নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৫ আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর অন্তবর্তীনকালীন সরকারের আমলে ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সমার্থক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। অন্তবর্তীনকালীন সরকার সকল সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক কে স্পষ্টভাবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা জারি করেছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক রাজধানী সহ সারাদেশের সকল সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গোষ ও ব্যেক্তির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সারাদেশে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা ও করেছে। রাজউকের সাবেক ও বর্তমান অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি’র অভিযোগে দুদকের তদন্ত তদন্ত ও চলছে। এর মধ্যে ই রাজউকের অথরাইজড অফিসার , সহকারী অথরাইজড অফিসার, ইমারত পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দূর্নীতি সকল সীমা লঙ্ঘন করার অভিযোগ থাকা সত্বেও তারা এখনো বহালতবিয়ত থেকে বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে।

রাজউকের একটি সাধারণ ও সচেতন মহলের দাবি, রাজউকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘুষ, দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার আলোচনায় আসছে সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি। সমালোচিত হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বমহলে। নিয়মিত সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। টিআইবি মনে করে “রাজউক ও দূর্নীতি” সমার্থক শব্দ। প্রতিনিয়ত দেশের দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারিদের ঘুষ, দূর্নীতি ও অনিয়মের খবর।

অথরাইজড অফিসার , সহকারী অথরাইজড অফিসার, ইমারত পরিদর্শকদের ঘুষ, দূর্নীতি সকল সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছে। এই সকল অফিসার, দালাল, ভবন মালিক ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগসাযোসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শত-শত ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। ভবন নির্ম্মানের আবেদন থেকে শুরু করে ভবন নির্ম্মাণ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত প্রতি পদে পদে অফিসারদের খুশি করতে হয়।
রাজউকের চাকরীটি যেন কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে আলাদিনের প্রদীপ রূপে ধরা দিয়েছে। রাজউক ভবনে গুঞ্জন আছে, কর্মকর্তাদের প্রায় প্রত্যেকের মাসিক আয় সরকারী বেতনের ২৫ গুন থেকে ৫০ গুন। তারা গড়ে তুলছেন বিত্ত-বৈভবের রাজমহল। আলিসান বাড়ি, কোটি টাকার ফ্লাট, দামী গাড়ী আর বিলাসবহূল জীবনযাত্রা তাদেরকে পৌছে দিয়েছে অনন্য এক উচ্চতায়। সরকারী চাকরীজীবী হয়েও তাদের বিলাসিতা হারিয়ে দিচ্ছে বড় বড় শিল্পপতিষ্ঠানের মালিক শিল্পপতিদের। অল্প কয়েকজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার জন্য বেশির ভাগ দূর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা দুদকের চোখ ফাকি দিতে পারছে।
কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ বলয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। দালালচক্র কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাযোস করে ভবনের নকশা ও ছাড়পত্রের অনুমোদন করিয়ে দিয়ে ভবন মালিকের কাছ থেকে বাগিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। তারপর ভবন মালিক কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরনায় ৫ তলা অনুমোদিত ভবনে ৬ তলা, ৭ তলা আবার ৬ তলা অনুমোদিত ভবনে ৭ তলা ৮ তলা নির্ম্মাণ করে ফেলে, ভবনের সাইডে জায়গা রাখে না, পার্কিং রাখে না, আবাসিকের পাশাপাশি কয়েক তলা বানিজ্যিক করে ফেলে। নিচের ২ তলায় রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়লেও উপরের দিকে রাস্তার উপরে বিল্ডিং নিয়ে আসে। ভবন মালিকদের এই সকল অনিয়মে ইমারত পরিদর্শকদের খুশির সীমা থাকে না। নিয়ম বহির্ভূত ভবন নির্ম্মানের জন্য ভবন মালিককে দেওয়া হয় নোটিশ। ডাকা হয় অফিসে। দেখানো হয় ভবন ভাঙ্গা ও মামলার ভয়ভীতি। এতেই ভবন মালিক আবারো কুপোকাত হয়ে যায়। ব্যাস হয়ে গেলো কর্মকর্তাদের জন্য লাখ টাকার ব্যবস্থা। না থাকুক তার বাড়ির কারপাকিং, বৃদ্ধি করুক ভবনের উচ্চতা, বাড়িয়ে দিক রাস্তার দিকে তার বিল্ডিং, বানিয়ে ফেলুক আবাসিক ভবনের অর্ধেককে বানিজ্যিক , তাতে ইমারত পরিদর্শকসহ কর্মকর্তাদের কি আসে যায়? তারা অফিসার, তাদের প্রয়োজন টাকা। টাকা পেলেই সব ওকে। যা দু চারটা ভবন বা দেওয়াল ভাঙ্গা হয় তার বেশির ভাগই ভবন মালিকদের সাথে টাকা পয়সা নিয়ে বনিবনা না হওয়ার কারনে।
রাজউক কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম, দূর্নীতি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করা হলেও এইসব অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধের জন্য খুব একটা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। কর্মকর্তাদের এই অসধুতার জন্য ঝুকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ছে জীবনের উপর ঝুকি, ভবনের কারপাকিং এর অভাবে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘুষ গ্রহণের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজউকের কর্মকর্তার চাকরী চলে গেছে, তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এমন সংবাদ পত্রিকায় খুব একটা দেখা যায় না। এ ব্যাপরে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষন করা যাচ্ছে।