!! বিশেষ প্রতিবেদন !!  সফল উদ্যেক্তা মাল্টা ও কমলা চাষি আব্দুল করিম এলাকায় সাড়া ফেলেছেন 

Uncategorized অর্থনীতি খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বানিজ্য বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

সুমন হোসেন, (যশোর) :  সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে আছে পাঁকা টসটসে হলুদ বর্ণের ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের রসালো মাল্টা। অল্প উঁচু গাছে থোকায় থোকায় প্রচুর মাল্টা ধরেছে, যা দেখতে ছুটে আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা। এ সময় অনেকে গাছ থেকে পাকা মাল্টা পেড়ে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য। বিদেশি ফল নিজেদের দেশে চাষ হতে দেখে অনেকে আবার ফটো তুলে ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মাল্টা বাগানে একজন প্রহরী রাতদিন বাগান দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। ৩০ বিঘা (৩৩ শতক জমি) জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয়েছে বারি-১ জাতের মাল্টা, কমলা, আপেল কুল ও থাই কুল।


বিজ্ঞাপন

২০১৪ সালে তার বন্ধু কৃষিবিদ ড. মৃত্যুঞ্জয়ের পরামর্শে নিজের ২০ শতক জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার (কেচো সার) ব্যবহার করে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করেন। ওই বছরই ভালো ফসল পান তিনি। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। বলছিলাম যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের মুজগুন্নী এলাকার মৃত আকাম গাজীর ছেলে একজন সফল উদ্যেক্তা ও কৃষক আব্দুল করিম এর কথা। বর্তমানে তিনি ওই এলাকার বেকার যুবকদের ঘুরে দাড়ানোর এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। আব্দুল করিম। বয়স ৪৮ বছর। তিনি একজন সফল উদ্যেক্তা।


বিজ্ঞাপন

বর্তমানে তার ৩০ বিঘা জমির ২৯ বিঘা জমিই লীজ (১বিঘা জমি বাবদ বছরে ২০,০০০/- টাকা হারে ) অথাৎ হারি নিয়ে বিভিন্ন ফলের বাগান করেছেন তিনি। এই হিসাবে জমির হারি বাবদ বছরে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করেন আব্দুল করিম।

এই মুহুর্তে তার বাগানে নিয়মিত শ্রমিকের কাজ করছেন ১৫ জন কৃষক। প্রতিদিন তারা এখানে নগদ টাকায় শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও ওই এলাকার অনেক বেকার যুবকরা তার পরামর্শ নিয়ে মাল্টা চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাল্টা ও কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে। ওই ফল বিক্রি করে ভালো মুনাফা আয় করেছেন বলে জানান সফল উদ্যেক্তা আব্দুল করিম। এ বছর ১৪ টন মাল্টা ও ২ টন কমলা মোট ১৬ টন মাল্টা ও কমলা তার বাগান থেকে আহরণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ওই মাল্টা গাছের গ্রাফটিং কলম চারা বিক্রি করে এবছর ১০ লাখ টাকা আয় হয়েছে করিমের।

তিনি প্রতি কেজি মাল্টা পাইকারী বিক্রি করেছেন ১৩০/- টাকা থেকে ২০০/- টাকা। প্রতি কেজি কমলা বিক্রি করেছেন ১৩০/- টাকা ১৫০/- টাকা দরে। যার অধিকাংশ ফল বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীদের কাছে গাছ থেকে পাকা অবস্থায় পাড়া হয়েছে।

আব্দুল করিমের মাল্টা ও কমলা বাগান দেখতে এসে পাকা ফল কিনেছেন সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার ধানঘরা গ্রামের মৃত ইসলাম সরদারের ছেলে মো: আনারুল সরদার। তিনি বলেন, এই প্রথম বিদেশি ফল নিজেদের দেশে গাছ থেকে পেড়ে টাটকা অবস্থায় খেয়েছি। খুব ভালো লেগেছে।

অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া শিল্প শহর থেকে ইবি নিউজ এর সম্পাদক প্রকৌশলী জাবেদ হোসেন ওই মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, সত্যিই গাছে থোকায় থোকায় পাকা হলুদ মাল্টা দেখে মন ভরে গেছে। করিম ভাই গাছ থেকে পাকা ফল পেড়ে নিজে হাতে কেটে খাওয়ালেন। পাকা ফলের স্বাদই আলাদা। এর আগে বাজার থেকে সবুজ মাল্টা কিনেছি। কিন্তু পাকা হলুদ বর্ণের মাল্টা ফল প্রচুর মিষ্টি। বাগান থেকে ফিরে আসার সময় কিছু গাছ পাকা মাল্টা ক্রয় করে নিয়ে এসেছি। গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়ার অনুভূতি সত্যি অন্যরকম।

ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানার শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত জয়নুদ্দিন মল্লিকের ছেলে মো: রুহুল আমিন ইউটিউবে ভিডিও দেখে এসেছেন আব্দুল করিমের মাল্টা ও কমলা বাগানে। তিনি আব্দুল করিমের বাগান থেকে ১০০ টি বারি-১ জাতের মাল্টা গাছের চারা গ্রাফটিং কলম ক্রয় করেছেন। প্রতিটি চারা আব্দুল করিম ১০০/- টাকা দরে বিক্রি করেন। যার মূল্য ১০,০০০/- টাকা। ওই চারা গুলো ৩৩ শতক জমিতে রোপন করবেন তিনি। এ সময় তিনি বাগান থেকে ৫ কেজি পাকা মাল্টাও ক্রয় করেছেন।

তার সাথে সফরসঙ্গী থাকা একই এলাকার ওমর আলী মল্লিকের ছেলে আলমগীর হোসেন মল্লিক জানান, এই প্রথম গাছ থেকে পাকা হলুদ মাল্টা পেড়ে খেয়ে খুব ভালো লাগছে। এই অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। নিজের এলাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু ফলও কিনেছেন তিনি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জ্যেতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, এই এলাকার সকল কৃষকদের মধ্যে অন্যতম সফল চাষি আব্দুল করিম। তাকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ সহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আব্দুল করিম জানান, আমার একজন বন্ধু কৃষিবিদ। তার পরামর্শ অনুযায়ী বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করি। মাল্টা গাছে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করায় অল্প দিনে গাছ গুলো দ্রুত বেড়ে উঠে। বছর পার হতেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসে মাল্টা বাগান দেখতে। তারা বাগান পরিদর্শন করে ফিরে যাওয়ার সময় সুলভ মূল্যে মাল্টা ও গাছের চারা ক্রয় করে নিয়ে যায়। দেশের মানুষের কল্যাণ সাধন করতে সামাজিক বনায়নে অবদান রাখতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। সকলের সহযোগিতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *