মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী : বৃহস্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে ২টি মামলা রুজু করা হয়েছে। দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোহরাব হোসেন সোহেল ও উপসহকারী পরিচালক আফসার উদ্দিন বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিকদার ও তার স্ত্রী শেফালী খানমের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নাম্বার যথাক্রমে ২ ও ৩ তারিখ ৬.২.২৫ খ্রিঃ। মামলার কপি জজকোর্টে প্রেরন করা হয়েছে
মামলা সূত্রে জানা যায় ২ নম্বর মামলার মামলার আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ প্রদান করা হয়।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
তৎপ্রেক্ষিতে আসামী শেফালী খানম সম্পদ বিবরণী ফরমে স্থাবর ও অস্থাবর (১৬,৬৫,০০০ + ৪,০০,০০০)= ২০,৬৫,০০০/- টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে আছেন মর্মে ঘোষনা দেন। অনুসন্ধানকালে তার স্থাবর সম্পদ ৪১,৪১,৫০০/- টাকা ও অস্থাবর সম্পদ ২৩,৮৮,০০০/- টাকাসহ মোট ৬৫,২৯,৫০০/- টাকা পাওয়া গেছে। তার কোন দায় দেনা নাই। এক্ষেত্রে তিনি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট জনাব শেফালী খানম দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে (৬৫,২৯,৫০০- ২০,৬৫,০০০) = ৪৪,৬৪,৫০০/- টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। অনুসন্ধানকালে আয়কর রিটার্নসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট জনাব শেফালী খানম মেডিনোভা ও মেডিকেয়ার ক্লিনিক হতে আয়- ১৫,২৭,৫০০ ;ব্যবসার আয়-৪,০০,০০০/ প্রারম্ভিক মূলধন-৬,০০,০০০ টাকাসহ মোট আয় ২৫,২৭,৫০০/-টাকা পাওয়া যায়। অপর দিকে তার পারিবারিক খরচ-৬,৬০,০০০/- টাকা বাদে নীট আয় পাওয়া যায় (২৫,২৭,৫০০ – ৬,৬০,০০০) = ১৮,৬৭,৫০০ টাকা। অর্থাৎ নীট সম্পদ থেকে নীট আয় বাদ দিলে (৬৫,২৯,৫০০ – ১৮,৬৭,৫০০) = ৪৬,৬২,০০০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায় যা তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ।
আসামি শেফালী খানম, স্বামী-রিজাউল করিম সিকদার, ৪৪৮/১, পাচুড়িয়া, গোপালগঞ্জ সদর, গোপালগঞ্জ কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৪৪,৬৪,৫০০/- (চুয়াল্লিশ লক্ষ চৌষট্টি হাজার পাঁচশত) টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করত: অসাধু উপায়ে অর্জিত ও তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৬,৬২,০০০ (ছেচল্লিশ লক্ষ বাষট্টি হাজার) টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ও ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, বিধায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
৩ নম্বর মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রাপ্ত অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে আসামি রিজাউল করিম সিকদার এর নামে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ প্রদান করা হয়।
তৎপ্রেক্ষিতে আসামি রিজাউল করিম সিকদার দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৪৪৮, পাঁচুড়িয়া, গোপালগঞ্জে অবস্থিত পৈত্রিক ০৭ শতাংশ ভূমিতে ২২০০ বর্গফুটের ৩তলা ভবনের (আয়কর রিটার্নে ঘোষণা অনুযায়ী নির্মাণ ব্যয় ৫১,৪৫,৫৯০/-টাকার) তথ্য গোপন করেন। এছাড়া দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে প্রকৃত ঋণ দায় ৭,৭৫,০০০/- এর স্থলে ২৫,২৭,৫০০/- টাকা প্রদর্শণ করে ১৭,৫২,৫০০/- টাকার মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জনাব রিজাউল করিম সিকদার স্থাবর ৮৮,৬২,১৫৫/- টাকা ও অস্থাবর ৪,৮৯,৮৫১/- টাকাসহ মোট ৯৩,৫২,০০৬/- টাকার সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে আছেন। দায় দেনা ৭,৭৫,০০০/- টাকা বাদ দিলে তার নীট সম্পদের পরিমাণ পাওয়া যায় (৯৩,৫২,০০৬ -৭,৭৫,০০০)= ৮৫,৭৭,০০৬ টাকা। অনুসন্ধানকালে আয়কর রিটার্নসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি রিজাউল করিম সিকদার এর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বাদ দিয়ে পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ২০,১৪,০৪৭ টাকার বিপরীতে বৈধ আয় পাওয়া যায় ৮৬,৬৭,৮৫১/- টাকা। তার নীট বৈধ আয় (৮৬,৬৭,৮৫১-২০,১৪,০৪৭) = ৬৬,৫৩,৮০৪ টাকা পাওয়া গেছে। উক্ত আয়ের বিপরীতে তার নীট ৮৫,৭৭,০০৬ টাকার সম্পদ রয়েছে।অর্থাৎ নীট সম্পদ থেকে নীট আয় বাদ দিলে (৮৫,৭৭,০০৬- ৬৬,৫৩,৮০৪) = ১৯,২৩,২০২ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায় যা তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ।
আসামি রিজাউল করিম সিকদার, পিতা- মৃত আব্দুল মোতালেব, মাতা- মৃত দোলেনা বেগম, সাবেক প্রধান সহকারী, সদর হাসপাতাল গোপালগঞ্জ, বর্তমানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শেখ সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৫১,৪৫,৫৯০ (একান্ন লিক্ষ পঁয়তাল্লিশ হাজার পাঁচশত নব্বই) টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৭,৫২,৫০০ (সতেরো লিক্ষ বায়ান্ন হাজার পাঁচশত) টাকা ঋণ/দায়ের মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করত: অসাধু উপায়ে অর্জিত ও তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৯,২৩,২০২ (উনিশ লক্ষ তেইশ হাজার দুইশত দুই) টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ও ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, বিধায় তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়ছে।
এ বিষয়ে রেজাউল করিম সিকদারের বক্তব্য জানার জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।