নিজস্ব প্রতিবেদক : উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হলো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৬তম আসর। আজ বিকেলে (২৫ এপ্রিল, ২০২৫) চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত এই কুস্তি প্রতিযোগিতা। এবারের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাঘা শরীফ (শরীফ বলী) এবং রানার্স-আপ হয়েছেন রাশেদ বলী। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। শুরুর ধারাবাহিকতা মেনে বলী খেলাকে ঘিরে চলছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা।

বিকাল ৪টায় ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে বলী খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মোট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমশিনার হাসিব আজিজ। এ সময় বলীখেলা আয়োজক কমিটি ২০২৫-এর সদস্য সচিব এবং আবদুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল, গ্রামীণফোনের চট্টগ্রাম বিজনেস সার্কেলের সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী, চট্টগ্রাম সেন্ট্রালের রিজিয়নাল হেড মোরশেদ আহমেদ, চট্টগ্রাম বিজনেস সার্কেলের মার্কেট কমিউনিকেশন হেড মো. আব্দুল্লাহ আল নূরসহ বলি খেলার আয়োজক কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এবারের বলী খেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অংশ নেন ১৪৭ জন বলী। খেলার নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিযোগীরা একে অপরের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সময়ের শক্তিমত্তা ও কৌশলের লড়াইয়ে অংশ নেন। কয়েক ধাপের খেলার পর হয় মূল চ্যাম্পিয়ন পর্ব। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

বলী খেলার পাশাপাশি বৈশাখী মেলার আবেশেও প্রাণচাঞ্চল্য ছিলো পুরো লালদীঘি ময়দান ও আশেপাশের এলাকায়। শুরুর ধারাবাহিকতা মেনে প্রতি বছর বলী খেলার আগের দিন, খেলার দিন ও পরের দিন তথা তিন দিনব্যাপী চলে এই মেলা। হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী খাবার, খেলনা ও বিভিন্ন পণ্যের সমারোহে এবারও জমজমাট হয়ে উঠেছে মেলার পরিবেশ।
বলী খেলা আয়োজক কমিটি ২০২৫-এর সদস্য সচিব এবং আবদুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, “এই বলী খেলা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গৌরবময় প্রতিচ্ছবি। প্রতি বছরের মতো এবারও বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা সু্ষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও মেলা কমিটি নানা উদ্যোগ নেয়। সবার সহযোগিতায় আমরা ঐহিত্যবাহী এই আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক গ্রামীণফোনসহ এবারের আয়োজনের সহযোগী সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।“
গ্রামীণফোনের চট্টগ্রাম বিজনেস সার্কেলের সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী বলেন, “জব্বারের বলী খেলার মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ুও জনপ্রিয় আয়োজনের অংশ হতে পেরে গ্রামীণফোন গর্বিত। শতবর্ষ ছাড়িয়ে আজও এই বলী খেলা আমাদের গর্বের ঐতিহ্য। ফলে যুগযুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন হয়ে উঠেছে মানুষের ভালোবাসা ও ঐক্যের উৎসব। আমরা বিশ্বাস করি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কেবলই অতীতের গর্ব নয়, বরং ভবিষ্যতে পথ চলার এক বিরাট শক্তি। দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে ধারণ এবং সমর্থনের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়েও সংযোগ স্থাপন করতে চাই আমরা। গ্রামীণফোনের স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্মান ও উৎসাহ দেওয়ার এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।“
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের শারীরিকভাবে তৈরি করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে এই বলী খেলার প্রচলন হয়েছিল। চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে যাওয়া এ আয়োজনটি শুরু হয়েছিল শহরের আগেকার বদরপাতি এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগরের হাত ধরে। কালক্রমে তারই নামানুসারে এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘জব্বারের বলী খেলা’ নামে।