ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদী ঘেষে চরাঞ্চলে বসতি পরিবারগুলোতে শীতের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। গত ক’দিন ধরে তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ওইসব পরিবারের বসতিরা। পদ্মা নদীর তুষারাচ্ছন্ন বাতাস আর হাড় কাপানো শীতে যবুথবু দুস্থ পরিবারগুলো। ঘরে চাল নেই, পরনের বস্ত্র নেই, নুন আনতে পান্তা ফুরায় এ রকম হত দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। শীতের বস্ত্র কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। এক ফালি সূর্যের কিরণই তাদের শীতের চাদর। এ বছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো শীত বস্ত্র পায়নি বলে জানিয়েছে দুস্থরা। শনিবার উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা সুদেব রায় জানান, “এ বছর এখনো সরকারিভাবে কোনো শীত বস্ত্র বরাদ্দ আসে নাই। তাই উপজেলার দুস্থ পরিবারগুলোতে এখনো শীত বস্ত্র বিতরন করা সম্ভব হয় নাই”। জানা যায়, উপজেলায় ভাঙন কবলিত ছিন্নমূল পরিবারের বেশীরভাগ শ্রমজীবি, মজুর ও জেলে পেশাজীবী।
এসব কর্মজীবীরা কাদা পানির মধ্যেই দিন কাটিয়ে থাকে। ফলে তাদের শীতের প্রকোপ সইতে হয় অনেক বেশী।ফলে শীতের প্রকোপ সইতে না পেরে অনেক বৃদ্ধ শ্রমিক, মজুর ও জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন । শীতার্ত পরিবারে দেখা দিছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ।শীত বস্ত্রের অভাবে ওইসব পরিবারের বৃদ্ধ ও শীশুরা এক ফালি রোদ্র তাপের উষ্ণতায় দিনভর বসে থাকে উন্মুক্ত পদ্মা পারে। কেউ কেউ আবার রান্না চুলো ঘিরে উষ্ণতা মেটায়।
শনিবার উপজেলা পদ্মা নদীর চরশালেপুর গ্রামের ছগীর বিশ্বাস (৫৫) জানায়, “ গত কয়েক দিনে পদ্মা পারের তুষারাচ্ছন্ন শীতে পরিবার পরিজন সহ গৃহস্থালি গরু ছাগল রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্ত শীত নিবারনের জন্য পর্যাপ্ত বস্ত্র যোগার করতে পারি নাই”।
আরেক অসহায় বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের কুসুম বালা (৫০) জানায়, “ তার স্বামী করিম বেপারী হাপাঁনী রুগী। শীত বাড়ার ফলে ক’দিন ধইর্যা কামলা দিতে পারে নাই, তাই অভাব অনটনে নি কাটাচ্ছি”। আর একই দিন গাজীরটেক ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রামের লক্ষী রানী (৪৮) জানায়, “তার স্বামী চিত্ত হালদার (৬০) পদ্মা নদীর একজন মৎস্যজীবী। গত ক’দিন ধরে তীব্র শীতের কবলে সে নদীতে যেতে পারে নাই, তাই ধার দেনা করে দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার”।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার ভাঙন কবলিত পদ্মা পারের বসতিদের মধ্যে সদর ইউনিয়নের ফাজিলখার ডাঙ্গী, বালিয়া ডাঙ্গী ও এমপি ডাঙ্গী গ্রামের বেড়িবাঁধ, হাজীডাঙ্গী, শেখের ডাঙ্গী, টিলারচর, জাকেরের সুরা গ্রাম মিলে প্রায় দেড় হাজার পরিবার, গাজীরটেক ইউনিয়নের চর অমরাপুর, চর হোসেনপুর, জয়দেব সরকারের ডাঙ্গী বেড়িবাঁধ, ওকেল মাতুব্বরের ডাঙ্গী, বিন্দু ডাঙ্গী, মধু ফকিরের ডাঙ্গী ও আঃ রহমান প্রামানিকের ডাঙ্গী গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবার, চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আরজখার ডাঙ্গী গ্রাম, চরসালেপুর, ছমির বেপারী ডাঙ্গী, আমিনখার ডাঙ্গী ও নমুর ছ্যাম গ্রামে পদ্মার এলাকায় রয়েছে আরও প্রায় এক হাজার।
এচাড়া চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর মঈনূট পাকা রাস্তার দু’ধার, বাদশা মোল্যার ডাঙ্গী, চর মির্জাপুর, চর কালিকিনিপুর গ্রামের প্রায় ৫শ’ পরিবার তীব্র শীতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাই শনিবার উপজেলার দুস্থরা তীব্র শীতের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি সহায়তা কামনা করেছেন।