এলজিইডির প্রকল্প অফিসে দুর্নীতির মহোৎসব  : RUTDP প্রকল্পের  পিডি মঞ্জুর আলীর শত কোটি টাকা আত্মসাতের কেলেঙ্কারি !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ যে দপ্তরের হাতে, তার নাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। অথচ এই দপ্তর এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিবর্তে দুর্নীতির “মহোৎসবের আসর” হিসেবে কুখ্যাত। সাম্প্রতিক আরইউটিডিপি (RUTDP) প্রকল্পে পিডি মঞ্জুর আলীর শত কোটি টাকা আত্মসাতের কেলেঙ্কারি কেবলমাত্র একটি নমুনা। খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়—এলজিইডির প্রায় প্রতিটি বড় প্রকল্পই দুর্নীতির অভিন্ন ছকে চলছে।


বিজ্ঞাপন

শুরুতেই ‘টাকার খনি’ :  ৬,৫০০ কোটি টাকার RUTDP প্রকল্প শুরু হয়নি ঠিকমতো, অথচ অভিযোগ উঠেছে শত কোটি টাকা ভুয়া খরচের। প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুর আলীর বিরুদ্ধে নিয়োগ, টেন্ডার ও কনসালটেন্ট ফার্ম নির্বাচনে অসীম অনিয়মের প্রমাণ সামনে এসেছে। আউটসোর্সিং নিয়োগে ৩–৫ লাখ টাকা ঘুষ। ইন্ডিভিজুয়াল কনসালটেন্টে ৫–১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘নিয়োগ ফি’।কনসালটেন্ট ফার্মে বরাদ্দ ৩৭০ কোটি টাকা থেকে সরাসরি ২০% ভাগ কমিশন।

সূত্র বলছে—মঞ্জুর আলী নিজের ভাই, আত্মীয় ও ভাগ্নেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। এমনকি গৃহপরিচারিকা ও দারোয়ানের নামেও প্রকল্প থেকে বেতন তোলা হয়েছে!


বিজ্ঞাপন

পুরনো প্রকল্প, একই কেলেঙ্কারি : RUTDP নতুন হলেও দুর্নীতির ধরন পুরনো। এমজিএসপি প্রকল্পে উদ্বৃত্ত থাকা ২০ কোটি টাকা ভুয়া খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছিল। আজিমপুর সরকারি কলোনি পার্কিং প্রকল্পে অসমাপ্ত কাজের পরও পূর্ণ বিল উত্তোলন। সিটি গভর্ন্যান্স প্রজেক্টে নিয়োগ জালিয়াতি, যেখানে ১০ লাখ টাকার নিচে কোনো পদে নিয়োগ পাওয়া যায়নি।


বিজ্ঞাপন

ক্ষুদ্র পৌর অবকাঠামো প্রকল্পে ভুয়া বিল, নকল কাগজপত্রে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক তহবিলের গলধঃকরণ : বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে চলা প্রকল্পগুলোতেও একই সিন্ডিকেট সক্রিয়। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এলজিইডি চক্রের ‘উপঢৌকন কূটনীতি’ দীর্ঘদিনের পরিচিত কৌশল। বিলাসবহুল ভোজ, দামি উপহার ও বিদেশ ভ্রমণের টিকিট—এসব দিয়ে তাদের প্রভাবিত করে দুর্নীতির পাহাড় চাপা দেওয়া হয়েছে বহুবার।

সিন্ডিকেটের রূপ : এলজিইডিতে এখন কাজের মূলনীতি স্পষ্ট—–কোনো কাজ বা নিয়োগে কমিশন ছাড়া ফাইল এগোয় না। বড় প্রকল্পের বরাদ্দ মানে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভরার সুযোগ। আত্মীয়স্বজনকে চাকরিতে বসিয়ে ঘুষের টাকা ভাগাভাগি করা নিয়মে পরিণত।

অভিযোগ আছে, এলজিইডির প্রতিটি বড় প্রকল্পে এখন একটি অদৃশ্য কমিশন হার নির্ধারিত থাকে—৫% থেকে ১৫% পর্যন্ত।

বিস্ফোরক প্রশ্ন : বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে প্রতিবছর। কিন্তু তার বড় অংশই কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যাচ্ছে। ফলে উন্নয়নের “কাগুজে স্বপ্ন” তৈরি হলেও মাঠে নেমে দেখা যায় ভাঙাচোরা রাস্তা, অর্ধেক তৈরি সেতু আর অসমাপ্ত ড্রেনেজ।

উপসংহার : এলজিইডি আজ আর কেবল একটি সরকারি দপ্তর নয়—এটি পরিণত হয়েছে এক “দুর্নীতির সাম্রাজ্যে”। এক প্রকল্প থেকে আরেক প্রকল্পে একই সিন্ডিকেট, একই দুর্নীতি আর একই অনিয়মের পুনরাবৃত্তি চলছে।

জনগণের প্রশ্ন এখন একটাই— এত অভিযোগ, এত প্রমাণের পরও কি এলজিইডি কর্মকর্তারা অদৃশ্য ছায়াতলে থেকে যাবে?  নাকি সত্যিই একদিন এই ‘টাকার খনি’ উন্মোচন হবে’?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *