গণপূর্তের চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ময়নুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি’র অভিযোগ 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত চট্টগ্রাম জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

মুখে মাস্ক হাতে জলন্ত সিগারেট নিয়ে ব্যাস্ত চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম-১) এসএম ময়নুল হক।


বিজ্ঞাপন

বিশেষ প্রতিবেদক  : চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম-১) এসএম ময়নুল হক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। নিজের পকেট ‘ভারি করতে’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাপানি ব্র্যান্ডের বদলে লাগিয়েছেন চায়না লিফট। তার অধীনে সম্পন্ন হওয়া দরপত্রের সাশ্রয়কৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়েই ভুয়া কাজের বিল ভাউচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। ক্ষমতার দাপটে ‘টু পাইস’ কামিয়ে নিজ জেলা পাবনা সদরে গড়েছেন বিশাল অট্রালিকাও। সরকারি চাকরির পাশাপাশি বিনিয়োগ করেছেন ঠিকাদারি ব্যবসায়ও। অফিসে বসেই আয়েশ করে ফোঁকেন সিগারেট, যেন তিনি অফিসের ‘নবাবজাদা’।


বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কমিশনে জমা হওয়া একটি অভিযোগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১১ জুন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম-১) এসএম ময়নুল হকের এসব অভিযোগের ফিরিস্তি জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়া সত্ত্বেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আলোচিত বালিশ কাণ্ডের ঘটনায় ঠিকাদার শাহাদত হোসেনের সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ৩ কোটি টাকার কার্যাদেশ বাগিয়ে দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী ময়নুল হক। শুধু তাই নয়, দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে চাওয়া ঠিকাদারদের সম্ভাব্য ব্যয়ের ১০ শতাংশ কমিশন দিতে হয় ময়নুল হককে ‘খুশি’ করতে! আর তা না দিলেই ঠিকাদারের দরপত্রটিকে ‘নন রেস্পন্সিভ’ করে দেন তিনি।

জাপানি ব্র্যান্ডের বদলে চায়না লিফট : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের জন্য জার্মানীর বিখ্যাত LM ব্র্যান্ডের ৮০০ কেজি ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি লিফট সরবরাহ করার নির্দেশ থাকলেও নামসর্বস্ব নকল দুটি চায়না লিফট স্থাপন করে কাজ শেষ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ময়নুল হক। আর এই নকল লিফট স্থাপনের জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে ভারি করেছেন নিজের পকেট।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার লিফটগুলোর বিষয়ে বারবার অভিযোগ করলেও তার কথাকে থোড়াই কেয়ার করেছেন তিনি। এসব লিফট দ্বারা যেকোনো সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা, হতে পারে প্রাণহানীও।

চমেকে এসির নামে ‘বোমা’ : এসএম ময়নুল হক ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী অপারেশন থিয়েটার, পশ্চিম অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুম, নিউনেটাল বেবি কেয়ার ইউনিট, কার্ডিয়াক সার্জারী ভবনসহ বিভিন্ন অপারেশন থিয়েটারে সেন্ট্রাল ডাক্ট এসি স্থাপন কাজে পণ্যের কান্ট্রি অব অরিজিনসহ সিডিউল স্পেসিফিকেশনের তোয়াক্কা না করে স্থাপন করেছেন স্পেসিফিকেশন বহির্ভুত এয়ারকুলার (এসি)।

যেখানে ডাক্টের সাইজ, ম্যাটেরিয়াল ও ইনগুলেশন টেন্ডার-স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হয়নি। আশঙ্কা আছে যেকোনো সময় হাসপাতালের এরকম স্পর্শকাতর ইউনিটসমূহে এসি বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে প্রাণহানী হতে পারে।

কুনজর’ থেকে বাদ যায়নি মসজিদও : ‘ঘুষখোর’ নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ময়নুল হকের কুনজর থেকে বাদ যায়নি আল্লাহর ঘর মসজিদও। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প ‘সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় লোহাগাড়া মডেল মসজিদ নির্মাণে ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক কাজ করিয়েছেন তিনি। সেই মসজিদেও স্পেসিফিকেশন ভঙ্গ করে স্থাপন করা হয়েছে নিম্নমানের এয়ারকুলার (এসি)।

এছাড়া, নগরের কল্পলোক মডেল মসজিদেও বৈদ্যুতিক কাজ করিয়েছেন নিম্ন মানের ক্যাবল দিয়ে। যার কারণে হয়েছেন খবরের শিরোনামও। এসএম ময়নুল হকের দাবি- ‘যতক্ষণ মসজিদ উদ্বোধন হয়ে ইমাম নামাজ পড়াচ্ছেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত সেটি মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে না। গণ্য হবে একটি স্ট্রাকচার (কাঠামো) হিসেবে। তাই সেখান থেকে অন্যান্য স্থাপনার মতো ঘুষ নেওয়া যাবে।’ এমন কথা তিনি হরহামেশাই বলে থাকেন ঠিকাদারদের কাছে।

ভুয়া ভাউচারে সরকারি টাকা আত্মসাৎ : স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গত পাঁচ বছরে আসা বরাদ্দে দরপত্র পরবর্তী সাশ্রয় হওয়া টাকাও মেরেছেন এই প্রকৌশলী। আর তাতে তিনি অবলম্বন করেছেন অভিনব পন্থা। বেচে যাওয়া অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ভুয়া কাজের ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে সেই টাকা আত্মহসাৎ করেছেন নিজেই-রয়েছে এমন অভিযোগও।

ওই অফিসের কর্মকর্তাদের অভিযোগ-ভুয়া বিল ভাউচার দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের অডিট আপত্তিতে ফাঁসানোর হুমকি দেন নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ময়নুল হক। এছাড়া, তার ইশারায় না চললে তিরস্কার-শোকজও করা হয় কর্মকর্তাদের।

১০ পার্সেন্ট দিলেই মেলে কাজ : সরকারি ক্রয় আইন ও বিধি ভঙ্গ করে তার দপ্তর কর্তৃক আহ্বানকৃত দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য টেন্ডার সাবমিটের পূর্বে ঠিকাদারকে তার অফিসে এসে তার (এসএম ময়নুল হক) সাথে সাইট ভিজিট করতে হবে-এমন উদ্ভট শর্তও দেন তিনি। আর এই শর্তের মূল উদ্দেশ্য ঠিকাদারদের প্রতিযোগীতা সীমিত করা। কোনো ঠিকাদার সাইট ভিজিট করতে তার অফিসে গেলে তার কাছ থেকে কাজের মোট প্রাক্কলিত মূল্যের (সম্ভাব্য ব্যয়) ওপর অগ্রিম ১০ পার্সেন্ট ঘুষ দাবি করেন তিনি।

সেই টাকা দিলে তার অধীনস্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন শুধুমাত্র ওই ঠিকাদারকে সাইট ভিজিট করেছে বলে ডিক্লারেশন দেওয়ার জন্য। কোনো ঠিকাদার সাইট ভিজিট ডিক্লারেশন না দিয়ে দরপত্র জমা দিলে তাকে করে দেন ‘নন-রেসপন্সিভ’।

অথচ, স্বয়ং গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের নির্দেশ-সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিতে এ ধরণের অযৌক্তিক ও হয়রানিমূলক কাগজপত্র দরপত্রের সাথে চাওয়া যাবে না।এ নিয়ে ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি একটি নোটিশে কোনো অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়ার অনুশীলন পরিহারের জন্য কঠোর নির্দেশ দেন। নিজের আখের ঘোছাতে এসব সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাই করেন না এসএম ময়নুল হক।

পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে উদ্ভট শর্ত : এসএম ময়নুল হকের দপ্তরের অধীনে আহ্বানকৃত খোলা দরপত্র প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারদের কাজের যোগ্যতা হিসেবে ‘শুধুমাত্র গণপূর্তের কাজ’ করা ঠিকাদারদেরই যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেন তিনি। ঠিকাদারের সরকারি অন্য কোনো সংস্থার কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে ওই কাজের সার্টিফিকেট গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে-দেন এমন উদ্ভট শর্তও।

এমনকি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, সিডিএ, কেডিএ, রাজউক’র মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট দাখিল করলেও দরপত্র মূল্যায়নে তা বাতিল করে ওই দরদাতাদের দরপত্র ‘নন-রেসপন্সিভ’ করে দেন তিনি। আর তাকে ‘খুশি’ করলেই হয়ে যায় এর উল্টো।

রূপপুর বালিশকাণ্ডের সেই ঠিকাদারকে দিলেন কার্যাদেশ : বহুল আলোচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসিক ভবনে একটি বালিশ ওঠানোর জন্য খরচ দেখানো হয়েছিল ৭৬০ টাকা, আর কেনায় দেখানো হয়েছিল পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। বৈদ্যুতিক চুলা ভবনে ওঠানোর খরচ দেখানো হয় ছয় হাজার ৬৫০ টাকা। টেলিভিশন ওঠানোর খরচ দেখানো হয় সাত হাজার ৬৩৮ টাকা। দুর্নীতির এমন এলাহি কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ঠিকাদার সাজিন কনস্ট্রাকশনের মালিক শাহাদাত হোসেন।

আর সেই সাজিন কনস্ট্রাকশনকে ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পে সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়া সত্ত্বেও ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেন এসএম ময়নুল হক। সেই কার্যাদেশের মেয়াদ প্রায় ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কাজই শুরু করেনি মেসার্স সাজিন কনস্ট্রাকশন।

আর এই ৩ বছরে সাজিন কনস্ট্রাকশনকে কাজ শুরু করার জন্য একটি তাগাদাপত্রও দেননি এসএম ময়নুল হক। ফলে, ভবনসমূহের বৈদ্যুতিক কাজ এখনও পর্যন্ত শুরুই করা যায়নি। আর এই গাফিলতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। যা আরডিপিপি আকারে একনেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকট উত্থাপন প্রক্রিয়াধীন। তার এই গাফিলতির কারণে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

আর এই ৩ বছরে সাজিন কনস্ট্রাকশনকে কাজ শুরু করার জন্য একটি তাগাদাপত্রও দেননি এসএম ময়নুল হক। ফলে, ভবনসমূহের বৈদ্যুতিক কাজ এখনও পর্যন্ত শুরুই করা যায়নি। আর এই গাফিলতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। যা আরডিপিপি আকারে একনেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকট উত্থাপন প্রক্রিয়াধীন। তার এই গাফিলতির কারণে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

বন্ধুর সাথে মিলে করেন ঠিকাদারি ব্যবসাও : এসএম ময়নুল হকের সাবেক সহকর্মী ও তার বন্ধু মোহাম্মদ সোলাইমান। তার মাধ্যমে ‘শাহনেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ’ এর নামে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপন, ডাক্ট এসি স্থাপনের কাজ দেন তিনি। আবার ওই একই লোকের মাধ্যমে ‘গ্রীন মার্কার’ নামক প্রতিষ্ঠানের নামে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল গ্যাস সিস্টেম স্থাপনের কোটি কোটি টাকার কাজ দেন। আর ওই কাজগুলোতে, টেন্ডার স্পেসিফিকেশন ভঙ্গ করে নিম্নমানের ক্যাবল, সার্কিট ব্রেকার, প্যানেল, এসিসহ অন্যান্য মালামাল ব্যবহার করা হয়েছে।

আর এইসব কাজে বিনিয়োগ রয়েছে এসএম ময়নুল হকেরও। যা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঞ্জন।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯-এর বিধি-১৭-তে বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে সরকারি কার্য ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে অথবা অন্য কোনো চাকরি বা কার্য গ্রহণ করতে পারবেন না।’

পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে রি-টেন্ডার : ঘুষ না দিলে কিংবা নিজের প্রিয় ঠিকাদাররা সর্বনিম্ন দরদাতা না হলে কোনো কারণ ছাড়াই একই প্রাক্কলন দিয়ে তিনি করে দেন রি-টেন্ডার। এমন কয়েকটি দরপত্রের আইডি নং যথাক্রমে- ৮২৫৮৬৭, ৮১৭৭৯৬, ৭৭৯৩৯০, ৭৮৩৪৯৫। এর মধ্যে প্রথম ৩টি দরপত্রে তার পছন্দের ‘চিটাগাং বিল্ডার্স কর্পোরেশন’ সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়ার কারণে ফের দরপত্র আহ্বান করান এসএম ময়নুল হক। পরবর্তীতে ওই ঠিকাদারকে দিয়ে ১০ শতাংশ কম দরে দরপত্র জমা দিতে বলেন তিনি। কিন্তু, সেবারও পূর্বের ঠিকাদার দরপত্র জমা করলে ই-জিপির ম্যাট্রিক্স সিস্টেমের তোয়াক্কা না করেই ‘নন-রেসপন্সিভ’ করে দেন প্রকৌশলী ময়নুল।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, সর্বনিম্ন দরদাতা হয়ে সব কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্ত্বেও চাহিদামতো ঘুষ না দিলে দরদাতা ঠিকাদারদের ‘নন-রেসপন্সিভ’ করে দেন এসএম ময়নুল হক। আর ঘুম না দেওয়ায় অনেক কাজ পায়নি দেশের স্বনামধন্য সব ঠিকাদারেরা। ফলে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন তারা।

প্রাক্কলনে করেন ‘ইচ্ছাকৃত’ ভুল : এসএম ময়নুল হক প্রাক্কলনের গণনায় করেন ইচ্ছাকৃত ভুল। দরপত্রে ১-৩৭টি উপকরণের কথা উল্লেখ থাকলেও অফিসিয়াল কষ্ট হিসেবে ইনপুট করা হয় ৩৬টি উপকরণের যোগফল। কৌশলে একটি উপকরণের টাকা মোট প্রাক্কলিত মূল্য থেকে বাদ দিয়ে দরপত্রে ভুল দর ইনপুট করে প্রকাশ করেন। যাতে তার নির্দিষ্ট ঠিকাদার ছাড়া অন্য ঠিকাদাররা প্রাক্কলিত মূল্য আঁচ করতে কিংবা মেলাতে না পারে।

ভুয়া ভ্রমণ শিডিউলে বিদেশ ‘ঘোরার’ ধান্ধা : সরকারি কাজ দেখিয়ে ভুয়া ভ্রমণ সিডিউল করে করে অফিস ছুটি ব্যাতীত প্রতিসপ্তাহে কর্মস্থল থেকে চলে যান তিনি। কিন্তু ওইদিনের যাতায়াত বিল করে ওই খাত থেকে হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করতে তিনি একদমই ভুল করেন না।

অভিযোগ আছে, লিফট ইন্সপেকশনে গিয়ে ঠিকাদারের টাকায় তিনি ঘুরে এসেছেন ইউরোপের প্রায় সব দেশ। শুধুমাত্র স্পেন যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ঘুরে এসেছেন ফ্রান্স, ইটালী, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ডও।

নবাবজাদার’ মতো অফিসে ফোঁকেন সিগারেট : সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপান আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে এ জন্য। এছাড়া যানবাহন, জনসমাগম স্থল এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসে ধুমপান নিষিদ্ধ। সরকার ধূমপান রোধে আইন প্রণয়ন করলেও সরকারি অফিসে বসেই চলে এসএম ময়নুল হকের আয়েশি ধূমপান। অফিসের নারী কর্মকর্তাসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনেই সিগারেট ফাঁকে পুরে। অফিস ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে রাখেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে এসএম ময়নুল হকের মোবাইলে একাধিক বার মোবাইল করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *