মাস্ক চেকিংয়ে সীমাবদ্ধ চেকপোস্ট!

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৮টায় কলাবাগান থেকে শুক্রাবাদ অভিমুখে দ্রুতগামী একটি বিশাল আকারের লরি ট্রাকের চালককে হাত উঠিয়ে ইশারায় থামার নির্দেশ দিলেন টহলরত কয়েকজন সেনা সদস্য।
এক সেনা কর্মকর্তা এগিয়ে এসে মৃদু ধমক দিয়ে প্রশ্ন করলেন, মাস্ক কোথায়? ভয়ে কাঁচুমাচু লরির ড্রাইভার স্টিয়ারিংয়ের উপরে গ্লাসের সামনে রাখা মাস্ক উঠিয়ে দ্রুত পরে বললেন, স্যার ভুল হয়ে গেছে। মুখে মাস্ক পরার সঙ্গে সঙ্গে সেনা কর্মকর্তার ইশারায় গাড়ি এগিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়ে বললেন, গাড়িতে যতক্ষণ থাকবেন ততক্ষণই মাস্ক পরে থাকতে হবে। এক মুহূর্তের জন্যও খোলা যাবে না। একইভাবে এ রাস্তায় চলাচলকারি সকল প্রকার যানবাহনের প্রতি মাস্ক পরিধানের জন্য পরামর্শ ও নির্দেশ দিচ্ছিলেন টহলরত সেনা সদস্যরা।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানী থেকে দেশের বাড়ি যেতে ইচ্ছুক মানুষদের জন্য গণপরিবহন ছাড়া প্রাইভেটকার ও অন্যান্য নিজস্ব যানবাহনে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ নির্দেশের ফলে রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচলে কঠোর নজরদারি শিথিল হয়েছে। ঢাকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিভিন্ন চেকপোস্ট যেমন গাবতলী ও সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনা সদস্যরা শুধুমাত্র গণপরিবহনে কেউ ভ্রমণ করছে কিনা তা দেখছেন। এছাড়া শুধুমাত্র ভ্রমণকারী মুখে মাস্ক পরিধান করেছে কিনা সেটাই শুধু দেখছেন।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার, জিপ গাড়ি, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, পণ্য পরিবহন ট্রাক, লরি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা , ব্যাটারি ও প্যাডেল চালিত রিক্সাসহ রাস্তাঘাটে যানবাহনের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া এবং পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচলে এতদিন কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকলেও আজ থেকে তা শিথিল হওয়ায় অসংখ্য মানুষ ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার মাইক্রোবাস ও জিপ গাড়ি নিয়ে গ্রামে রওনা হয়েছেন। গাবতলী ও সায়েদাবাদসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ পথ দিয়ে অবাধে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিকল্প হিসেবে অনেকে প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে গ্রামে ছুটছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চেকপোস্টে কর্তব্যরত এক সেনা কর্মকর্তা জানান, এখন শুধুমাত্র তারা যানবাহনের যাত্রীরা মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন কিনা তা দেখছেন। এর বাইরে অতিরিক্ত আর কোনো দায়িত্ব তারা পালন করছেন না। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্ট ও কনস্টেবলদের অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী ও সায়েদাবাদে ছিল যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর চেকপোস্ট। আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তোষজনক জবাব পেলে তবেই শুধু ঢাকা ছাড়ার অনুমতি দিচ্ছিলেন। কিন্তু আজ চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
দেশের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগী রাজধানী ঢাকার।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শুক্রবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ২০৫ জন। মারা গেছেন মোট ৪৩২ জন। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানী ছেড়ে ঢাকার বাইরে যারা যাচ্ছেন তাদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।


বিজ্ঞাপন