লকডাউন না মানলে পরিস্থিতি ভয়ংকর
হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুশিয়ারি
বিশেষ প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও ত্যাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যার পর বাসা থেকে বের হলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও নগরীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে যেন মানুষের হাট বসেছে। বিভিন্ন স্থান বাঁশ বা কাঠ দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হলেও ভেতরে মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। কোথাও পুরোপুরিভাবে মানা হচ্ছে না লকডাউন।
এ দিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে লকডাউন, কারফিউ এর মতো কড়াকড়ি ব্যবস্থা শিথিল করার বিষয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। শুক্রবার জেনেভায় করোনা সংক্রান্ত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম ঘেব্রেইয়েসুস এমন সতর্ক করেন। ঘেব্রেইয়েসুস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশ্বের দেশগুলো যদি সামাজিক দূরত্বের কড়াকড়ি খুব তাড়াতাড়ি তুলে নেয়, তাহলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তার ঘটতে পারে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়লেও বিধিনিষেধ শিথিল করার ক্ষেত্রে দেশগুলোকে সতর্ক হতে হবে। খুব দ্রুত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়া হলে করোনাভাইরাস ভয়ঙ্করভাবে ফিরে আসতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, মানুষের জীবনযাপনের ওপর থেকে কড়াকড়ি তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে দেশগুলোকে পর্যায়ক্রমে আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল নিতে হবে।
তিনি জানান, অন্য সবার মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কড়াকড়ির অবসান চায়। কিন্তু একই সময়ে এটাও মনে রাখতে হবে, খুব তাড়াতাড়ি এসব বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলে ভাইরাসের আবার ভয়াবহ বিস্তার দেখা দেবে। তখন হয়তো এতোটাই ভয়াবহ হবে যে, আর সামলানো যাবে না। টেড্রোস সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অন্য অনেক দেশে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গিয়েছে করোনাভাইরাস।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। শনির আখড়া এলাকায় দেখা গেছে, এলাকার প্রতিটি সড়কেই যেন বিভিন্ন পণ্যের হাট বসেছে। মানুষের ভিড়ে সরু সড়কগুলোতে হাঁটাও যাচ্ছে না। কেউ কাঁচাবাজার করতে বের হয়েছেন, আবার কেউ কেউ বের হয়েছেন বিনা প্রয়োজনে। তবে সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখলেই মুহূর্তে পালিয়ে যাচ্ছেন সবাই।
আরাফাত হোসেন নামে এক বৃদ্ধ বলেন, বাসায় কাঁচাবাজার নেই। তাই বাধ্য হয়েই বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় যে হারে মানুষ দেখা যাচ্ছে তাতে ভয় করছে। কার মাধ্যমে কীভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। কোনও প্রকার প্রয়োজন ছাড়াই অধিকাংশ মানুষ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
একই চিত্র দেখা গেছে নগরীর কাপ্তানবাজার এলাকায়। সেখানে সড়কের প্রবেশপথে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া। কিন্তু ভেতরে অযথা ঘোরাঘুরি করছে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদের অধিকাংশই বিনা প্রয়োজনে ঘোরাফেরা করছেন।
সেখানকার বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, আসলে মানুষের মধ্যে কোনও সচেতনতা নেই। কেউ কোনও উপদেশ মানছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ঘরে থাকার অনুরোধ করা হলেও মানুষ একে অনেকটা উৎসবের মতো মনে করছে। বাসা ছেড়ে সবাই গলিতে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।
এদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন সাধারণ মানুষের মাঝে সুলভ মূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির গাড়িতে পণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। তবে তাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি। একে অপরের সঙ্গে গাদাগাদি করে দাঁড়াতে দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল টিম এলে পরিবেশ কিছুটা সুন্দর হতে দেখা গেছে।
গতকাল দুপুরে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে টিসিবির পণ্যের গাড়ির সামনে দীর্ঘ লাইন। কিন্তু কেউই সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখছে না। কিন্তু কে কার আগে পণ্য নেবে সেজন্য সবাই দিশেহারা হয়ে পড়ে। একই চিত্র দেখা গেছে ইত্তেফাক মোড় ও ফুলবাড়িয়া এলাকায়।