নৌকার টিকেট পেতে তৎপর ব্যবসায়ীরা

রাজধানী রাজনীতি

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার আব্দুল্লাহপুর, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, তুরাগ, উত্তরা ও উত্তরখান এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ আসন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনটির উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরেই। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটির উপ-নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘরের মাঠ। নির্বাচনের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে নৌকার প্রার্থী হতে জোর তৎপর চালাচ্ছেন সম্ভাব্যপ্রার্থীরা। প্রার্থীদের মধ্যে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী ঘরানার বেশকজন ব্যবসায়ীর নাম আলোচনায় রয়েছে। অর্থাৎ আসনটির কা-ারি হতে মুখোমুখি হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তবে প্রার্থী যেই হোক, সেখানে মাঠের নেতাদের দেখতে চান আসনটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ইসি সূত্র মতে, চলতি আগস্ট মাসেই ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হতে পারে। স্থানীয় সূত্র মতে, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কে হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী। নৌকার প্রার্থী হওয়াকে বিজয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। যে কারণে সকলের নজর এখন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের দিকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসনটিতে এখন পর্যন্ত স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার স্থানীয় নেতাদের থেকে মনোনয়ন চান নেতারা।
এবারো মনোনয়নপ্রত্যাশা করছেন বেশকজন স্থানীয় রাজনীতিবিদ। তারা প্রত্যেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী। মাঠের এসব নেতাদের মধ্য থেকেই নৌকার প্রার্থী চান স্থানীয়রা। প্রয়াত সাংসদ সাহারা খাতুনের অসমাপ্ত কাজ তারাই শেষ করতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে। মাঠের নেতাদের মধ্যে মনোনয়নে দৌড়ে রয়েছেন— ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান, সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী আসলাম উদ্দিন, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন।
বৃহত্তর উত্তরার রাজনীতিতে দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে সক্রিয় আছেন হাবিব হাসান। ছাত্রলীগ হয়ে মূল দলের রাজনীতিতে তিনি খুবই জনপ্রিয়। এর আগেও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এ নেতা। এবারো মনোনয়নপ্রত্যাশা করছেন। জানতে চাইলে বিদায়ী কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান বলেন, তৃণমূলকর্মীদের ভালোবাসায় প্রার্থী হয়েছি। জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে মাঠে আছি। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী) সুযোগ দিলে সাহারা আপার বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবো। এসময় রাজনীতিবিদদের হাতেই আসনটি রাখার দাবি জানান এ নেতা।
আলোচনায় আছেন দক্ষিণ খান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন। দলে ত্যাগ, বিগত সময়ের উন্নয়ন এবং পারিবারিক ঐতিহ্য বিবেচনায় নৌকার কা-ারি হতে চান তিনি। প্রার্থীতার বিষয়ে এসএম তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমার বড় ভাই ২৭ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি ছিলাম ৭ বছর। গোটা এলাকা আমার পরিচিত। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছি। এখন নেত্রী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
তিনি আরও বলেন, যারা ব্যবসায়ী তারা তো দলের কর্মীদের চিনে না, এলাকার রাস্তাঘাটও চিনে না। তাদের দ্বারা উন্নয়নও হয় না, দলের সাথেও অনেক দূরত্ব থাকে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন— দলের কর্মীদের থেকে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হোক। দলের দু:সময়, তৃণমূলের মতামত এবং স্থানীয় রাজনীতিতে ভূমিকা বিবেচনায় নৌকার প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী আসলাম উদ্দিন।
হাজী মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের জন্য কাজ করেছেন। দলের দুঃসময়েও অনেক সম্মুখে থেকে লড়াই করেছেন। এলাকার সমস্যাগুলো তার জানা আছে। সে আলোকে কাজ করতে পারবেন। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার জানান, সাহারা খাতুনের মতো বড় রাজনীতিবিদ হতে না পারলেও তার মতো সৎ, দুর্নীতিমুক্ত ও দেশরতœ শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কর্মী হিসাবে মাঠে থাকতে চাই। দল মনোনয়ন দিলে সাহারা আপার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চেষ্টা করবো।
অন্যদিকে, আসনটির সংসদ সদস্য হতে তৎপর বেশকজন ব্যবসায়ী নেতা। আওয়ামী পরিবারের এ ব্যবসায়ী নেতাদের মনোনয়ন দিলে আসনের উন্নয়নে গতি বাড়বে বলে মনে করছেন সমর্থকরা। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন— বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী খসরু।
ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী খসরু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। এখন আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত কেসি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আসনে করোনা সংকটে নিয়মিত ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছেন। গোটা নির্বাচনি এলাকায় মানবিক কার্যক্রমে নজর কেড়েছেন এ নেতা।
জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী খসরু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারায় এ আসনকে একটি আধুনিক উন্নত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা নিয়ে দলের মনোনয়ন চাইবো। সবদিক বিবেচনা করেই দল এ আসনে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে। মনোনয়ন দৌড়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানের নামও রয়েছে জোর আলোচনায়। মন্তব্য জানতে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, আসনটির উপ-নির্বাচন অংশ নিতে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন