নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ সোমবার ২৫ আগস্ট, বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিটের সময় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকায় “National Conference on ADR: Role of District Legal Aid Committees (DLACs) in Implementing New Legislations”-শীর্ষক একটি জাতীয় কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।

United Nations Development programme (UNDP) & National Legal Aid Services Organization (NLASO) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কনফারেন্সটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ন্যায়বিচারকে জনগণকেন্দ্রিক করতে হলে আইনগত সহায়তা ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (ADR) বিচারব্যবস্থার মূল কেন্দ্রে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় ধারণা করা হয়েছিল যে প্রধান বিচারপতির মূল দায়িত্ব হবে আইনের সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা প্রদান ও প্রক্রিয়াগত জটিলতায় মনোযোগী হওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন ।

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় যে প্রবল পরিবর্তন নিয়ে আসে সে পরিবর্তন আমাদের ন্যায়বিচার প্রদানের অগ্রাধিকার ও সেটির পদ্ধতি নিয়ে নতুুন করে ভাবতে বাধ্য করে। শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল যে এ রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত এক বছরে আইনগত সহায়তা খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা হয়েছে মর্মে মন্তব্য করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের আগস্টের উত্তাল সময়ে বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে প্রথম সংস্কার পদক্ষেপ এসেছিল আইনগত সহায়তা (Legal Aid) খাতে।
কেবল অর্থনৈতিক সক্ষমতার ভিত্তিতে নয়, বরং বাস্তব পরিস্থিতিগত অক্ষমতার কারণেও যেন কেউ আইনজীবী ছাড়া আদালতে হাজির না হন তা নিশ্চিত করতে প্রচলিত “অর্থনৈতিক সামর্থ পরীক্ষা” Means Test এর পাশাপাশি চালু করা হয়েছে “সক্ষমতা পরীক্ষা” (Capacity Test)।
তিনি বলেন, আইনগত সহায়তা বিচারপ্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি পুলিশের তদন্ত, প্রসিকিউশন সার্ভিস, সরকারি কৌঁসুলি এবং আদালতের সক্ষমতার মতো অন্যান্য উপাদানের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তিনি উল্লেখ করেন, পেশাদার প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠনের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
জেলা আইনগত সহায়তা কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করণ, ADR কার্যক্রম সম্প্রসারণ, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেবা নিশ্চিত করণ এবং বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য মধ্যস্থতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ উদ্যোগে JICA ও GIZ এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ছাত্র আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে যে বৈধতা আসে আস্থা থেকে। আর বিচার বিভাগ আস্থা অর্জন করতে পারবে কেবল তখনই, যখন এটি আরো স্বাধীন, দক্ষ ও মানবিক হবে। তিনি বলেন, এখানে স্বাধীনতা মানে প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা মানে মামলা জট কমাতে আধুনিক প্রক্রিয়া ও ADR-এর ব্যবহার এবং মানবিকতা মানে রূপান্তরমূলক আইনগত সহায়তা।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, আইনজীবী সমাজ ও নাগরিক সমাজ একত্রে কাজ করলে একটি জনগণকেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ জাতীয় সম্মেলন হবে কোনো সমাপ্তি নয় বরং এক নতুন আন্দোলনের সূচনা, যেখানে ADR ও আইনগত সহায়তা বিচারব্যবস্থার কেন্দ্রে স্থান পাবে এবং সংবিধানের অঙ্গীকার “সব নাগরিক আইনের সমান সুরক্ষা পাবেন” কথাটি বাস্তবে রূপ নিবে।
কনফারেন্সটিতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (NLASO) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আজাদ সুবহানী (জেলা জাজ)। কনফারেন্সটিতে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব ড. আসিফ নজরুল।
উক্ত কনফারেন্সটিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, United Nations Development programme (UNDP) এর রেসিডেন্সিয়াল রিপ্রেজেনটেটিভ স্টিফান লিলার, বিজ্ঞ এটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান, আইন ও বিচারবিভাগীয় সচিব শেখ আবু তাহের, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা।
এছাড়া, কনফারেন্সটিতে ৬৪ জন জেলা জজ যারা একইসাথে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান, ৬৪ জন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৮ জন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ০৮ জন মহানগর দায়রা জজ, ৬৪টি জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য, আইন মন্ত্রণালয়, NLASO, ইউএনডিপি এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিবৃন্দসহ প্রায় ৩০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।