ঢাকায় অবাধ চলাচলে মহাবিপদের শঙ্কা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

করোনা

বিশেষ প্রতিবেদক : বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের তথ্য মোতাবেক এই শহরের প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস করে। করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শহর নিউইয়র্কে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১ হাজার জন। তাই ঢাকায় করোনাভাইরাসের মতো সংক্রামক ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়বে এটা অনুমিতই ছিল। ঘনবসতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার অপেক্ষাকৃত জলদিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। যার মধ্যে আছে ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা, ৬ এপ্রিল মসজিদে না গিয়ে বাসায় নামাজ আদায়ের অনুরোধ এবং ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার ৫২ এলাকা লকডাউন ঘোষণা। কিন্তু এতকিছুর পরেও এই শহরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়নি বলেই একটি সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৯ এপ্রিল থেকে ৮ মে’র মধ্যবর্তী সময়ে গড়পরতা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় দিনে ঢাকা শহরে সংক্রমণ আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ৯ এপ্রিল ঢাকা শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯৬ জন, ৮ মে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় হাজার ১৬২ জনে। অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী ৩০ দিনে পাঁচবার সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। দ্বিগুণ হওয়ার সময় বলতে বোঝানো হচ্ছে কোনও একটি সময়ে ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ থেকে ২০০, বা ২০০ থেকে ৪০০ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময়। দ্বিগুণ হওয়ার সময় একটি মহামারির গতি নির্দেশ করে। এই সময়টি যত দীর্ঘ, সংক্রমণের গতি ততটা ধীর, অর্থাৎ ততটাই মঙ্গল। আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটার তথ্যমতে, বাংলাদেশব্যাপী সংক্রমণ দ্বিগুণ হওয়ার সময় হচ্ছে ১১ দিন। অর্থাৎ কার্যত লকডাউনের মধ্যে থাকলেও রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণ সারা দেশের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে ছড়িয়েছে।
৮ মে প্রাপ্ত এলাকাভিত্তিক তথ্য মোতাবেক ঢাকা শহরের ১৭৯টি এলাকায় পৌঁছে গেছে করোনাভাইরাস, যদিও ৩০ দিন আগে অর্থাৎ ৯ এপ্রিল সংক্রমিত এলাকার সংখ্যা ছিল ৬১। অর্থাৎ, ৩০ দিনের মধ্যেই আক্রান্ত এলাকার সংখ্যা বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি করে নতুন এলাকা সংক্রমিত হয়েছে। সর্বশেষ ৬, ৭ ও ৮ মে আর নতুন সংক্রমিত এলাকা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর তথ্যে এলাকা বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে সেটি পরিষ্কার নয়। তবে উল্লেখিত এলাকাগুলোর ম্যাপিং করলে দেখা যায়, ঢাকা শহরের প্রায় সব থানাতেই সংক্রমণ পৌঁছে গেছে।
এলাকাভিত্তিক সংক্রমণের তীব্রতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯৭টি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ জনের কম, ৬১টি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ থেকে ৪৯ জনের মধ্যে, ১৫টি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ থেকে ৯৯ জনের মধ্যে। ১০০ জনের বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেছে ছয়টি এলাকায়।
পর্যবেক্ষণে এমন ৭৮টি এলাকা পাওয়া গেছে যেখানে সংক্রমণের ন্যূনতম ১০-২৯ দিন পার হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ১০ পেরোয়নি।
৩২টি এলাকা এমনও পাওয়া গেছে যেখানে বিগত ১৪ দিনে সংক্রমণের সংখ্যায় কোনও বৃদ্ধি দেখা যায়নি। যা থেকে পরিবেশিত তথ্য ও অনুমিত তথ্যের মধ্যে এক ধরনের অধারাবাহিকতার উপস্থিতি অনুমান করা যায়। উল্লেখ্য, ঢাকা শহরে সংক্রমণ সংখ্যার মধ্যে দুই হাজার ৩৭৬ জনের এলাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব ব্যক্তি কোন কোন এলাকার বাসিন্দা সেই তথ্য পাওয়া গেলে হয়তো এই চিত্রের ভিন্নতা পাওয়া যাবে।
প্রকৃত সংক্রমণের পরিমাণ না জানা গেলেও আমাদের পর্যালোচনা মোতাবেক এটি বলা যায় যে, ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই ভাইরাস পৌঁছে গেছে। এই মুহূর্তে মানুষের অবাদ চলাচল এলাকাভিত্তিক ছড়িয়ে পড়ার মাত্রায় গতি আনতে পারে এবং ঢাকাজুড়ে এই ভাইরাসের ব্যাপকতা গুণানুপাতিক হারে বাড়তে পারে। এর আলামত ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে।
এ বিষয়ে মালিবাগ এলাকার উদাহরণ টানা যেতে পারে। মাত্র ১২ দিনের মাথায় এই এলাকায় আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক গতি পেয়েছে। ২৬ এপ্রিল মালিবাগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩ জন। ১২ দিনের মাথায়, অর্থাৎ ৮ মে, মালিবাগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩-তে। উল্লেখ্য, ২৬ এপ্রিল এই এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের একটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।


বিজ্ঞাপন