ইলিয়াস হোসাইন : ৫ অগাস্টের পর থেকে বিএনপির রাজনীতি সম্পূর্ণ নির্বাচনকেন্দ্রিক। তাদের একমাত্র লক্ষ্য আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে নেওয়া। যে কোনো মূল্যে, যে কোনো কৌশলে লীগের ভোটারদের নিজেদের দিকে টেনে আনতে পারলেই বিএনপির জয় শুধু নিশ্চিত নয়, বরং অবধারিত।

তার জন্য যে কৌশল তারা অবলম্বন করেছে তা শেখ হাসিনার দেওয়া পরীক্ষিত ফর্মুলা—বিরোধী জনমত আর দল দমনে ১৯৭১-এর চেতনা। এই ৭১ এর চেতনার মূল বিষ দেশকে দুই শিবিরে ঠেলে দেয়। এই চেতনায় একদল হচ্ছে দেশপ্রেমিক কিন্তু ধর্মবিমুখ। আর আরেক দলে আছে দেশদ্রোহী কিন্তু ধর্মপ্রাণ মানুষ। হাসিনার আমলে আওয়ামি -শাহাবাগীরা নিজেদের মনে করত একমাত্র দেশপ্রেমিক হিসাবে, আর বাকি সবাই দেশদ্রোহী বা জামায়াত-শিবির। এই ধারায়, আপনি শেখমুজিব পূজারি না হলে আপনি জামায়াত-শিবির, আপনি রবীন্দ্র বিমুখ হলে আপনি জামায়াত শিবির, আপনি ৩২ প্রেমী নাহলে আপনি জামায়াত-শিবির।
হাসিনা পালিয়েছে, কিন্তু রেখে গেছে তার খেলার ফর্মুলা। ফর্মুলাটি দেশ চালানোর পক্ষে প্রয়োগ না করলেও, আওয়ামী ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য গ্রহণ করেছে বিএনপি।

বিএনপি খেলায় মাঠে নামিয়েছে কয়েকটি গ্রুপ। প্রথম গ্রুপে আছে বিএনপি এর নীতি নির্ধারকেরা , যারা তারেক জিয়ার বাম আর ডান হাত । তাঁকে শলা পরামর্শ দেয় । এরই বিএনপির এজেন্ডা সেট করে।

আরেকটা গ্রুপে আছে হোয়াটস এপের ছাপড়িরা । যাদের কাজ হচ্ছে যারাই বিএনপির সমালোচনা করবে তাদের জামাতি বলা। এরা কনস্ট্রাকটিভ সমালোচনাও সহ্য করে না। আসল সমালোচনা তো দূর কি বাত। এই কাজ করে তারা প্রচুর বিএনপির জেনুইন ইন্টালেকচুয়াল সমর্থকদের এলিয়েনেট করেছে। যাদের প্রচুর ক্ষমতা ছিলো বিএনপির জন্য ভালো কিছু করার, কিন্তু তাদের দূরে ঠেলে দিয়েছে। বিএনপি র পাশে রেখেছে মিডিওকার ছাপড়িদের । যা দলের জন্য ক্ষতিকর।
তাদের আছে বট বাহিনী, যাদের কাজ হচ্ছে সকাল বিকাল এনটাই জামাত-শিবির পোস্ট দেয়া। সব কিছুতে শিবিরের ভূত দেখা। এসব করে এদের কিছু এক্টিভিস্ট এখন পচে গেছে। যাদের গ্রহণযোগ্যতা কমেছে । এদের সব কথাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
আর আছে ফজলুর রহমান, রুমিন ফারহানার মতো ব্যক্তিত্বরা। যাদের কাজ হচ্ছে আওয়ামীদের কাছে টানা, বিতর্ক সৃষ্টি করা, সোশ্যাল মিডিয়া মাতিয়ে রাখা। জাতে মানুষ দেশ গড়ায়, সংস্কারে কোন দল কি করবে সেই কথা না তুলে, দিন রাত এদের বিতর্কিত বক্তব্যকে ঘিরে সমালোচনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আওয়ামী-শাহবাগিরা খুশি হয়।
তবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে বিএনপির এদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা রয়েছে। বরং এদের ব্যবহার করছে। তাদের লক্ষ্য এসব ব্যক্তির মুখ থেকে বের হওয়া সেসব তীক্ষ্ণ, বিতর্কিত, ডার্ক বক্তব্যগুলোর প্রতি, যা আওয়ামী-শাহবাগীদের আকৃষ্ট করে, আর ভোটের লাটিম ঘোরায়।
এই বক্তব্যগুলোই বিএনপির হাতে অস্ত্র—যা দিয়ে তারা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক নিজেদের দিকে টেনে এনে পকেটে পুরছে। এটি শুধু রাজনীতি নয়, এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ—যেখানে ভোটারদের আবেগ, বিশ্বাস আর হতাশাকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি নিজেদের জয়ের পথ প্রশস্ত করছে।
কিন্তু এসবের মাঝে বিএনপি হারাতে যাচ্ছে তার সেন্টার রাইট ভোট ব্যাংক। আপাতত সেই হিসাবটা বিএনপি এড়িয়ে যাচ্ছে।
( তথ্য সুত্র ও ছবি : সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন একজন, লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর)