নিজের সুরক্ষা নিজের হাতে

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

*সোমবারও ৪২ জনের মৃত্যু
*মৃত্যুর হারে এগিয়ে পুরুষরা
*সংক্রমণের কেন্দ্র দ.এশিয়া-আমেরিকা
*করোনা জয় করলেন প্রায় ৩৫লাখ মানুষ

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : দেশে গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ হাজার ৭৩৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪২ জন। করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১৩ হাজার ৯৬১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৪টি নমুনা। এই নমুনা পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৩৫ জন। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ৪২ জন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ৬৫৭ জন।
দেশে আসা চীনা মেডিকেল দলের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে বলে এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৯৬১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৯৪৪টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ১০ হাজার ৯৩১টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৭৩৫ জনের মধ্যে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৮ হাজার ৫০৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪২ জন। আগেরদিনও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ৯৩০ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬৫৭ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৪ হাজার ৫৬০ জন।
গত রোববারের (৭ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ জন মারা গেছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ১৩ হাজার ১৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৭৪৩ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও মৃত্যু হয়েছে সমানসংখ্যক। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে দুই হাজার ৯১১ জনের, যা গত ২ জুনের বুলেটিনে জানানো হয়।
সোমবারের বুলেটিনে বলা হয়, দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৭১ শতাংশ এবং নারী ২৯ শতাংশ। রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
বরাবরের মতোই ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজের সুরক্ষা নিজের হাতে।
এদিকে প্রতিবেশী ভারতে ক্রমেই বাড়ছে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ৯০ জন। এছাড়া সেখানে মারা গেছেন ৭ হাজার ২০৭ জন।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৭১ লাখের বেশি মানুষের শরীরে। এছাড়া এর কারণে মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ৪ লাখ। তবে আশার কথা হলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৪ লাখ ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি শনাক্তের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে এখন পর্যন্ত ২০ লাখেরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
অন্যদিকে যেই চীন থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরু হয় সেই দেশটির পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সেখানে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা পাঁচ সংখ্যা পাড় হয়নি। এছাড়া সংক্রমণের সংখ্যা বিবেচনায় এক নম্বরে থেকে ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামছে দেশটি। বর্তমানে অবস্থান করছে ১৮ নম্বরে।
মৃত্যুর হারে এগিয়ে পুরুষরা : বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হন গত ৮ মার্চ। শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর হারে এগিয়ে রয়েছেন পুরুষরা। লিঙ্গ ভিত্তিক মৃতের হার ৭৭ শতাংশ পুরুষ। মহিলা ২৩ শতাংশ।
সোমবার দুপুরে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
সংক্রমণের কেন্দ্র এখন দক্ষিণ এশিয়া-আমেরিকা : সর্বশেষ তথ্য মতে বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ ৯২ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হিসাব দিয়ে আসা ওয়ার্ল্ডওমিটারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী ৪ লাখ ৬ হাজার ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৪ লাখ ৬২ হাজার মানুষ।
চীন থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু। এরপর ইউরোপে তা-ব চালায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। তবে এখন ভাইরাসটির সংক্রমণের কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়া ও আমেরিকা। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখ ৭ হাজার ৫৮। বিশাল সংখ্যক এই আক্রান্ত মানুষের মধ্যে দেশটিতে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে নেই কোনো দেশ।
করোনা শনাক্ত মানুষের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। সেখানে এখন মোট আক্রান্ত প্রায় ৭ লাখ। দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৩৬ হাজার।
করোনা রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৫৯ জনের।
যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গত ২০ মার্চ প্রথম মৃত্যুর পর প্রথমবারের মতো গত ২৪ ঘণ্টায় স্কটল্যান্ডে ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে কারও প্রাণহানি হয়নি। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্যজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে। দেশটিতে মোট ২৮ লাখ ৬ হাজার ১৯৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০ হাজার ৫৪২ জনে।
এদিকে, বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫০৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৭ হাজার ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৪৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
করোনা জয় করলেন প্রায় ৩৫ লাখ : প্রাণঘাতী করোনা বিশ্বব্যাপী তা-ব চালালেও এর প্রকোপ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এই ভাইরাসে সুস্থতার সংখ্যাও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। সোমবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৮০ জন। এ তথ্য জানিয়েছে করোনার লাইভ আপডেট দেয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার।
এছাড়াও করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হিসাব দিয়ে আসা ওয়ার্ল্ডওমিটারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৬ জন মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ লাখ ৬ হাজার ১২৬ জন মানুষ।
করোনার আক্রমণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখ ৭ হাজার ৫৮। এছাড়াও দেশটিতে এ ভাইরাসে মারা গেছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৪৬৬ জন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে নেই কোনো দেশ।
এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ভারতে করোনায় আক্রান্ত ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫০৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৭ হাজার ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৪৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে।
করোনায় শনাক্ত মানুষের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। সেখানে এখন মোট আক্রান্ত প্রায় ৭ লাখ। দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৩৬ হাজার।
এদিকে করোনা রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এতে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৫৯ জনের।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চীনে। এরপর ইউরোপে তা-ব চালায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। তবে এখন ভাইরাসটির সংক্রমণের কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়া ও আমেরিকা। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রাণঘাতী এই করোনার এখনও কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। তবে বিশ্বের অনেক দেশ মহামারি ইবোলার ওষুধ রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ১২৫টিরও বেশি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে দশটি মানবদেহে প্রয়োগ হয়েছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সবচেয়ে এগিয়ে আছে।


বিজ্ঞাপন