শিথিলতার শুরুতেই রেকর্ড

জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী স্বাস্থ্য

সামাজিক দূরত্বের বালাই নাই

 

বিশেষ প্রতিবেদক : মহামারি করোনাভাইরাসের ভয় উপেক্ষা করে নানা বয়সী মানুষ ঈদের কেনাকাটার জন্য ঘর ছেড়ে মার্কেটে বেরিয়ে এসেছে। প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময় সকাল ১০টার আগেই মার্কেটের সড়কগুলোতে যেন মানুষের ঢল নামে। সরকারিভাবে কেনাকাটা সীমিত পরিসরে করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও কোনও মার্কেটেই ক্রেতা বা বিক্রেতারা তা মানছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে শহরের বিভিন্ন সড়কে এবং মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।
অর্থনীতির চাকা সচল করার লক্ষ্যে গত ২৬ এপ্রিল সচল হয়েছে কারখানা। আর রোববার থেকে সীমিত আকারে খুলেছে দোকানপাট-শপিং মল। এমন পরিস্থিতিতে গতকালই সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে দেশে। একদিনে ৮৮৭ জন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের পর যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা আটশর ঘরে যেতে সময় লেগেছিল ৩৮ দিন। সংক্রমণের ৬৪তম দিনে এসে একদিনেই আক্রান্ত হলেন ৮৮৭ জন। গতকাল মৃত্যু হয়েছে আরো ১৪ জনের। এটি মোটেও স্বস্তিদায়ক নয় বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অর্থনীতির স্থবিরতার বিপরীতে যে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, তার মূল্যায়ন বা পরিমাপ কে করেছে? এ সিদ্ধান্ত কার পরামর্শে নেয়া হয়েছে?
দোকান মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, রোববার ইসলামপুর, উর্দু রোড মৌলভীবাজার, নিউ সুপার মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, সেঞ্চুরি অর্কিডসহ কিছু কিছু মার্কেট খোলা হয়েছে। আবার বাটা, এপেক্সের মতো পাদুকাসহ পোশাক ও অনুষঙ্গ পণ্যের আড়ংয়ের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোও খুলতে শুরু করেছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে সচল হয়েছে শিল্প-কারখানা। গতকাল পর্যন্ত ছয় শিল্প এলাকার ৭ হাজার ৬০২ কারখানার মধ্যে খোলা ছিল ৩ হাজার ৮২৯টি। যার অধিকাংশই বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৭৩৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৮৮৭ জন কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে চিকিৎসক, পুলিশ, ব্যাংকারসহ সাধারণ মানুষও আছেন। সংখ্যাটা বৃদ্ধির হারও অনেক বেশি। এ মুহূর্তে শনাক্ত ব্যক্তি কোন পেশার, বিষয়টি ভাবা অবান্তর। সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের প্রতিশ্রুতিতেই আমাদের খাতের কারখানাগুলো সচল করা হয়েছে।
গত ৪ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকান ও শপিং মল ১০ মে থেকে খোলা রাখা যাবে। তবে দোকান ও শপিং মল বিকাল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
চিঠিতে বলা হয়, কভিড-১৯ রোগের বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ৭ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি/জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা/সীমিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শর্তাদি বিবেচনা করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট, শপিং মলসহ অন্যান্য কার্যাবলি ১০ মে থেকে সীমিত আকারে খুলে দেয়ার ব্যবস্থার অনুরোধ জানানো হলো। তবে এক্ষেত্রে আন্তঃজেলা ও আন্তঃউপজেলা যোগাযোগ/চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাট-বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিং মলগুলো সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শপিং মলে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, আসন্ন ঈদের ছুটিতে জনগণকে নিজ নিজ স্থানে থাকতে হবে এবং আন্তঃজেলা-উপজেলা বাড়িতে যাওয়ার ভ্রমণ থেকে নিবৃত্ত করতে হবে। এসব শর্ত পালন সাপেক্ষে অধীন অফিস/অধিদপ্তর/বাহিনী/সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে চিঠিতে অনুরোধ জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কথা বলেছেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতিও। সীমিত আকারে মার্কেট খোলার ব্যবস্থা করেছি, জানান এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, একেবারে কাস্টমার আসছে না, সে কথা বলব না, মোটামুটি চলছে। এ মুহূর্তে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকাও নেই, কারণ দুই মাস ধরে আমাদের দোকানপাট বন্ধ। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী, মার্কেট বন্ধ থাকলেও, বেতন পরিশোধের চেষ্টা করব।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেচা-কেনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা শারীরিক দূরত্বও কেউ রাখেননি। পছন্দের পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল ও কসমেটিকসসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য ক্রেতাদেরকে একেবারে গা ঘেঁষাঘেঁষি এমনকি ঠেলাঠেলিও করতে দেখা গেছে। অনেকে তাদের শিশু সন্তানদেরকেও সঙ্গে এনেছিল। দোকানদারদের বেশিসংখ্যক ক্রেতার সমাগম ঘটানোর জন্য ‘আসেন আপা’, ‘আসেন ভাই’, ‘কি লাগবে’ ইত্যাদি বলে হাঁক-ডাক করতে দেখা গেছে। মার্কেট করতে আসা মানুষের মধ্যে করোনার ভয় একেবারের লক্ষ্য করা যায়নি।
উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ রোধে গেল ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলার সঙ্গে সঙ্গে দোকান-পাট ও বিপণিবিতানগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চম দফা সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে তা করা হয় ১৬ মে পর্যন্ত। এরমধ্যে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হলো ঈদ মার্কেট।


বিজ্ঞাপন