করোনার মারাত্মক সময়

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ

 

এম এ স্বপন : বিশ্বব্যাপী মানবজাতিকে বড় এক সংকটের মুখোমুখি করে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বিশ্বের সব দেশেই প্রাণঘাতী চেহারা নিয়ে দেখা দিয়েছে কভিড-১৯। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ চীনের উহানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর সময় পেরিয়েছে তিন মাসেরও বেশি। এ সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পৌনে এক লাখের কাছাকাছি। করোনা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত দেশগুলো নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, এসব পদক্ষেপের কার্যকারিতা ও মহামারীর ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি অনুধাবনের ক্ষেত্রে চলতি মাসটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এদিকে চলতি মাসে দেশে আরও ব্যাপক আকারে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার আভাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকালে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ কথা জানান। গণভবন থেকে এই ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাসমূহের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, দুর্যোগে চিকিৎসা নিয়ে যারা শর্ত দিয়েছেন তাদের কাজ করার দরকার নাই। করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি সেবাদানকারীদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।
তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবযুক্ত দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা ছিল ২১০। এসব দেশ ও অঞ্চলে গতকাল পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণ শনাক্ত করা গেছে মোট ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৮ জনের। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭০ হাজার ৫৬০ জনের।
এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৯০৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৯ হাজার ৬২৪ জন। দেশটির জন্য চলতি মাস, বিশেষ করে সামনের দুই সপ্তাহ বেশ গুরুত্ববহ হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা।
আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আসন্ন দিনগুলো নিয়ে এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্যের সারসংক্ষেপ একটিই, সামনের দিনগুলোয় আরো অনেক মানুষের মৃত্যু হবে।
অন্যদিকে মার্কিন সার্জন জেনারেল ভাইস অ্যাডমিরাল জেরোম অ্যাডামস আসন্ন দিনগুলোকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পার্ল হারবার আক্রমণের সময় ও তার পরের দিনগুলোর মতোই ভয়াবহ বলে বর্ণনা করছেন। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, সামনের সপ্তাহগুলো হতে যাচ্ছে অধিকাংশ মার্কিন নাগরিকের জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও দুঃখজনক দিন।
যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে, এ কথা বলা ভুল হবে বলে মনে করছেন দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস। তিনি জানান, এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে তার দেশ।
এছাড়া দেশটির অর্থনীতির জন্যও এপ্রিলকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশটির বিনিয়োগকারীদের জন্য এপ্রিল হলো গুরুত্বপূর্ণ এক পরীক্ষার সময়। এ প্রসঙ্গে গোল্ডম্যান স্যাকসের ম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজিস্ট জাখ প্যান্ডল গতকাল এক নোটে জানান, সামনের সপ্তাহগুলো গণস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি এ দুয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে বিভিন্ন ব্যবসার পতনসহ আরো বেশকিছু চ্যালেঞ্জ নতুন করে সামনে আসতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
কভিড-১৯-এ বিপর্যস্ত আরেক দেশ ইতালিতে গতকাল নতুন করে মৃত্যুর সংখ্যা নেমে এসেছে দুই সপ্তাহে সর্বনি¤েœ, যদিও সংখ্যার হিসাবে তা এখনো অনেক বেশি। দেশটির সিভিল প্রটেকশন সার্ভিস জানায়, গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৫২৫ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮৮৭। আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৪৮।
অন্যদিকে এ সংখ্যার দিক থেকে এরই মধ্যে ইতালিকে ছাড়িয়ে গেছে স্পেন। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৬ জন। গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬৭৪ জনের।
সংখ্যায় এখনো বেশি হলেও ইউরোপের দেশগুলোয় মৃতের সংখ্যায় ও প্রাদুর্ভাব দুই-ই এখন আগের তুলনায় কমছে। বর্তমান অবস্থায় দেশগুলোর সরকার লকডাউন থেকে বের হয়ে আসার কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত। এক্ষেত্রেও চলতি মাসের পুরোটাই লেগে যেতে পারে এ কৌশল নির্ধারণে।
রোম এরই মধ্যে বেশ কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চলেছে দেশটির বাসিন্দাদের ওপর। গত ১২ মার্চ থেকেই লকডাউনে রয়েছে দেশটি। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই লকডাউন শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়ে আসছে দেশটি। এ বিষয়ে দেশটির আইএসএস ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর সিলভিও ব্রুসাফেরো বলেন, আমাদের এখন দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা হ্রাস অব্যাহত থাকতে হবে এবং এ অর্জনের জন্য আমাদের টানা কয়েক দিন প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে।
সিলভিও ব্রুসাফেরার এ বক্তব্যের অর্থ হলো সামনের কয়েক দিন পর্যবেক্ষণের পরই আসলে করোনা নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে দেশটি। একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন স্পেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালভাদোর ইলাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরাও। সেক্ষেত্রেও বলা চলে, গোটা ইউরোপ মহাদেশের জন্যই করোনা মোকাবেলায় চলতি মাসটি বেশ গুরুত্ববহ সময় হতে যাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারতসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এখন নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি এরই মধ্যে পুরোপুরি লকডাউনে চলে গেলেও আংশিক লকডাউনে রয়েছে অন্যগুলো। জাপানেও আজই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। করোনা মোকাবেলায় এসব সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কার্যকারিতা ও পরিস্থিতির গতিবিধি অনুধাবনের জন্য চলতি মাসটি বেশ গুরুত্ববহ।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *