খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক,(খাগড়াছড়ি) : খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার আলোচিত মাদরাসাছাত্র মো. সোহেল (১৪) অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মংসানু মারমাসহ ৭ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে যৌথবাহিনী। সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে পরিচালিত একাধিক অভিযানে এই সাফল্য আসে।

গত ৪ জুলাই রাতে মানিকছড়ির ছদুরখীল এলাকায় নিজ বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় ঘোরখানা শাহানশাহ হক ভান্ডারী সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্র সোহেল। সে ওই এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে। অপহরণের পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে।

পরবর্তীতে সোহেলের পরিবার প্রতিবেশী কয়েকজনকে সন্দেহ করে ১১ জুলাই থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ কসমকার্বারি পাড়ার সম্বু কুমার ত্রিপুরা (৩৬), গোরখানা এলাকার মো. মাঈন উদ্দিন (২১) ও মো. ইয়াছিন মিয়া (২৮) কে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপহরণের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও সোহেলের অবস্থান জানাতে পারেনি।

গত ১৬ জুলাই উপজেলার বুদংপাড়ার গহীন অরণ্যের একটি ঝিরি থেকে যৌথবাহিনী সোহেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। তার হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় মরদেহটি পাওয়া যায়।

এরপর তদন্তে আরও অগ্রগতি আসে। ১৯ জুলাই শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর একটি সফল অভিযানে উপজেলার গহীন অরণ্য থেকে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী মংসানু মারমা (৩৫) এবং আরেক অভিযানে বাবু মারমাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মংসানু সোহেল অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে এবং বিস্তারিত বর্ণনা দেয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মংসানু মারমা আগে ইউপিডিএফ (মূল) দলের পোস্ট কমান্ডার ছিলেন এবং ২০২১ সালে অস্ত্রসহ আটক হয়ে ২৩ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। এরপর ফের বাটনাতলীসহ আশপাশের এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে জনপদে ত্রাস সৃষ্টি করে।
শনিবার ভোরে সিন্দুকছড়ি সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গুলিবিনিময়ের সময় পাল্টা গুলিতে এক সন্ত্রাসী আহত অবস্থায় জঙ্গলে পালিয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে একটি দেশীয় পিস্তল (এলজি), তিন রাউন্ড কার্তুজ, চাঁদা আদায়ের রশিদ এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করে।
মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল জানান, “মাদরাসাছাত্র সোহেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এজাহারভুক্ত মূল পরিকল্পনাকারী মংসানু মারমাসহ ৭ জনকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।”
মংসানু মারমার আটকের খবরে স্থানীয় জনগণের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে।