নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্তমানে সারা বিশ্বে আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বিশ্বের ১৯২টি দেশে এখন পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে এই ভাইরাসটি। করোনা সংক্রমণ থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। দেশে এ ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ জন। মারা গেছেন ৩ জন।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সবাইকে বাসায় অবস্থান করার কথা বললেও অনেকেই তা মানছিলেন না। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর খবরের পর নিজেদের অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন ঢাকাবাসী। শুক্রবার থেকে তার প্রভাব পড়েছে নগরীর শপিং মল, বাজার ও রাস্তায়। অনেকেই প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ ঘরে খাবার মজুদ করছেন, আবার কেউ পাড়ি দিয়েছেন গ্রামে।
এদিকে বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের চাপ নেই বললেই চলে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরেও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। নিতান্তই যারা বের হচ্ছেন, তারা জীবিকার তাগিদে। এদিকে যারা রাজধানীতে নিজ উদ্যোগে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন তারা বলছেন, ভুক্তভোগী না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনও কিছু বিশ্বাস করতে চাই না। তাই সরকার আগে থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বললেও সেটি কেউ মাথায় নেয়নি।
রাজধানীর হাতিরপুলের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, কে কী বললো, আমরা তা বিশ্বাস করতে বা মানতে চাই না। যখন করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু হলো, তখন সবার নজরে এলো বিষয়টি। কোনও উপসর্গ দেখা দিলে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই সবাইকে নিজ উদ্যোগে বাসায় থাকা উচিত। কারণ, সরকার তো একা সব করতে পারবে না। আমাদেরও সহায়তা করা দরকার।
মিরপুর ডিওএইচএসের বাসিন্দা তানিয়া আফরোজ বলেন, একজন মারা যাওয়ার পর আমরা বাসা থেকে বের না হওয়ার বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছি। এখন সবাই সতর্ক। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আমরা কেউ বাইরে যাচ্ছি না।
ভাইরাসে একজনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টাকে গভীরভাবে নিতে পারেনি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, অপ্রত্যাশিত যেকোনও ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ সেটা মেনে নিতে পারে না। একটু সময় নেয়। এই বিষয়টিকে ডিনায়াল বলে। এই টাইমটি হলো ডিনায়াল পিরিয়ড। একেক ঘটনায় এই সময় একেক রকম হয়। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও তারা প্রথমে মেনে নিতে পারেনি। একটা গা-ছাড়া ভাব নিয়ে চলেছে। কিন্তু একজনের মৃত্যুর খবরের পরই তারা সতর্ক হয়ে গেছে। এটাই স্বাভাবিক।
মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, শাহবাগ, কাওরান বাজার ও পান্থপথ সিগনাল ঘুরে ও গুগল ম্যাপের তথ্যমতে রাজধানীতে কোথাও কোন জ্যামের খবর পাওয়া যায়নি। রাস্তায় যান চলাচল খুবই সীমিত। কোনও সিগনালে গাড়ির জটলাও দেখা যায়নি।
কারওয়ান বাজার পুলিশ বক্সে কথা হয় এএসআই মোস্তাকিম সরকার বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষ বাসায় অবস্থান করছেন। রাস্তায় পরিবহন না থাকায় তেমন চাপ নেই। চাপ না থাকলেও তো আমরা দায়িত্বে অবহেলা করতে পারি না। তাই পরিবারকে ঘরে রেখে আমরা এখনও রাস্তায় আছি।
রাজধানীর নিউমার্কেট, মিরপুর সড়ক ও বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে দোকানিরা অলস সময় পার করছেন। যথাসময়ে শপিং মলগুলো চালু হলেও ক্রেতা নেই। এদিকে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।