বিশেষ বিবেচনায় চট্টগ্রামের ৪২ কারাবন্ধি মুক্ত

অপরাধ আইন ও আদালত চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিশেষ বিবেচনায় স্থানীয় এমপি মন্ত্রী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ৩ দফায় মুক্তি পেয়েছেন ৪২ জন কয়েদি। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের কারাগারগুলোতে চাপ কমাতে বন্দীদের মুক্তি দেয়া কার্যক্রমে তৃতীয় দফায় জরিমানা পরিশোধ করা ২২ কয়েদিকে মুক্তি দিয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। রোববার তাদের মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি দেয়া ২২ আসামির মধ্যে ১৪ জনের জরিমানা পরিশোধ করা হয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেয়া এক লাখ টাকার ফান্ড থেকে। এর আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে কয়েক দফায় ২০জন আসামিকে বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি দেয় চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত ৪২ জনকে বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আরো ২জন কয়েদীর অন্য মামলা থাকায় কোর্ট খোলার আগে আর বের হতে পারবেননা তারা।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে কারাদ- এক বছরের বেশি নয় এমন আসামিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরুর তৃতীয় ধাপে জরিমানা পরিশোধ করায় ১০ মে ২২ জনকে মুক্তি দেয়া হয়। এরমধ্য ১৪ জন আসামির ৬৫ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা পরিশোধ করা হয় শিক্ষা উপমন্ত্রীর দেয়া ফান্ড থেকে। অন্য ৮জন আসামি তারা নিজেরাই জরিমানা পরিশোধ করে।’
মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, রাউজানের পশ্চিম দারিয়া গ্রামের তিলক বড়ুয়া। যৌতুকের মামলায় তিনি সাজা ভোগ করছিলেন। ওই মামলা তার এক বছর কারাদ-সহ ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের সাজার আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে। ভুজপুর থানার পশ্চিম ভুজপুর গ্রামের মো. জাবের। তিনিও যৌতুক আইনে এক বছরের সাজা ভোগ করছিলেন। ওই মামলায় তার ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২০ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল।
একই থানার পূর্ব ফটিকছড়ি গ্রামের আলতাফ হোসেন। তার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে এক বছর কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাস কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের। সীতাকু-ের উত্তর মাহমুদাবাদ গ্রামের মো. ইমরান হোসেন। সে নারী ও শিশু নির্যাতন নিরোধ আইনের এক বছরের কারাদ- ভোগ করছিলেন। ওই মামলায় তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল।
নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গার মো. আবদুর নুর ওরফে সাগর। নারী ও শিশু নির্যাতন নিরোধ আইনের এক বছরের কারাদ- ভোগ করছিলেন। ওই মামলায় তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ১ মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল। পটিয়ার কেলিশহর গ্রামের মো. ইমরান ওরফে এনাম। সে মাদক আইনে এক বছরের কারাদ- ভোগ করছিলেন। ওই মামলায় তার ৩ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদ- ছিল।
সাতকানিয়ার পুরানঘরের রাশেদুল ইসলাম। সে বন আইনের একটি মামলায় ৬ মাসের সাজা ভোগ করছিলেন। ওই মামলায় তার ৫ হাজার টাকা জারিমানা ও অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের। পটিয়ার কুমারপাড়া গ্রামের খালেদা বেগম। মাদক আইনের একটি মামলায় এক বছরের কারাদ-, একইসাথে তিন হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে।
ভুজপুরের পশ্চিম সিকদারবিল এলাকার বাদশা আলম ওরফে শাহ আলম বন আইনের একটি মামলায় ৬ মাসের কারাদ- ভোগ করছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল। রাউজানের পাহাড়তলী খান পাড়া গ্রামের মো. মুন্না। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনের ৬ মাসের কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের।
ভুজপুরের হোসনাবাদ গ্রামের মীর আহাম্মদ ওরফে মিয়া। বন আইনের একটি মামলায় ৬ মাসের কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে। সাতকানিয়ার সাচি পাড়ার সাহাব উদ্দিন। একটি মারামারি মামলায় ৬ মাসের সাজা ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে।
চন্দনাইশের সৈয়দাবাদ গ্রামের আবদুর রহমান। বন আইনের একটি মামলায় ৬ মাসের কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে। পটিয়া থানার কেলিশহর গ্রামের জনি ধর। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনের একটি মামলা এক বছরের ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল।
চান্দগাঁওয়ের উত্তর মোহরার মো. নুর গণি। তার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের একটি মামলায় ১ বছর ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের। রাগুনিয়ার খিলমোঘল হোসনেবাদ গ্রামের মো. সেকান্দর। তার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের একটি মামলায় এক বছরের কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের।
রাগুনিয়ার শিলক গ্রামের মো. নিয়ামত উল্লাহ। যৌতুক আইনের একটি মামলায় তার এক বছর কারাদ-, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাস কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের। নোয়াখালীর চরজব্বর থানার চরভাটা গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে ১ বছরের কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের।
রাউজানের গুচ্চ গ্রামের মো. ফারুক। তার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের একটি মামলা এক বছর কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের। সীতাকু-ের মধ্যম সোনাইছড়ির মো. রুবেল। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৬ মাসের কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের।
চরজব্বর থানার উত্তর কাছাফিয়া গ্রামের মাসুক ওরফে মাসুদ। তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে আইনে ১ বছর কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদ-ের আদেশ ছিল আদালতের। নগরীর ডবলমুরিং থানার হাজীপাড়ার মো. নজরুল ইসলাম শিমুল। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলায় তার ১ বছরের কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদ-ের আদেশ ছিল।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দীর চাপ কমাতে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া শুরু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তৃতীয় দফায় ১১ জন কয়েদী আসামীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার ১১জন আসামীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ৩০ জন আসামীর মুক্তির আদেশ এসেছিল। তন্মধ্যে জরিমানা পরিশোধ করতে না পারায় ১৯জন আসামীকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। প্রথম ধাপে ৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার মুক্তি দেওয়া ১১জনের মধ্যে রয়েছে, হাটহাজারির ফরহাদাবাদ গ্রামের ফরিদুল আলমের ছেলে মো. ইব্রাহীম খলিল ওরফে শাওন। ইভটিজিংয়ের অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতে ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সে কারাবন্দি ছিলেন। মুক্তি পাওয়া অন্যজন হলো চন্দনাইশ থানাধীন জাফরাবাদ গ্রামের সাধন জলদাশের ছেলে সম্পদ দাশ। সে মাদক আইনে ভ্রাম্যমান আদালতের আদেশে তিন মাসের বিনাশ্রম সাজা ভোগ করছিলেন।
চন্দনাইশ থানাধীন বৈলতলী গ্রামের শাহ আলমের ছেলে মো. করিম উদ্দিন। সেও মাদক আইনে ভ্রাম্যমান আদালতের আদেশে তিন মাসের সাজা ভোগ করছিলেন। একই ঘটনায় তিন মাসের সাজাপ্রাপ্ত আরেক আসামী জাহাঙ্গীরও মুক্তি পায়। সে চন্দনাইশের বাতাছড়ি গ্রামের জগির আহাম্মদের ছেলে। পটিয়া থানাধীন আশিয়া বাংলা বাজার এলাকার আবদুল আজিজের ছেলে মো. এরশাদ। সে মাদক আইনে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশে তিন মাসের সাজ ভোগ করছিলেন। একই সাথে জরিমানার পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করায় তাকেও মুক্তি দেওয়া হয়। বাঁশখালী থানাধীন বৈলখালী এলাকার নিপুদে’র ছেলে শিমুল দে। সে ইভটিজিংয়ের অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশে ৬ মাসের সাজা ভোগ করছিলেন। সাতকানিয়ার কেওসিয়া এলাকার কবির আহাম্মদ ড্রাইভারের ছেলে মো. মোবারক হোসেন। সে মাদক আইনে ভ্রাম্যমান আদালতের আদেশে ৬ মাসের বিনাশ্রম সাজা ভোগ করছিলেন। নগরীর আকবর শাহ থানাধীন আল হেরা মসজিদ গলির মো. সেলিমের ছেলে মো. আবদুল আলীম খোকন। সে পুলিশ অধ্যাদেশের ধারায় আদালতের আদেশে ৬ মাসের কারাদ- ভোগ করছিলেন। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানাধীন নালকিরা ফরাজী গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. সালেহ উদ্দিন। সে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইনে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশে ৬ মাসের সাজা ভোগ করছিলেন। মীরসরাই থানাধীন মন্ডের বারিয়া গ্রামের রওশন জামানের ছেলে আবুল কাশেম। সে মাদক আইনে আদালতের নির্দেশে ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করছিলেন। হাটহাজারী থানাধীন ফতেপুর গ্রামের আবু তৈয়বের ছেলে মো. শাকিল। সে ইভটিজিংয়ের অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশে এক বছরের সাজা ভোগ করছিলেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি পরিদর্শক আব্দুল হান্নান লিটন বলেন, কারাগারে বন্দিদের চাপ কমাতে সরকার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা এক বছরের কম সাজা প্রাপ্ত তাদের সাজা বিশেষ বিবেচনায় মওকুফ করে ছাড় দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষ এই কাজে সহযোগিতা করছেন বলে তিনি জানান।


বিজ্ঞাপন