নিজস্ব প্রতিনিধি : ফেনীতে দাবিকৃত ঘুষ না পেয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে ফেনী মডেল থানার এসআই আনোয়ার হোসেন, ফারুক মিয়া ও নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে ৫ মার্চ পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বিচার দাবি করেন বালিগাঁও চরহকদি গ্রামের বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম নামে এক ভুক্তভোগী। এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজি বরাবর অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

অভিযোগে রোকেয়া বেগম উল্লেখ করেন, খুনি নিজাম উদ্দিন হাজারী ও শুসেন চন্দ্র শীলের লেলিয়া দেওয়া যুবলীগ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতনের কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তার ছেলে নজরুল ইসলাম মিশু ফেনীতে আসতে পারেনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিজাম উদ্দিন হাজারী ও শুসেন চন্দ্র শীল গংরা ফেনী থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তার ছেলে নজরুল ইসলাম মিশু বাড়িতে আসে। কিন্তু ফেনীতে নিজাম উদ্দিন হাজারী ও শুসেন চন্দ্র শীলদের দ্বারা সংঘটিত খুনসহ ছাত্র জনতার উপর হামলায় তার ছেলে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসেনা। এরপরেও তার ছেলেকে প্রতিহিংসা মূলক ফেনী থানার এফআইআর নং ৩৯, জি আর ৪১৮/২৪, ধারা ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৫০৬ প্যানেল কোড এর মামলায় ৫১ নং আসামি করা হয়। বিষয়টি জানার পরেও ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় সঠিক তদন্তে চার্জশিট থেকে বাদ যাওয়ার আশায় তাহার ছেলে মিশু ফেনী থেকে পালিয়ে যায়নি।

এমতাবস্থায় ফেনী মডেল থানার এসআই মো: ফারুক মিয়া (বিপি নং ৭৯৯৮০৫৩৯১৩) বিগত ২৩/১০/২০২৪ ইং তারিখে তার ছেলের নাম ঠিকানা যাছাইয়ের জন্য বাড়িতে আসে। আবার একই মামলার তদন্তের জন্য ১৩/১/২০২৫ ইং তারিখে এসআই মো: নাজিম উদ্দিন (বিপি নং ৭৭৯৮০৪৩৩০৮) বাড়িতে আসে। এসময় এসআই ফারুক মিয়া ও নাজিম উদ্দীন মামলার চার্জশিট থেকে তাহার ছেলেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করে। তখন দুই এসআইকে থানায় গিয়ে কিছু টাকা দিয়ে আসা হয়। কিন্তু পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী ১৬/২/২০২৫ তারিখ ১৮.৫ ঘটিকার সময় বারাহিপুর খাজুরিয়া রাস্তার মাথা থেকে তাহার ছেলে নজরুল ইসলাম মিশুকে গ্রেফতার করে এসআই নাজিম উদ্দীন। এসময় ছেলের পকেটে থাকা ৪৩,০০০ টাকা নিয়ে যায় এসআই নাজিম উদ্দীন। গ্রেফতারের পরেরদিন সকালে রোকেয়া বেগম থানায় গিয়ে ছেলের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে ডেকে নিয়ে এসআই নাজিম উদ্দিন ও এসআই আনোয়ার হোসেন (বিপি নং ৮৪০৩০৯০২৮২) ওসি-এসপির নাম ভাঙিয়ে বলে যে, তাদেরকে ৫ লাখ টাকা দুপুরের মধ্যে দিতে হবে, না হয় মহিপালে সংগঠিত গণহত্যার সব মামলায় তাহার ছেলেকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু তার ছেলে মিশুকে চালানের আগ মুহুর্তে সোর্সের মাধ্যমে এসআই আনোয়ার হোসেন রোকেয়া বেগমের কাছ থেকে থেকে নগদে ১০,০০০ টাকা ঘুষ নিয়েও তাদের চাহিদামতো মোটা অংকের ঘুষ না দিতে পারায় তাহার ছেলেকে এজাহার নামীয় বিস্ফোরক মামলা ছাড়াও শহীদ শ্রাবণ ও সবুজ হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। অভিযোগের তদন্ত করা হলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও স্বাক্ষী দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে আমাদের এলাকায় দায়িত্ব পালনকালিন এসআই আনোয়ার হোসেন গণহত্যা মামলার খুনি শুসেন চন্দ্র শীল, জিয়া উদ্দিন বাবলু ও শেখ আব্দুর শুক্কুর মানিকের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে নিরিহ মানুষদের মামলার ভয় দেখিয়ে দাবিকৃত ঘুষ না পেলে হয়রানি করতো।
এ ব্যাপারে ফেনীর পুলিশ সুপার মো হাবিবুর রহমান জানান,বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।