পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ সাস্থ্য

শনাক্তের সব রেকর্ড ভঙ্গ

 

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : গেল ৮ দিনেই সাড়ে ১২ হাজার মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। রোগীর এই চাপ সামলাতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি রোগীকে ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস স্বাস্থ্য অধিদফতরের।
কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা এখন বাড়ছে হু হু করে। ৮ মার্চ প্রথম শনাক্তের সংক্রমিতের সংখ্যা ১০ হাজার পৌঁছাতে সময় লেগেছে ২৮ দিন। দ্বিতীয় দশ হাজার হয়েছে ১১ দিনে আর তৃতীয় সাড়ে ১২ হাজার রোগী মিলেছে ৮ দিনেই। এরই মধ্যে বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে আসা ইঙ্গিত দিচ্ছে রোগীর চাপ আরো বাড়ার।
এই অবস্থায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক শয্যা। প্রতিটি হাসপাতালেই থাকতে হবে কোভিড চিকিৎসা সক্ষমতা। আর নিশ্চিত করতে হবে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ।
ডা. মোহাম্মদ জাকের উল্লাহ বলেন, প্রধানত নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে এবং সবাই মনে করবে এটা আমাদের দায়িত্ব। যেভাবে রোগী বাড়ছে দেখা যাবে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হবে। সেভাবে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
শঙ্কা রয়েছে শক্ত হাতে হাল না ধরলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে পরিস্থিতি। হাসপাতাল থেকে রোগী ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়াও নজরদারির আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করেন তারা।
ডা. রাইয়িক রিদওয়ান বলেন, আমার মতে, একটা প্রটোকল তৈরি করা দরকার ছেড়ে দেয়ার সময় ২৪ ঘণ্টায় দুটো গ্যাপে নেগেটিভ আসলে ছাড়ছে। এতে রোগী আরো ৩-৪ দিন হাসপাতালে থাকছে। উপসর্গ ঠিক হলেই ছেড়ে দিতে হবে।
এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়োপযোগী পরিকল্পনা সাজানোর দাবি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, জেলা স্বাস্থ্যতেও ব্যবস্থা করা হবে। এভাবে অনেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে। এই মুহূর্তে দেশে করোনা শনাক্তের হার প্রায় বিশ শতাংশ।
এ দিকে দেশে গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ হাজার ৫২৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ২৩ জন। করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে শুক্রবার দুপুরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৯৮২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১১ হাজার ৩০১টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো দুই লাখ ৮৭ হাজার ৬৭টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও ২ হাজার ৫২৩ জনের দেহে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়াল। ফলে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ হাজার ৮৪৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৩ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৮২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৫৯০ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ১৫ জনে।
মৃত ২৩ জনের মধ্যে ১৯ পুরুষ এবং ৪ জন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের রয়েছেন ১০ জন, চট্টগ্রামের বিভাগের ৯ জন, রংপুরে দুজন, বরিশালে একজন এবং সিলেটে একজন।
তাদের বয়স বিশ্লেষণে জানানো হয়, মারা যাওয়াদের মধ্যে ১১ থেকে ২০ বছরের একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সসীমার মধ্যে দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের পাঁচজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ছয়জন এবং ৭১ থেকে ৮০ বছরের দুজন এবং আশি ঊর্ধ্ব একজন রয়েছেন।
বরাবরের মতোই বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশে ৪৯টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ২৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে মারা গেছেন ১৫ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হলেন ৪০ হাজার ৩২১ জন এবং মারা গেলেন ৫৫৯ জন। এছাড়া নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৫০০ জন।
বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩১ তারিখ থেকে সরকারি সব অফিস-আদালত খোলার প্রজ্ঞাপন জারি করে। অনুমতি দেয়া হয়, সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচলেরও। তবে সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্বে ৫৯ লাখ ১১ হাজার ৫০৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ লাখ ৬২ হাজার ১২৭ জন মারা গেছেন অন্যদিকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ২৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬৯৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮৫ জনের মধ্যে ৫৩ হাজার ৯৭১ জনের অবস্থা গুরুতর।


বিজ্ঞাপন