মানছে না লকডাউন

এইমাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য

জেল জরিমানার পরও মানুষের জটলা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ওলি-গলির চায়ের দোকানগুলোতে মানুষের জটলা। কাঁচাবাজারেও একই অবস্থা। প্রধান সড়কে চলছে এসব মানুষের পায়চারি। পুলিশ র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর চলছে কড়াকড়ি টহল।
আর সরকারের অব্যাহত হুশিয়ারির মধ্যেও মানুষের জটলা ছাড়ছে না। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, দেশের মফস্বল শহরেও এমন চিত্র বিরাজ করছে। আর প্রতিদিন পুলিশ ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা করলেও মানুষের জটলা ছাড়ছে না।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, পুরান ঢাকার চকবাজার, হাজারিবাগ, সেগুনবাগিচা, পল্টন, যাত্রাবাড়ি, ঠাটারিবাজার, রায়শাহেব বাজার, নয়াবাজার ব্রিজের নিচেসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এসব চিত্র। এছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে ট্রাক-ভ্যান বোঝাই করে মানুষ যাতায়াত করছে বলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এসব মানুষের অনেকেই পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ছে এবং জেল জরিমানার শিকার হচ্ছেন।
এদিকে যারা পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহন করবেন তাদের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনের ২০১৮ সালের ১০২ নম্বর ধারা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই ধারা লঙ্ঘন করলে এক মাসের কারাদন্ড বা দশ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হবে।
শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনের (বিআরটিএ) পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) লোকমান হোসেন মোল্লা পণ্যবাহী পরিবহনে যারা যাত্রী পরিবহন করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশকে অনুরোধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
অপরদিকে শনিবার র‌্যাবের নয়া মহাপরিচালক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, করোনা, রমজান ও র‌্যাবের নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৫৮টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ২হাজার ২৪০ জনকে বিভিন্ন্ মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। আর আদায় করা হয়েছে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা। নকল ও নি¤œমানের সেনিটাইজার, মাস্কসহ বিভিন্ন পন্য তৈরী ও মজুদ রাখার অপরাধে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, অপ্রয়োজনে বাইরে নয়, পড়তে পারেন জরিমানায়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে অকারণে ঘোরা-ফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পুরো রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। নগরীর মানুষ যাতে অহেতুক বাইরে না আসেন এজন্য গত শুক্রবার ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় রমনা বিভাগে ২৩ টি মামলায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ওয়ারী বিভাগে ৪টি মামলায় ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করেছেন। আর মতিঝিল বিভাগে ১৩টি মামলায় ৫ হাজার ৯০০ টাকা ও তেজগাঁও বিভাগে ১৩ টি মামলায় ৮ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাছাড়া গুলশান বিভাগে ৮ টি মামলায় ১১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ভাটারা থানা এলাকায় এক ব্যক্তিকে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে সর্বমোট ৬১টি মামলায় ৩৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা ও একজনকে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, অপ্রয়োজনে রাস্তায় নয়। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। মেনে চলুন সামাজিক দূরত্ব। আর হ্যাঁ কোনও রকম উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহতায়ও এতোটুকু ভীত নয় একশ্রেণির মানুষ। তারা আমলেই নিচ্ছে না কোনো কিছুই। সচেতনতামূলক প্রচারণারও পাত্তা নেই এ গোষ্ঠীর কাছে। এ অবস্থয় গোটা দেশ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সারা দেশেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। সরকারসহ গোটা বিশ্ব মরণঘাতি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যেখানে হিমসীম খাচ্ছে, সেখানে এক শ্রেণির মানুষ যেন উল্লাস করছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক ও সচেতনতার পাশাপাশি সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে আসছে সরকার। সামাজিক দূরত নিশ্চিৎ করতে ঢাকা নগরীতে পুলিশকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কেরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। হাঁচি, কাশি ও পরস্পর মেলামেশার কারণে এ রোগের বিস্তর ঘটে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে এই রোগের কোনো প্রতিষেধকও আবিষ্কার হয়নি। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা এবং জনসাধারণকে একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ করা করা হয়েছে। এছাড়া এই রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রথম দেশে করোনার সংক্রমণ গত ৮ মার্চ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই করোনায় মৃত ও আকান্তের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য গবেষক ও স্বাস্থ্য কর্মী এবং সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে করোনায়ভাইরাসা ইতিমধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় সারা দেশেকে ‘স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনার সংক্রমণে দেশের অধিকাংশ এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দুই দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। সরকারি সাধারণ ছুটির আগেই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর গণপরিবহনও বন্ধ করা হয়। জনসাধারণ নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা তৈরিতে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হয়েছে। আর সেনাবাহিনী সারাদেশে সরকারের নির্দেশনা বস্তিবায়ন করছে। আর সরকারের নির্দেশনা যারা মানছে না তাদর কোথাও কোথাও মৃদু লাঠিপেটাও করা হচ্ছে।
আবার ওষুধের দোকান ছাড়া সবধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার ও মুদি দেকান চালু রাখা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ঘরে বাইরে বের হওয়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এমনকি মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৫জনের বেশি উপসানা বা প্রর্থনা না করা হয়েছে। আর রমজানে তারাবির নামাজ বাসায় পরার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান। বাড়িতে থাকার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না একশ্রেণির মানুষ। অনেকে লকডাউন কিংবা বিধি-নিষেধ না মেনে বিনা প্রয়োজনে চলাফেরা করছেন।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বেড়তলার জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা মাঠে খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজায় অসংখ্য মানুষ অংশ নিয়েছে। এসব কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পুলিশ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চতকরাসহ বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে আরও কঠোর হয়েছে।


বিজ্ঞাপন