পাল্টে যাচ্ছে নাগরিক জীবন
এম এ স্বপন : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে শুরু করেছেন নগরবাসী। এ কারণে রাজধানীর বাসা-বাড়ি ও রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা হতে শুরু করেছে।
পরিবহন চালক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনা আতঙ্কে লোকজন বাইরে বের হন অনেক কম। এর প্রভাব পড়ছে সব জায়গাতেই। করোনা ভাইরাসের ব্যাপক ছড়িয়ে পড়া রোধে জনসমাগম এড়িয়ে, পরিচ্ছন্নতার বিধি মেনে চলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
অন্য সময় কর্মব্যস্ত দিনে ঢাকার এ রাস্তা যানজটে অনেকটাই স্থবির থাকলেও কয়েকদিন ধরে বেশ ফাঁকা। জনবহুল এলাকায় চিরচেনা রূপ নেই বললেই চলে। গণপরিবহনগুলো তাই দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে যাত্রী পেতে। তারা বলেন, সবাই চলে যাচ্ছে। যাত্রী নেই। মানুষ ভাইরাস থেকে বাঁচতে চাচ্ছে।
শহর ছাড়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে। কেউ সপরিবারে, কেউ শুধু পরিবারের অন্য সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে।
তারা বলেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ। বাসায় থাকতে বলা হয়েছে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। ওখানেই নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে।
জনগণের এ যাওয়া-আসা গতানুগতিক হলেও এবার ভিন্নরকম সচেতনতার তাগিদ চিকিৎসকদের। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে হলেও করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার কথা বলছেন তারা।
রাজধানীর তুলনায় গ্রামে চিকিৎসার সুযোগ কম। তাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায় বেড়াতে যাওয়া নগরবাসীর পাশাপাশি স্বজনদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
পাল্টে যাচ্ছে নাগরিক জীবন : ট্রাফিক জ্যাম, গাড়ির অনবরত হর্ন, কিংবা প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস সবই বদলে গেছে। ঢাকার চিরাচরিত চিত্র গ্রাস করেছে করোনা ভাইরাস। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া পথেঘাটে মানুষ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই শিক্ষার্থীদেরও আনাগোনা কম। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও কম। গণপরিবহনে যাত্রীও কম। সবকিছু মিলিয়ে নাগরিক জীবন পাল্টে গেছে ঢাকাবাসীর। ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান নিশ্চিত করতে বুধবার স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার ঢাকার রাস্তাঘাট ঘুরে দেখা গেছে, বেশ ফাঁকা। রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরানবাজার, মিরপুর রোড, নিউমার্কেট, শাহবাগ এলাকায় লোক সমাগম ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট ছিল প্রায়ই জনশূন্য। দিনের বেলা সেখানে বাসচালকদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যাত্রীর জন্য। অথচ অন্যান্য দিন যাত্রীদের লাইন লেগে থাকে এই এলাকায়।
যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ ট্রাস্ট পরিবহনের চালক আফজালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে পরিবহনে এবং রাস্তায় যাত্রী কম। তিনি জানান, স্কুল কলেজ বন্ধ, রাস্তায় মানুষ কম, বাসে যাত্রী নাই, তাই আয়ও কম।
ফার্মগেট এলাকা কোচিংপাড়া নামে খ্যাত। এই এলাকায় অনেক কোচিং সেন্টার আছে। সরকারের নির্দেশে এখন তাও বন্ধ। কয়েকটি কোচিং সেন্টারের সামনে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নোটিশ টাঙানো। নোটিশে লেখাÍশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু আছে। সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু অফিস খোলা, ক্লাস বন্ধ।
করোনা আতঙ্কে প্রভাব পড়েছে রাজধানীর নি¤œ আয়ের মানুষের ওপরে। রাজধানীতে লোক সমাগম কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাটা পড়েছে তাদের রোজকার আয়ে। পান্থপথ এলাকায় ফজলু নামক এক রিকশাচালক জানান, সকালে স্কুলের সময় থেকে প্যাসেঞ্জারের চাপ থাকলেও এখন নেই। তাই কমেছে আয়। একারণে ভাড়া নিয়ে এখন বেশি দরদাম করছেন না।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন ফারহান। অফিস যেতে প্রতিদিন গণপরিবহন ব্যবহার করলেও করোনার আতঙ্কে কয়েকদিন ধরে তিনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ হলেও অফিস বন্ধ নেই। গণপরিবহনে এই সময় যাতায়াত করা রিস্ক। তাই কয়েকদিন ধরে বাইকে অফিসে যাচ্ছি। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা।
প্রসঙ্গত, বুধবার দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এদিন নতুন করে চার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে একজন নারী ও তিন জন পুরুষ। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৪ জন। আইসোলেশনে আছেন ১৬ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৪২ জন।