যশোরের অভয়নগরে গাজীপুর কাজী খানকা শরিফের তিন দিন ব্যাপী ৭১ তম ফাতেহা শরীফ অনুষ্ঠিত

Uncategorized খুলনা গ্রাম বাংলার খবর বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

সুমন হোসেন, (যশোর) :  যশোর জেলার অভয়নগরে গাজীপুর কাজী খানকা শরিফের তিন দিন ব্যাপী ৭১ তম ফাতেহা শরীফ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসের ৫ ও ৬ এবং ৭ তারিখে তিন দিন ব্যাপী ফাতেহা শরিফ ও উরস গাজী পুরের কাজী খানকা শরিফে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসতে থাকে গদ্দীনশীন পীর শাহ সুফি মোহাম্মদ মেসের আলী মৌলভির সাক্ষাৎকার পেতে। প্রতি বছর এ উরশ দেখতে ও তবারক খাবার বিভিন্ন নিয়তে খেতে আসেন মেসের আলী মৌলভির ভক্তবৃন্দ। তারা মনে করেন গদ্দীনশীন পীর শাহ সুফি মোহাম্মদ মেসের আলী মৌলভি একজন ইসলাম ধর্মের দীনের দাওয়াতে নিয়োজিত ছিলেন। এজন্য তিনি গাজীপুর এলাকায় ১৯৫৪ সালে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তার নাম রাখেন গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা। ওই বছরই তিনি সর্বপ্রথম কাজী খানকা শরিফের মাধ্যমে ভক্ত ও এলাকার মানুষের মাঝে বিশেষ দোয়া শেষে খাবার বিতরণ করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তিন দিন তবারক খাবার বিতরণ করা হয়।


বিজ্ঞাপন

খুলনা জেলার ফুলতলা থেকে তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী রিজিয়া বেগম নামের এক মহিলা এসেছেন গাজীপুর কাজী খানকা শরিফে। তার বয়স ৫০ বছর। তার দুই পায়ের হাটুতে ব্যাথার জন্য দাড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন না। তিনি এই তবারক খাবার ওই রোগ নিরাময়ের লক্ষে নিয়ত করে খাওয়ার জন্য এসেছেন।


বিজ্ঞাপন

একই জেলার ফুলতলা উপজেলার যুগ্নিপাশা গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আবু জাফর পেশায় একজন পাটকল শ্রমিক। তার বয়স ৬৫ বছর। তিনি বলেন, এই তবারক বিভিন্ন রোগের শিফার জন্য বিশেষ কাজ করে। এজন্য তার স্ত্রী রহিমা বেগম বেশ কিছু দিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। তার সুস্থতার জন্য এই খাবার নিয়ে যাবেন। প্রতি বছর এখানে আসি। খুব ভালো লাগে। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। নিজে খেয়ে পরিবারের জন্য সাথে করে নিয়ে যান।


বিজ্ঞাপন

গাজীপুর গ্রামের মৃত সাহাদ আলী সরদারের ছেলে মোঃ বিল্লাল সরদার। তার বয়স ৬০ বছর। তিনি একজন খাবার পরিবেশন করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছর উরশ শরীফে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়া খাবার বিতরন করার কাজ করি। এ সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দদের মাঝে খাবার পরিবেশন করি। তারা তবারক খেয়ে ও সাথে পরিবারের জন্য নিয়ে যায়। শুনেছি তারা বিভিন্ন নিয়তে খাবার খায় এবং নিয়ে যায়। এই তবারক এর উছিলায় অনেক মানুষ বিভিন্ন রোগ থেকে শেফা পেয়েছেন। এই সময়ে গাজীপুর সহ পাশ্ববর্তী এলাকায় আত্মীয় সজনরা বেড়াতে আসেন। অনেকটা ঈদের আনন্দ উপভোগ করে গোটা এলাকার মানুষ।

ফাতেহা শরিফ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছর ৭১ তম ফাতেহা শরীফ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ তারিখ বুধবার প্রথম দিন সকল দর্শনার্থী এবং ভক্তবৃন্দদের সন্ধ্যায় খাবার দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী দুই দিন দুপুরে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এবছর ৭১তম ফাতেহা শরীফে তিন দিনে আনুমানিক প্রায় আশি হাজার মানুষকে তবারক খাবার দেওয়া হয়েছে। এটাকে বাৎসরিক গাজীপুর কাজী খানকা শরিফের উরশ বলা হয়।

বর্তমান গাজীপুর কাজী খানকা শরিফের গদ্দীনশীন পীর মৌলভি আব্দুল কাদের বাবু শুক্রবার আছরের নামাজের পর সকলের মঙ্গলের উদ্দেশ্য বিশেষ মোনাজাতে দোয়া করার মাধ্যমে ফাতেহা শরীফের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বর্তমান খাদেম আছেন মো: সরওয়ার মোল্যা। তার বয়স ১০৫ বছর। তার বাড়ি ৭নং শুভরাড়া ইউনিয়ন এর রানাগাতি গ্রামে। তিনি গদ্দীনশীন পীর মৃত মেসের আলী মৌলভির হাতে মুরিদ হন। এখনও তিনি খেদমতে আছেন।

গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসাটি স্থাপিত হয় ইংরেজি ১৯৫৪ সালে। বর্তমানে শিক্ষক ৩০ জন। কর্মচারী ৮ জন। এবং ছাত্র ছাত্রী রয়েছে ১ হাজার ২শ” জন। ওই মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী ১ম শ্রেনী থেকে কামিল (মাস্টার্স) পর্যন্ত লেখাপড়া চলমান আছে।

তিন দিন ব্যপী ফাতেহা শরীফের উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেক দোকানি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সদরঘাটের আগুন মিষ্টি পানের দোকান।

দোকানের প্রকৃত মালিক প্রোপাইটর হাকিম মো: কেসমত মিয়া। বর্তমানে তিনি শারিরীক সুস্থতার জন্য তার ছেলে হাকিম ইসমাইল দোকানে বিভিন্ন মিষ্টি পান বিক্রি করছেন। তার পানের দোকানে বিভিন্ন প্রকার পান বিক্রি হচ্ছে। হাকিম ইসমাইল বলেন, দুই দিনের পান বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। বিভিন্ন মিষ্টি পান বিক্রি করেন তিনি। প্রতিটি পান ১০/- টাকা থেকে ১০০/- টাকা পর্যন্ত প্রতি পিচ পান বিক্রি করেন তিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে ইসমাইল এই কাজী খানকা শরিফে এবং তার পিতা ১৯৭০ সাল থেকে এই ফাতেহা শরিফ মেলায় পান বিক্রি করেন। তাদের বাড়ি বর্তমানে খুলনার দৌলতপুর বিএল কলেজের পাশে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *