বিশেষ প্রতিবেদক : দেশে ইতালী ফেরত ৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস নামক সংক্রামন ব্যাধি শনাক্ত হওয়ার পর সরকার ও সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভূক্ত দপ্তর সমূহ করোনা ভাইরাসের সংক্রামন ঠেকাতে গ্রহন করছে নানামুখি পদক্ষেপ। সরকারের এই পদক্ষেপের অংশ হিসাবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ও দেশের করোনা ভাইরাসের সংক্রামন ঠেকাতে রীতিমত যুদ্ধে নেমে পড়েছে। এ বিষয়ে ৯ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহাবুবুর রহমান নিজ উদ্দ্যোগে করোনা ভাইরাস এর সংক্রামন প্রতিরোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ নিশ্চিত করা মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে এক জরুরী সভার আয়োজন করেন। তিনি উক্ত সভায় বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি ও ঔষধ উৎপাদনকারী এবং বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ডেকে তাদের কঠোর ভাবে হুশিয়ারী করেন যে, নির্ধারিত মূল্যের চাইতে অধিক মূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাপরিচালক ৭টি ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মূল্য নির্ধারণ করে দেন এবং ৭টি কোম্পানির নাম স্যানিটাইজার সামগ্রীর তালিকা ও মূল্য নির্ধারণ পূর্বক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। জনগন যেন স্যানিটাইজার সামগ্রী নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করতে পারে এজন্য তিনি রাজধানীসহ সারাদেশের ঔষধের বাজার নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে সতর্ক পূর্বক নির্দেশনা প্রদান করেন। মহাপরিচালক উপস্থিত ঔষধ শিল্প সমিতির নেতৃবৃন্ধ ও ঔষধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পর লক্ষ করা যাচ্ছে বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সমূহের মূল্য সরকার তথা ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে। তিনি উক্ত সভায় বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এরমধ্যে ৭টি কোম্পানীর উৎপাদিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রীর মূল্য তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ। খুচরা বিক্রেতাগন এক সংগে কোন ব্যাক্তির নিকট একটির বেশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি না করার জন্য নির্দেশ প্রদান। দেশে করোনা ভাইরাস’র সংক্রামন প্রতিরোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর চাহিদা ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগকে পুঁজি করে অসাধু ব্যাবসায়ীরা যেন বাজারে কোন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক উৎপাদিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার একই ডিস্ট্রিবিউটরকে এক ইনভয়েসে ৫০০ (পাঁচশত) পিস এর বেশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রী সরবরাহ না করার জন্য বিশেষ ভাবে নির্দেশনা দেন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রী বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মহাপরিচালক সকলকে হুশিয়ার করে দেন। জানা গেছে বিশ্বের ১০৩টি দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রামন আঘাত হেনেছে বাংলাদেশ ১০৪তম অবস্থানে রয়েছে। দেশের স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস সনাক্তের ব্যবস্থা দূর্বল হওয়ায় এর সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয় হয়নি। গত ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে রাজধানীর শাহবাগ, নিলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ সারা দেশের ঔষধের ফার্মেসিতে ফেস মাস্ক, ডেটল, স্যাভলন, হেক্সিসলসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রী বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ৯ ফেব্রুয়ারী গুলশানের দুটি ফার্মেসিকে ফেস মাস্কের দাম বেশি রাখায় ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক ফার্মেসি দুটিকে সীলগালা করা হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রীর মধ্যে হ্যান্ড রাব, স্কীন ক্লিঞ্জার, হ্যান্ডরাব সলিউশন, হ্যান্ড স্ক্রাব, সেনিটাইজার হ্যান্ডরাব, হেক্সিসল হ্যান্ড সলিউশন, সেনিস্ক্রাব স্কীন ক্লিঞ্জার, হ্যান্ড ওয়াশ সলিউশন, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও সেমিওকর্ড জেল উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ওয়াজি উল্লাহ বলেন করোনা ভাইরাসের সংক্রামন প্রতিরোধে ব্যবহৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রীর দাম যেন না বৃদ্ধি পায় এজন্য মহাপরিচালক মহোদয় ৭টি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত হ্যান্ড সেনিটাইজারের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এছাড়াও হ্যান্ড সেনিটাইজার সামগ্রীর আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান আমাদানী শুল্কের দোহাই দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে এজন্য মহাপরিচালক নিজ উদ্যোগে আমদানীকৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপর কোন প্রকার ট্যাক্স বা ভ্যাট না ধরার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কে এক পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এবং ইউনিসেফের নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর করোনা ভাইরাসের সংক্রামন ঠেকাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করছে। এছাড়া ১০ফেব্রুয়ারী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহাবুবুর রহমান র্যাবের সহায়তায় রাজধানীর মিডফোর্ড, আজিমপুর, বিএমএ ভবন, উত্তরা শ্যামলী এলাকায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ফেস মাস্ক সরবরাহ নিশ্চিত করছে এবং উর্ধ্বমূল্য রোধ করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছেন। এর ধারাবাহিকতায় ১০/০৩/২০২০ তারিখে মহাপরিচালকের নির্দেশে ঔষধ প্রশাসন রংপুর ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে ঔষধের মার্কেট মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এতে বেশি দামে ফেস মাস্ক বিক্রির সময় ৩টি ফার্মেসীকে ২০ হাজার টাকা এবং আন-রেজিষ্ট্রার্ড ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়ায় ২টি ফার্মেসীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্যানিটাইজার সামগ্রীর উচ্চ মূল্যে বিক্রির বিরুদ্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। এদেশ থেকে করোনা ভাইরাস বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।