৃদ্ধি, রুচি বৃ্দ্ধি হয় যে কারনে জনসাধারন এই দুটি ভিটামিন সিরাপ কিনতে ঔষধের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নারায়নগঞ্জ এলাকার দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা একাধিকবার সুরমা র্ফামাসিউটিক্যালস এর উৎপাদিত ভিটামিন সিরাপ আরক পুদিনা (সুরমিন্ট), সেব-এস (শরবত সেব) এর গুনগত মান যাচাই এর জন্য ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে উল্লেখিত দুটি ভিটামিন ঔষধের নমুনা পাঠিয়ে ও অধ্যবধি নমুনা পরিক্ষার রিপোর্ট হাতে পায়নি।এর কারন সরুপ জানা যায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উর্ধতন কতৃপক্ষ এবং ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির কর্মকর্তাদের নিয়মিত অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালস এর মালিক ফিরোজ।

মডার্ন ল্যাবরেটের (ইউনানী) নরসিংধি বাংলাদেশ : উক্ত কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধের মধ্যে রয়েছে,  হরমোক্স ৪৫০ মিলি (শরবত জিনসিন), পেটাজেন ৪৫০ মিলি (শরবত জিনসিন), এনিফল ৪৫০ মিলি (শরবত জিনসিন), ক্যারামেক্স ৪৫০ মিলি (শরবত জিনসিন), ভেসিকফ ৪৫০ মিলি (শরবত জিনসিন)। মর্ডান ল্যাবরেটরি ইউনানী বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে । ওষুধের লেবেল কার্টুনের চূড়ান্ত অনুমোদন নাই । বাচ্চার ছবি ব্যবহার করে প্যাকেটে দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে ওষুধ কম মূল্যে বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে ,সত্যতা মিলবে কারখানা পরিদর্শন করে সঠিক তদারকি করলে দেখা যাবে সম্পূর্ণ নিম্নমানের কেমিক্যাল দিয়ে ওষুধ তৈরি করছেন এবং অদক্ষ শ্রমিক দিয়েই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি করছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।

সচেতন মহলের মতে  এই মুহুর্তে উল্লেখিত কোম্পানি সমুহের উৎপাদিত বিতর্কিত ঔষধের গুনগত মান পরিক্ষা সহ কোম্পানির কারখানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এর  পরিদর্শক দল প্রেরন করে অভিযোগ এর তদন্ত পূর্বক গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *