অনুসন্ধানী প্রতিবেদন : ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ আর রাজনৈতিক প্রভাবে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক  : গণপূর্ত অধিদপ্তরের শের-ই-বাংলা নগর ৩নং উপবিভাগে কর্মরত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মাসুম বিল্লাহ বর্তমানে দুর্নীতি ও বেনামী ঠিকাদারি বাণিজ্যের কারণে আলোচিত-সমালোচিত নাম। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি পদ-পদবীকে হাতিয়ার বানিয়ে তিনি নিয়মিত ঘুষ, কমিশন বাণিজ্য ও প্রভাব খাটিয়ে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

মাসুম বিল্লাহ ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার কাঠিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতা ইউনুস আলী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য। বুয়েটে পড়ার সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকায় পরবর্তীতে সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর আশীর্বাদে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিতে প্রবেশ করেন তিনি।

পদোন্নতি ও প্রভাবের খেলায় কোটিপতি : প্রথমে সহকারী প্রকৌশলী থাকাকালে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা উপার্জন করেন। পরে মিরপুর উপবিভাগ-২ এ এসডিই হিসাবে দায়িত্ব পেয়ে পাইকপাড়া অ্যাপার্টমেন্টসহ বহু প্রকল্পে ভুয়া বিল-ভাউচার ও এ্যাডভান্স বিল প্রদানের মাধ্যমে অর্থ লোপাট করেন ঊর্ধ্বতনদের সহযোগিতায়।


বিজ্ঞাপন

বর্তমানে শের-ই-বাংলা নগর -৩ নং উপবিভাগে থেকে তিনি পরোক্ষ ঠিকাদারি ও ঘুষ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। সূত্র বলছে, শুধু কমিশন বাণিজ্য থেকেই বছরে কয়েক কোটি টাকা আয় করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

অবৈধ সম্পদ সাম্রাজ্য  :  অভিযোগ রয়েছে, মাসুম বিল্লাহ ও তার কাস্টমস কর্মকর্তা বড় ভাই সফিউল বসর—রাজাপুর উপজেলায় ১০০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। গ্রামের ভাঙ্গা টিনের ঘর ভেঙে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকা, উত্তরা, বনশ্রী ও সাভারে একাধিক ফ্ল্যাট ও জমির মালিক হয়েছেন। স্ত্রী, ভাই ও আত্মীয়স্বজনের নামে নামে-বেনামে কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

ডাকাতির ঘটনায় সম্পদ ফাঁস   :   ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তাদের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহর গোপন সম্পদের চিত্র ফাঁস হয়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেদিন ডাকাতরা অন্তত ১৫-২০ কোটি টাকা ও কয়েকশ ভরি স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায়। অথচ থানায় দায়ের করা এজাহারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয় মাত্র ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ও ১৩ ভরি সোনা। বিশাল পরিমাণ অবৈধ অর্থ-সম্পদের বৈধতা না থাকায় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকৃত পরিমাণ আড়াল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

দুদকের অনুসন্ধান :  ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। দুদক সম্প্রতি তার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এ অনুসন্ধানে তার বড় ভাই সফিউল বসর ও স্ত্রী নাইমা আক্তার সুমাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

কর্মকর্তাদের ক্ষোভ   :  গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক প্রকৌশলী অভিযোগ করেছেন, মাসুম বিল্লাহ রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একদিকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, অন্যদিকে যোগ্য কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করেছেন। তাদের মতে, প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এখনও তিনি বহাল তবিয়তে পদে বহাল আছেন।

উপসংহার :  এসডিই মাসুম বিল্লাহর কাহিনি কেবল একজন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর নয়; বরং একটি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা দুর্নীতি সিন্ডিকেটের প্রতিচ্ছবি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থের প্রভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট করে যেভাবে তিনি অল্প সময়ে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তা দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর দুর্বলতা ও দুর্নীতি সংস্কৃতির নগ্ন উদাহরণ।

বর্তমানে দুদকের কার্যকর পদক্ষেপ ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ছাড়া এই সিন্ডিকেটের লাগাম টানা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *