নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বর্তমানে Supreme Constitutional Court of Egypt এর প্রেসিডেন্ট Justice Boulos Fahmy এর আমন্ত্রণে মিশর অবস্থান করছেন।

উক্ত সফরের অংশ হিসেবে প্রধান বিচারপতি আজ মঙ্গলবার ৭ অক্টোবর, সারাদিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। এরই অংশ হিসেবে প্রধান বিচারপতি আজ ৭ অক্টোবর, কায়রোতে অবস্থিত মিশরের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত Supreme Constitutional Court of Egypt – এ উক্ত আদালতের প্রেসিডেন্ট Justice Boulos Fahmy এর সাথে স্থানীয় সময় বেলা ১২ ঘটিকায় এক পারস্পরিক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
বৈঠকে উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বিচার প্রশাসনকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এরই ফলশ্রুতিতে দুই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মধ্যে পারস্পরিক বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা সংক্রান্ত “Judicial Cooperation Protocol between the Supreme Constitutional Court of the Arab Republic of Egypt and the Supreme Court of Bangladesh” শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক (Protocol) স্বাক্ষরিত হয়, যা দুই দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

প্রটোকলে বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ, এবং কারিগরি সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং মিশরের Supreme Constitutional Court এর প্রেসিডেন্ট Justice Boulos Fahmy উক্ত প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন। প্রটোকল স্বাক্ষরকালে সেখানে Supreme Constitutional Court of Egypt এর সকল বিচারকবৃন্দ এবং কায়রোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
স্বাক্ষরিত প্রটোকলে উভয় দেশের সাংবিধানিক, আইনি ও বিচারিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পারস্পরিক অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। প্রটোকলে উভয় দেশের বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার উন্নয়ন, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধির উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া, প্রটোকলে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, সেমিনার আয়োজন, এবং বিচারিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়-কে পারস্পরিক সহযোগিতার মূল ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে।
স্বাক্ষরিত প্রটোকল অনুযায়ী উভয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত আদালত বিভিন্ন বিষয়ে যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করবে এবং এর পাশাপাশি আইনের কোন বিশেষ শাখায় বিশেষজ্ঞ কোন আইনবিদ এর মাধ্যমে জ্ঞান বিনিময়সহ পারস্পরিক আগ্রহের বিষয়ে যৌথ গবেষণা পরিচালনা করবে।
এছাড়া, প্রটোকলে উল্লেখ রয়েছে যে উভয় দেশের বিচার বিভাগ সম্মেলন, সেমিনার ও পারস্পরিক সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বিবেচিত শ্রেষ্ঠ বিচারিক চর্চা ও বিচারিক উদ্ভাবন বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সহযোগিতা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে উভয় দেশ লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগ করবে মর্মে প্রটোকলে উল্লেখ রয়েছে, যারা এই প্রটোকল বাস্তবায়নে কার্যক্রম সমন্বয় ও যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
এই প্রটোকল স্বাক্ষর উভয় দেশের বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তি ও বিচারিক উৎকর্ষের প্রতি অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
প্রটোকলটি বাংলাদেশ ও মিশরের বিচার বিভাগের মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষণা, এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের নতুন পথ উন্মুক্ত করবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি আধুনিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় এটি বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।
উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতি এর পূর্বে গতকাল সোমবার ৬ অক্টোবর, স্থানীয় সময় বেলা ১১ ঘটিকায় আলেকজান্দ্রিয়ায় অবস্থিত মিশরের Court of Appeals পরিদর্শন করেন এবং উক্ত আদালতের প্রেসিডেন্ট Ahmed Tharwat এর সাথে এক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন।
প্রধান বিচারপতি’র এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও দৃঢ় অবস্থান অর্জন করেছে।
এই সফর বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একাগ্রতা এবং এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি বিচার বিভাগের অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন ও সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সফর শেষে প্রধান বিচারপতি ১১ অক্টোবর, তারিখ দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন।