ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে সীমিত আকারে চলা লকডাউনে সন্ধ্যার পরই ফাঁকা হয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। এ সুযোগ নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ বিচ্ছিন্ন কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও মরণ ফাঁদ পেতে প্রতিনিয়ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল ওভারপাসে চলছে ছিনতাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার রেল ক্রসিং এর উপর টিএ রোড হতে ডিসি বাংলা মোড় পর্যন্ত নির্মিত রেল ওভারপাসটি বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্ধ্যার পরই হয়ে পড়ে নিরব, রেল ওভারপাসের উপর দিয়ে তখন খুব একটা যাতায়াত করে না কেউ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি ছিনতাইকারী চক্র।
রেল ওভারপাসের দুই পাশে থাকা সোডিয়াম লাইটের খুঁটিতে ঘুড়ি উড়ানোর সুতা বেঁধে রাখে তারা। তখন কোনো বাইক বা রিকশা রেল ওভারপাসের উপর উঠতে বা নামতে গিয়ে সুতায় আঘাত পেয়ে আহত হয়ে পড়ে গেলে ছিনতাইকারিচক্র পড়ে যাওয়া চালককে সাহায্য করার নামে এগিয়ে আসে আর সুযোগ বুঝে চালকের কাছে থাকা মোবাইল ফোন, টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। কিন্তু সুতায় লেগে গলা কেটে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, যার পরোয়া করে না তারা।
গত পহেলা মে সন্ধ্যায় রেল ওভারপাসে সুতায় লেগে মুখ, গাল ও কান কেটে ২১৩টি সেলাই লাগে শহরের মধ্যপাড়ার সাইম নামের এক বাইক চালকের। পরের দিন আবারও সুতায় লেগে ঠোঁট কেটে যায় এক রিকশা চালাকের। গত রোববার মোরসালিন আহমেদ নামের এক তরুণের গলা কেটে যায় এই সুতায়।
এ ব্যাপারে মোরসালিন এর বন্ধু নাঈম জানান, এতবড় মহামারীতেও থেমে নেই চুরি ছিনতাইকারীদের চক্রান্ত, কয়েকজন ছিনতাইকারী মিলে রেল ওভারপাসে সোডিয়াম লাইটের দুপাশের খুঁটিতে ঘুড়ি উড়ানোর সুতা বেঁধে রাখে, কোনো বাইক যানচলাচলকারী এতে করে আঘাত পেয়ে বাইক নিয়ে পড়ে যাবে, এমতাবস্থায় চক্রান্তকারীরা মোবাইল ফোন, টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে সেই মনোভাব নিয়ে তারা এসব করছে। ঘটনাটি হয়েছে আনুমানিক রাত ৯.৩০ মিনিটের দিকে। আমার বন্ধুর সাথেও এই ঘটনা ঘটেছে। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে সে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সাইম জানান, ইফতার শেষে কাউতলি থকে ফেরার পথে তার মুখে এসে ঘুড়ির সুতা লাগলে সে মটর বাইকসহ পড়ে যায়। এতে তার মুখ, গাল ও কান কেটে যায়। আমার মুখে মোট ২১৩ টি সেলাই দেয়া হয়েছে। সে প্রথমে উড়ন্ত ঘুড়ি ভেবেছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যাথা পাওয়ায় এত খেয়াল করা হয় নাই। তার সাথে থাকা বন্ধু নিলয় সামান্য আহত হয়েছিল তাই সে ই তাকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে তখন ৪-৫ জন ছেলে ব্রিজে উপস্থিত ছিল বলে জানায় সাইম।
রিকশা চালক জামাল বলেন, আমি কাউতলি থেকে রিকশা নিয়ে প্রতিদিন অনেকবার শহরে যাই। ডাইরেক্ট মঠের গোড়া বা কুমারশীল মোড় এর কাস্টমার পেলে ব্রিজের উপর দিয়েই যাতায়াত করি। ৪-৫দিন আগে ব্রিজ থেইকা নামতে গিয়ে একটা সুতা লাগে আমার মুখে তখন হঠাৎ ব্রেক চাপায় রিকশা নিয়ে উল্টে পড়ে যাই । তখন ৪-৫টা ১৫-১৬ বছরের ছেলে এসে আমার রিকশা উঠায় দেয় এবং আমার কাছে আইসা আমার পকেটে থেইকা টাকাগুলা নিয়া নেয় এবং আমাকে চইলা যাইতে বলে। আরো কয়েকজন রিকশা চালকের সাথেও এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যপারে শহরের কলেজ পাড়ার সানি জানান, আমাদের বিল্ডিং ব্রিজের পাশে। এখানে সন্ধ্যার পর আগেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত তবে গত কিছুদিন যাবত দেখছি দুই একদিন পর পর ব্রিজে দুর্ঘটনা ঘটছে। খোঁজ নিয়ে দেখি প্রায় সবাই ঘুড়ির সুতায় আহত হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকেই কয়েকটা ছেলেকে দেখা যায় ব্রিজের উপর বসে থাকতে। তারা সেখানে বসে নেশা করে বলেও শুনেছি অনেকের কাছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মো. সেলিম উদ্দিন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই সব ঘটনা আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। এর আগে কারো কাছে শুনি নাই বা এই ব্যাপারে ভিক্টিম কেউ অভিযোগ নিয়েও আসে নাই থানায়।