কর্মকর্তা-কর্মচারি কোটিপতি

অপরাধ আইন ও আদালত রাজধানী

অর্থ অভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে ডিএসসিসি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থ অভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রতিবছর এ করপোরেশনে বাজেট হয়। রাজস্ব আদায়ে টার্গেট হয় বাজার সালামি ও গৃহকর। কিন্তু টার্গেটের অর্ধেকও আদায় হয় না রাজস্ব। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অনেকেই এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিন্তু ডিএসসিসি চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার পদটি মূলত সরকারের উপ-সচিব পর্যায়ের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু ওই পদে নিয়মবহির্ভূতভাবে এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়ার পর থেকেই রাজস্ব আদায়ে চরমভাবে ধস নামে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসির মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার ও ইঞ্জিনিয়ার আসাদুজ্জামানকে চাকরীচ্যুতির মাধ্যমে নগরভাবনে চালান শুদ্ধি অভিযান। অফিসের প্রথম দিনেই তিনি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বা দায়িত্বে গাফিলতির বিষয়ে দুর্নীতি বিরোধী কমিটি গঠন করে দেন। নয় সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির সভাপতি ডিএসসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম। অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটি নিজেদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং গাফিলতির বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে সুপারিশ প্রদান করবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গত পাঁচ বছরের বাজেটের মধ্যে কিছু বছর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও বাজার সালামি ও গৃহকরের অর্থ আদায় করতে পারেনি। ২০১৯-২০ চলতি অর্থবছরেও বাজার সালামি থেকে ধরা হয়ে হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা। আর এ খাতে এখন পর্যন্ত আয় হয়েছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা। এ বছর গৃহকর খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজার সালামি খাতে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছিল ৩০৫ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ৬১ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে গৃহকর খাতে ধরা হয় ৩৩০ কোটি টাকা। আর আদায় হয়েছে ২১১ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজার সালামিতে ৩১৩ কোটি টাকা আয় ধরা হলেও আদায় হয়েছে ৫৩ কোটি টাকা। আর গৃহকর ৫১৫ কোটি টাকা ধরা হলেও আদায় হয়েছে মাত্র ১৮০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে বাজার সালামি খাতে আয় ধরা হয়েছিল ৬৫০ কোটি টাকা আর আদায় হয় ১০৫ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে গৃহকর খাতে আয় ধরা হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা, আর আদায় হয়েছে ১৯৫ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজার সালামি থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয় ১০০ কোটি টাকা, আদায় হয় মাত্র ১৫ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে গৃহকর খাতে আয় ধরা হয়েছিল ২৮৫ কোটি টাকা, আদায় হয় মাত্র ১৮০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজার সালামি থেকে আয় ধরা হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা আর আদায় হয় ৫৫ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে গৃহকর আয় ধরা হয়েছিল ২৭৫ কোটি টাকা আর আদায় হয় ১৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা মাত্র। ডিএসসিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া চালান তৈরি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসি) একটি ওয়ার্ডে গৃহকরের (হোল্ডিং ট্যাক্স) ৮২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬১ টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই অভিযোগে ইতিমধ্যে সংস্থাটির সাময়িক বরখাস্ত রেভিনিউ সুপারভাইজার ফাহিমুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ফাহিমুজ্জামান ডিএসসিসির রেভিনিউ সুপারভাইজারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএসসিসির অঞ্চল-৪-এর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্ব ছিল কর চালান বইয়ে করদাতার নাম, হোল্ডিং নম্বর, রসিদ নম্বর, তারিখ, কিস্তির পরিমাণ, টাকার পরিমাণ ইত্যাদি পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে জনতা ব্যাংক নগরভবন শাখায় ডিএসসিসির হিসাবে জমা দেওয়া। ফাহিমুজ্জামান ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে গত বছরের ২ মার্চ পর্যন্ত ৭৩৫টি চালানে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫৮৬ টাকা আদায় করেন। এর মধ্যে ৫৫৪টি চালানে ৯৬ লাখ ৯ হাজার ১৬২ টাকা ডিএসসিসির হিসাবে জমা দেন। অবশিষ্ট ১৮১টি চালানে আদায় করা ৮৮ লাখ ৭৮ হাজার ৪২৩ টাকা তিনি ভুয়া চালান তৈরি করে ব্যাংকে জমা দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। পরে দুর্নীতির বিষয়টি উদঘাটিত হলে ফাহিমুজ্জামান রসিদ বই নম্বর ১৪১৪-এর ৫২ নম্বর ও রসিদ বই ১৪৭৮-এর ১১টি রসিদের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৬৫ টাকা ডিএসসিসির তহবিলে জমা দেন। ওই টাকা বাদ দিয়ে তার আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬১ টাকা।
দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ফাহিমুজ্জামানের জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শুধু ৩১ নম্বর ওয়ার্ডেই নয়; ডিএসসিসির অন্যান্য ওয়ার্ডেও হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় ও জমা দেওয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থ আত্মাসাৎ হয়েছে। দুদক সেগুলো খুঁজে বের করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, সম্পত্তি বিভাগের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মাহবুবা খানমকে বদলি করা হয়েছে। একই সাখে অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. ইসহাককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত হলে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে জানান সাধারণ কর্মচারীরা। মো. ইসহাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি তহবিল তসরুপ ও প্রতারণা অর্থ আত্মসাতের। মো. ইসহাক ছিলেন, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিনের আস্থাভাজন ও অত্যন্ত প্রভাবশালী কর্মচারী। তাকে রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় কারপার্কিং সংক্রান্ত ইজারার মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর গত ১৭ জুন মাহবুবা খানমকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু এখনো মাহবুবা খানমের বদলিকৃত নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলে তাকে গ্রহণ করা হচ্ছে না।
নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসসিসির সাধারণ কর্মচারীরা জানান, সম্পত্তি বিভাগে দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে লাগামহীন দুর্নীতি, জালিয়াতি, কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ভয়াবহ ঘটনা। কোটি কোটি টাকার মালামাল অকশনের নামে পানির ধরে বাছাইকৃত কতিপয় লোকের কাছে বিক্রি দেখিয়ে নিজেরা লাখ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে যাচ্ছন।
এছাড়া ডিএসসিসির বিভিন্ন কাঁচাবাজ, কার পাকিংগুলো নাম মাত্র মূল্যে ইজারা দেয়া হচ্ছে। আবার কখনো খাশকালেকশনের নামে সামান্য কিছু টাকা ফান্ডে জমা দিয়ে পুরো টাকা নিজেরা ভাগাভাগি করছেন। প্রতি বছর ১৪ টি কোরবানী পশুর অস্থায়ী হাট ইজারার নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। গত ৪ বছরের দুর্নীতি জালিয়াতি, লুটপাট তদন্ত হলে, বিভাগীয় অনেকেই ফেঁসে যাবেন।
সাধারণ কর্মচারীরা জানান, গত বছরের কোরবানী পশুর হাট ইজারায় অংশ গ্রহণকারীদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেয়া বিভিন্ন ব্যাংকের ‘পে অডার’ আজো খুজে পাওয়া যায় না। এই ধরনের আরো অনেক বড় বড় চেক জালিয়াতির ঘটনা চাপা পড়ে রয়েছে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার দপ্তরে। ডিএসসিসির ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নগরীতে অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া ১৪টি কোরবানী পশুর হাটের ইজারার মূল নথি পত্র তদন্ত করলে মারাতœক জালিয়াতি, লুটপাট, সরকারি কোটি কোটি টাকা ভাগাভাগি ও আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
কারণ কর্মকর্তারা সময় মতো ইজারা না দিয়ে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাসহ একটি সিন্ডিকেট খাসকালেকশনের নামে অধিকাংশ কোরবানী পশুর হাটের কোটি কোটি আত্মসাত করেছে। নিজেরা বাঁচার জন্য নামমাত্র কিছু টাকা ডিএসসিসির ফান্ডে জমা দিয়েছেন। তবে নথিপত্র তদন্ত হওয়া প্রয়োজন রয়েছে।
উল্লেখ্য, ডিএসসিসির উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। একই রাস্তা পৃথক দুটি নামে ও আয়তন বেশি দেখিয়ে দুটি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এভাবে এক কাজের দুটি বিল করে ৭ কোটি টাকা ভাগাভাগির সব আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত করেছে ডিএসসিসির একটি চক্র। ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীদের এমন অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে বিগত সময়ে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাত সংস্কার এবং আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। সময় সংস্থা অঞ্চল-৫ এর ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিস্টিলারি রোড ও দীননাথ সেন বাইলেনের কোকা-কোলার গলির পাইপ, নর্দমা নির্মাণসহ রাস্তা ও ফুটপাতের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বিপরীতে তিনটি গ্রুপে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৪৫ নং ওয়ার্ডের পাইপ ও নর্দমা নির্মাণসহ রাস্তা ও ফুটপাতের উন্নয়ন কাজে দুটি গ্রুপে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিস্ট্রিলারি সড়কের ১০৭ নম্বর হোল্ডিং থেকে ২১/ঙ পর্যন্ত এবং ১২৬ নম্বর হোল্ডিং থেকে ১১৯/১৩ কাঁঠেরপুল পর্যন্ত রাস্তায় ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ কাজ। এ কাজের জন্য প্রাক্কলন ব্যায় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ১২৯ টাকা।
এমন অভিযোগ ওঠার পর তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে দুর্নীতির এই চিত্র উঠে আসে। এতে দেখা যায়, একই রাস্তার বিপরীতে দুটি কার্যাদেশ ছাড়াও আধুনিকায়নের জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে তাও প্রায় দ্বিগুণ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কাজের সর্বোচ্চ প্রাক্কলন ধরা যেত এক কোটি ২১ লাখ ৪৬ হাজার ১৮ টাকা। এতে অতিরিক্ত ২ কোটি ৭৭ লাখ ৫৪ হাজার ১১১ টাকা ধরা হয়েছে।
এছাড়া আরেকটি প্রকল্পে অনিয়ম ধরা পড়েছে। এটি ছিল নর্দমা নির্মাণ কাজ। এ কাজে ২০ শতাংশ প্রাক্কলন ও নকশার সঙ্গে বাস্তবের হোল্ডিং নম্বরের পুরোপুরি মিল নেই। এতে ৯৪/৭ থেকে ২৫/১ পর্যন্ত রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ২৩১ মিটার, যাকে ৩০০ মিটার হিসেবে ধরা হয়েছে। এ রাস্তার প্রস্থ ৪ দশমিক ৫ মিটার থেকে ৫ মিটার ধরা হয়েছে। বাস্তবে এর প্রস্থ ৩ দশমিক ৫ মিটার।
এছাড়া ১০৬/৭ দীন নাথ সেন রোড সংলগ্ন (পূর্ব-পশ্চিম) রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ১০০ মিটার। বাস্তবে এটি ৮৮ মিটার। ৩১৯ মিটারের পরিবর্তে নর্দমার দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৪০০ মিটার। এছাড়া ১৫ মিটার বালু ভরাট ধরা হয়েছে যার প্রয়োজন নেই। পুরো প্রকল্পটির প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ লাখ ১৩ হাজার ২ টাকা। তদন্তে দেখা গেছে, এটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪৮৪ টাকা ধরা যেত।
এছাড়া বিভিন্ন আইটেমের বাজারদর অনুযায়ী মোট প্রাক্কলন ব্যয় ৯৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ টাকার স্থলে ৯৫ লাখ ১৩ হাজার ২ টাকা ধরা হয়েছে। পুরো প্রকল্পে ৪৮ লাখ ৮ হাজার ৫১৮ টাকা বেশি ধরা হয়েছে।
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বস্থি ও নি:শ্বাস ফেলছে ভবনের সৎ ও পরিশ্রমি কর্মকর্তা কর্মচারিরা। পাশাপাশি চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে দুর্নীতিবাজরা। সাধারণ কর্মচারিরা এ প্রতিবেদককে বলেন, রাজস্ব, কর, পরিবহন ও আঞ্চলিক অফিসের প্রায় ৬০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারি অবৈধপন্থায় কোটিপতি হয়ে গেছেন। ঢাকায় রয়েছে তাদের নিজস্ব বাড়ি-গাড়ি ও জায়গা-জমি। সঠিক তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নাম।
দায়িত্ব গ্রহনের পরই নতুন মেয়রের এমন ‘মার মার কাট কাট’ সিদ্ধান্তে বেশ বিপাকে আছেন ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করে আসা বিতর্কিত কর্মকর্তারা আছেন বেশ দুশ্চিন্তায়। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমনটাই।
যদিও মেয়র তাপস আগেই বলেছেন, একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা যে ঢাকা গড়ে তুলতে চাই তার একটি দিক হলো সুশাসিত ঢাকা। সেই সুশাসিত ঢাকা গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে, প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের জন্য টাকা দিচ্ছেন কিন্তু দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। উইপোকারা সরকারের টাকা, প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সেদিক বিবেচনায় আমার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিলাম যে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কোনো উইপোকার জায়গা আমি রাখবো না। আমি বলেছিলাম দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবো। তারই প্রতিফলন ঘটেছে আমার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, যাদের অপসারণ করেছি তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ব্যাপক অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা চলমান থাকবে। এটা কোনো ব্যক্তি কেন্দ্রিক না। যেখানেই দুর্নীতি, যেখানেই সরকারের অর্থের অপচয় হবে, যেখানেই গাফিলতি-অবহেলা থাকবে সেখানেই আমরা কঠিন ব্যবস্থা নেবো। সিটি করপোরেশনকে তার ঐতিহ্যের জায়গায় নিয়ে যেতে হলে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।


বিজ্ঞাপন