সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

আরও ভয়ঙ্কর দিন আসছে

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটি কেড়ে নিয়েছে এক হাজার ৮৪৭ জনের প্রাণ। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৬৮২ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জনে।
মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি ৬৬টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৮ হাজার ৮৬৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৮ হাজার ৪২৬টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো সাত লাখ ৬৬ হাজার ৪৬০টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৬৮২ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৬৪ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৮৪৭ জনের। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৮৪৪ জন। এতে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৫৯ হাজার ৬২৪ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৬৪ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৫২ জন এবং নারী ১২ জন। এদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের সাতজন, ত্রিশোর্ধ্ব ছয়জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ২১ জন, ষাটোর্ধ্ব ১৬ জন, সত্তরোর্ধ্ব ১১ জন, আশি বছরের বেশি বয়সী তিনজন রয়েছেন। ৩১ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, সাতজন রাজশাহী বিভাগের, সাতজন খুলনা বিভাগের এবং দুজন করে সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের রয়েছেন। এদের মধ্যে ৫১ জন হাসপাতালে এবং ১৩ জন বাসায় মারা যান।
গত সোমবারের (২৯ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগীদের মধ্যে আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ১৭ হাজার ৮৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও চার হাজার ১৪ জনের শরীরে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও মৃত্যু বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৫৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ড ছিল। সে তথ্য জানানো হয় গত ১৬ জুনের বুলেটিনে।
মঙ্গলবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৪৪৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৭ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৪৪ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪০ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৫ হাজার ১৪৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৫৪২ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ৬৩ হাজার ৮৬৬ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৮৩৪ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৯৯ হাজার ১৯৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬৪ হাজার ৬৬৭ জন।
ডা. নাসিমা বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ তুলে ধরেন। বিশেষ করে করোনার এই দুঃসময়ে গর্ভবতী মায়েদের করণীয় তুলে ধরা হয় বুলেটিনে।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়।
ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে। এছাড়া মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ লাখ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্রমেই বাড়ছে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।
পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইটওয়ার্ল্ডো মিটারের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ২১ হাজার ৪৯০ জনে। এছাড়া মারা গেছেন ৫ লাখ ৮ হাজার ৪১৯ জন।
আরও ভয়ঙ্কর দিন আসছে : করোনা মহামারি নিয়ে আবারও বড় ধরনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস। তিনি সোমবার বিশ্বের দেশগুলোকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে এবং সামনে আরও ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘সামনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এই রকম পরিবেশ ও অবস্থা বিরাজমান থাকলে, আমরা সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি।’
তার ভাষায়, ‘বিশ্বের সব ক’টি দেশের সরকারকে এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আগের মতোই পরীক্ষা, শনাক্ত, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা চাই চলমান পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটুক এবং প্রতিটি জীবন রক্ষা পাক। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, এ পরিস্থিতির অবসান হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, কিছু দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি হলেও মহামারির দ্রুত বিস্তার ঘটছে। তাই সামনের মাসগুলোতে বিশ্বের আরও বেশি সহনশীলতা, ধৈর্য ও উদারতার প্রয়োজন হবে।
ডব্লিউএইচও’র করোনা সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টেড্রোস বলেন,‘গত ৬ মাস আগে আমরা কেউই ভাবতে পারিনি, কীভাবে গোটা বিশ্ব এবং আমাদের জীবনকে মারাত্মক এক টালমাটাল অবস্থার মধ্যে ফেলে দেবে এই নতুন ভাইরাস।’
ওই সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বে করোনা মোকাবেলায় সফল দেশে হিসেবে জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের নাম উল্লেখ করেন ডব্লিউএইচও প্রধান। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর প্রতি উপরোল্লিখিত দেশগুলোর নীতি অনুসরণ করারও আহ্বানও জানিয়েছেন।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভয়াবহ সব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন টেড্রোস।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের ৫ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলের ১ কোটিরও বেশি মানুষ।


বিজ্ঞাপন