নিজস্ব প্রতিবেদক : আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো মাওলানা জুবায়ে অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা ২০২৫। মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত, মুসলিমের ঐক্য, দ্বীনি শিক্ষার প্রত্যাশা, হেফাজত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত, শান্তি এবং দেশ ও মানবতার কল্যাণ, মহান আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, কামনায় শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ আখেরি মোনাজাত। তুরাগ তীরে রোববার দুপুর ১২টা ২৭ মিনিটে এ মোনাজাত শেষ হয়। ১২টা ৮ মিনিটে শুরু হওয়া ১৯ মিনিটব্যাপী মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ।
৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ বুধবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শুরায়ে নেজামের (জুবায়ের অনুসারী) দুই ধাপের ইজতেমা। মোনাজাতের আগে হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তাঁর হিন্দি বয়ানের তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নসিহতমূলক বক্তব্য দেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেউলা।
তাঁর বয়ানের বাংলা তরজমা করেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।বাংলা, আরবি, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় আখেরি মোনাজাতে গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের পাপের ক্ষমা, সঠিক পথের দিশা চেয়ে এবং তাবলিগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তৌফিক কামনা করে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়।মোনাজাতের সময় ‘আমিন’, ‘আমিন’, ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনি তোলেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। এ সময় কেঁদে কেঁদে দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকুতি জানান ধনী-দরিদ্র, শ্রমিক-মালিক, বৃদ্ধ-যুবা নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ। বিশ্ব এস্তেমার এই জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।
এরপর শুরু হয় মোনাজাত। মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার লাখো মুসল্লি হেঁটে ইজতেমাস্থলে উপস্থিত হন। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মুসল্লি ময়দানের মোনাজাতে শরিক হতে আসেন।
বিভিন্ন যানবাহন ও নৌপথে এবং পায়ে হেঁটে মুসল্লিরা আসতে দেখা গেছে। আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে অনেকেই ময়দানের আশপাশে অলিগলি, বাড়ি ও কলকারখানার ছাদে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন সড়ক ও খালি জায়গায় পলিথিন, পত্রিকা, পাটি ও জায়নামাজ বিছিয়ে অবস্থান নিয়। মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় অনেকে যে যা পারেন পেতে বসে যান মোনাজাতে শরিক হতে। সরেজমিনে ঘুরে দেখাযায়, মোনাজাত শুরু হওয়ার আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ময়দানে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা আশপাশের অলিগলি, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ফুটওভার ব্রিজ, বাসা-বাড়ি, কলকারখানা, মার্কেট ও যানবাহনের ছাদে এবং তুরাগ নদের নৌকায় অবস্থান নেন।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সুত্রে জানাযায় ‘আজ সকালে ময়দান ও আশপাশের এলাকায় ৪-৫ লাখ মুসল্লি জড়ো হন। প্রথম পর্বে ৪০ লক্ষ মুসল্লি ইস্তেমায় অংশগ্রহন করেন। দ্বিতীয় ধাপে আজ প্রায় ৩০ লক্ষ মুসল্লি ইস্তেমায় অংশগ্রহন করেন। নির্বিঘ্নে আমরা দুই ধাপে ইজতেমা শেষ করতে পেরেছি। ময়দানে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের অর্ধশতাধিক বিদেশি রাষ্ট্রের প্রায় তিন হাজার হাজার বিদেশি মুসল্লি অবস্থান করেছেন।
বাংলা, আরবি, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় আখেরি মোনাজাতে গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের পাপের ক্ষমা, সঠিক পথের দিশা চেয়ে এবং তাবলিগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তৌফিক কামনা করে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। মোনাজাতের সময় ‘আমিন’, ‘আমিন’, ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনি তোলেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। এ সময় কেঁদে কেঁদে দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকুতি জানান ধনী-দরিদ্র, শ্রমিক-মালিক, বৃদ্ধ-যুবা নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ।
মোনাজাতে অযুত কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রাহীম আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। সবাই যেন কিছু সময়ের জন্য আল্লাহর প্রেমে দিওয়ানা হয়ে ভুলে গিয়েছিলেন হিংসা-বিদ্বেষ ও ভেদাভেদ। আমির-ফকির, ধনী-গরীর, নেতাকর্মী নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশা ও গোষ্ঠীর মানুষ পরওয়ারদেগার আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
বিশাল জনসমুদ্র থেকে মধ্যাহ্নের আকাশ কাপিয়ে ধ্বনি উঠে- ‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ’। আখেরি মোনাজাতের সময় মুঠোফোন, বেতার, ওয়ারলেস সেট, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাধে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ এক সঙ্গে হাত তুলেছেন ক্ষমাশীল পরওয়ারদিগারের শাহী দরবারে।
এছাড়া মোনাজাতে কয়েক হাজার নারী মুসল্লি অংশ নেয়। টঙ্গীর মুদাফা থেকে নারগিস আক্তার, সেলিনা আক্তার ও মরিয়ম বিবিসহ ১০-১২ জনের একদল মহিলা টঙ্গী-কামারপাড়া রোডে এসে হোগলা পাটিতে বসে অবস্থান নিয়েছেন।
তারা জানালেন, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সকালে এসে ময়দানে পাশের কামারপাড়া রোডে অবস্থান নিয়েছেন। আশুলিয়া থেকে সোনিয়া আসে ময়দানে মোনাজাতে অংশ নিতে তিন জানান, এখানে আল্লাহ কে পাওয়ার জন্য এসেছেন।গাজীপুরের বোর্ড বাজার থেকে এসেছেন রহিমা খাতুন, আমেনা বেগম, আয়েশা আক্তার ও ফেরদৌসি বেগম। তারা জানালেন, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে নিজের পাপ ক্ষমা চাওয়ার জন্য এসেছি।
মোনাজাত শেষে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যাব। দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত শেষে মূল বয়ান মঞ্চ থেকে আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
শুরায়ি নেজামের তত্ত্বাবধানে ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ৪ জানুয়ারি প্রথম ধাপ এবং ৯ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ইজতেমা আয়োজন করা হবে। আট দিন বিরতি দিয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমার এবারের আসর।