বাড়ছে শনাক্ত-মৃতের সংখ্যা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ৩৮১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫৩৪ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৭২ জনে।
দুই মাসের বেশি চলা সাধারণ ছুটির পর দ্বিতীয় কর্মদিবসে সোমবার (১ জুন) দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ১০৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১১ হাজার ৪৩৯টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো তিন লাখ ২০ হাজার ৩৬৯টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৩৮১ জনের দেহে। ফলে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ৫৩৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২২ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৭২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৮১৬ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১০ হাজার ৫৯৭ জনে।
নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের ১৯ জন পুরুষ, তিনজন নারী। ১১ জন ঢাকা বিভাগের, আটজন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুইজন সিলেট বিভাগের এবং একজন বরিশাল বিভাগের। এদের মধ্যে হাসপাতালে ১৫ জন, বাসায় ছয়জন এবং হাসপাতালে আনার পর একজন মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন, চল্লিশোর্ধ্ব আটজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব চারজন, ষাটোর্ধ্ব সাতজন এবং সত্তরোর্ধ্ব দুজন রয়েছেন।
গত রোববারের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন মারা গেছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির রেকর্ড। ১১ হাজার ৮৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৫৪৫ জনের দেহে, এটিও একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমেছে মৃত্যু, কমেছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও।
সোমবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তে হার ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনার সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৪৪৯ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ৭ হাজার ২১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২২২ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৮ জন।
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আছে ছয় হাজার ৩৪টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯৯টি। ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১১২টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৭০৭ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ লাখ ৮৭হাজার ৮৭৯ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৫২ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৭৪৩ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৯ হাজার ১৩৬ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
তিনি বরাবরের মতোই করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা, বাইরে বেরোলে হ্যান্ড গ্লোভস পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে গোটা বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বেশিরভাগ দেশই ভাইরাসটিতে তেমন পাত্তা দেয়নি। অনেক দেশই ধারণা করেছিল, এটি চীনা ভাইরাস এবং এর সংক্রমণ হয়তো ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়বে না। এজন্য সেখানকার দেশগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। ফলও দিতে হচ্ছে তাদের। কারণ সংক্রমণ সংখ্যার দিক থেকে প্রথম দেশগুলোর তালিকার মাঝেই নেই চীন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। এ ছুটি আরেক দফা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়।
ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে রোববার জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮৯৯ জন। এছাড়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৫ জন।


বিজ্ঞাপন