নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না সরকারের প্রতি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার বিপরীতে বিগত এক বছরে আমরা দেখলাম রাষ্ট্র সংস্কারের নামে কমিশনের পর কমিশন আর প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি সাথে বিতর্কিত কর্ম-কাণ্ড এমনকি যে শব্দের সাথে আমরা পরিচিতই ছিলাম না পেলাম সেই মব জাস্টিস।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরর্বর্তী আওয়ামীলীগ সরকারের চালানো গণহত্যার তদন্ত করে বিচার এবং আহতদের চিকিৎসাসহ নিহতদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্রুত পুনর্বাসন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে সহনশীল, গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে সুষ্ঠ, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখাই ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা। কিন্তু এ সরকারের কর্ম-কান্ড ছাত্র-জনতার আকাঙ্খার বিপরীত হওয়াই আমরা সকলেই হতাশ।
গতকাল শুক্রবার ২২শে আগস্ট, বাংলাদেশ শ্রমিক মুক্তিজোটের আয়োজনে শ্রমিক মুক্তিজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মোঃ রাশেদুল ইসলাম খোকনের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর পূর্তিতে প্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান এ মন্তব্য করেন।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও গণমানুষের রায় উপেক্ষা করে মানবিক কড়িডোর দেওয়ার নৈতিক সিদ্ধান্ত, মানবাধিকার কমিশনের অফিস অনুমোদন দেওয়া ও আগামী ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে। যা এই সরকারকে রাজনৈতিক দল ও জনগণের মুখোমুখি করেছে। যেখানে গণমানুষের চাওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের ভুমিতে ফেরাতে ভুমিকা রাখা; অথচ তা না করে এই সরকারের আমলে আমরা দেখলাম আরো ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করল। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায় রোহিঙ্গারা এখন শুধু চট্টগ্রাম বিভাগে নয় পঞ্চগড় থেকেও এনআইডির আবেদন করছে যা দেশের জন্য চরম ভিতিকর।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে ছাত্র-জনতার রক্তের উপর আপনারা দাড়িয়ে আছেন তাদের এখন পর্যন্ত যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। চিকিৎসার জন্য আহতদের রাস্তায় দাড়াতে হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা দিনকে দিন অবনতি হচ্ছে। মব জাস্টিস বাড়ছে। আপনারা এগুলোর দিকে দৃষ্টি দেন। আগে নিজের দেশ বাঁচান, তা না হলে জনগন আপনাদেরও বিগত প্রতিত সরকারের মত অবস্থা করবে।
আমরা দেখছি দেশাত্ববোধের সদিচ্ছা, সততাটুকু শেষপর্যন্ত বারবার বিতর্কিত হচ্ছে- স্বচ্ছ ভাবমূর্তি হচ্ছে কালিমালিপ্ত; বিচারপতি সায়েম থেকে ইয়াজউদ্দীন, ফখরুদ্দীন বা জেনারেল মঈন-উ-আহমেদ পর্যন্ত একই ট্র্যাজেডির বিভিন্ন প্রকাশ। কারণ রাজনৈতিক সংকটের সমাধান রাজনৈতিক পথ ধরেই হতে হয়। আর তা না হলে সে ব্যর্থতার দায়ভার সমস্ত দেশকেই বইতে হয়। কিন্তু রাজনীতি নিজেই যখন রাজনীতিহীন হয়ে ওঠে তখন দেশটা মগের মুল্লুক হয়ে পড়ে। বর্তমানে আমরা সেটাই দেখছি।
তাই তিনি বলেন ছাত্র-জনতার রক্তদানে কেনা এ বিজয় জনগণেরই হতে হবে। স্বার্থান্বেষী মহল যেন কোন ভাবেই একে নিয়ে আর খেলতে না পারে। যে ক্ষমতা মানুষকে দানব করে তোলে সে ক্ষমতা আমরা আর চাই না। কিন্তু এখনও আমরা রাজনৈতিক ‘স্থিতিশীলতা’র ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক যুগের সেই পেটোয়া আর বিশেষ বাহিনী নির্ভর হয়েই হাঁটছি।
অথচ বহুদলীয় বা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অগ্রগামী বা উত্তরিত শাসন ব্যবস্থা, যার অনিবার্য শর্ত বা ভিত্তি হলো- ‘পারস্পরিক আস্থা, ধৈর্য ও পরমতসহিষ্ণুতা। আর জাতীয় সংহতি বা জাতীয় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা না হলে গণতন্ত্রের ভিত্তি তথা ‘পরমতসহিষ্ণুতা, ধৈর্য ও আস্থা আসতেই পারে না। অর্থাৎ পারস্পরিক আস্থা, ধৈর্য ও পরমতসহিষ্ণুতার পরিবর্তে পরস্পরকে দায়ী-অবিশ্বাস, বিভক্তি-বিভাজনে চরম নৈরাজ্য উঠে আসে আর প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এই বিভাজনগত ক্ষতকে আরও উস্কে দেয়- মাছি হয়ে ওড়াওড়ি করে; পরিস্থিতিগত কারণে সেটাই ফ্যাক্টর হয়। যতোই ক্ষুদ্র হোক, জনসমক্ষে দুর্গন্ধ শক্তিশালীই হয়- প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সর্বদাই- ‘লিটল বাট ডার্টি পাওয়ার!
সরকারের এক বছর পূর্তিতে বহু নাটকীয়তার পরে হলেও নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান বলেন ব্যাপক তারুণ্যের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হয়ে উঠবে উৎসব মুখর ও দেশ পুনর্গঠনই হয়ে উঠবে সকল দলের নির্বাচনী ইশতেহার। আমরা প্রত্যাশা করছি সরকার সুষ্ঠ, অংশগ্রহণমুলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনগণদ্বারা নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিবেন।
শ্রমিক মুক্তিজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব এস এম ইমরান আহসানের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে মুক্তিজোটের সাধারণ সম্পাকদ মোঃ শাহজামাল আমিরুল, সম্মানিত অতিথি হিসেবে শ্রমিক মুক্তিজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মোঃ ইমন বারিক, সৈয়দ নামর আলী শাহ ও যুব মুক্তিজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মোঃ আব্দুাল আওয়ালসহ আলোচনা করেন মুক্তিজোটের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাহেল আহম্মেদ সোহেল, শ্রমিক মুক্তিজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এড. মোহ্ম্মাদ ইউসুফ, মোঃ আওলাদ হোসেন, মোঃ শাহীনুর রহমান, আবু হাসান প্রধান, মোঃ মেহেদী হাসান, মুক্তিজোটের হবিগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ আলমগীর হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য ইঞ্জি. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানসহ মোঃ মাসুদ রানা রুবেল ও মোঃ আনিসুর রহমান এছাড়াও বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।