বিশেষ প্রতিবেদক : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৬ হাজার ৬২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ব্যয় করা হবে ২ হাজার ৭১ কোটি ১০ লাখ টাকা ও বৈদেশিক উৎস্য হতে প্রাপ্ত ঋণ সহায়তা ৪ হাজার ৫৯৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পগুলো নিয়ে ব্রিফিং করেন।
অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘মতলব-মেঘনা-ধনাগোদা-বেড়িবাঁধ সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প এবং ‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘সারা দেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত), খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ’ প্রকল্প।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনসহ আরও অনেকে। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সিলেট-তামাবিল সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মঙ্গলবার অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৩০০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৩৪০ কিলোমিটার চার লেন ব্যতীত সড়ক নির্মাণ, ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন বা পুনর্বাসন, ৭ হাজার মিটার ফ্লাইওভার বা ওভারপাস নির্মাণ, ১৪ হাজার ৮০০ মিটার সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ এবং ৬ হাজার ৮০০ মিটার সেতু বা কালভার্ট পুনর্নিমাণ।
‘সিলেট-তামাবিল সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে বিদেশ যাবেন ১৬ কর্মকর্তা। এদের প্রত্যেকের পেছনে খরচ হবে পাঁচ লাখ করে টাকা। এজন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া পরামর্শকের পেছনে যাবে ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তবে বিদেশ সফর নিয়ে কিছু না বললেও পরামর্শক ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর কথা বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেসমেন্ট ব্যংকের (এআইআইবি) ঋণ থেকে দুই হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ঋণের এ অর্থ পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ২৫ বছরের পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত সড়কের উভয় পার্শ্বে ধীর গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীত হবে। ফলে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল করিডোরের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন হবে। এছাড়া বন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে যাতায়াত সহজতর হবে। সেই সঙ্গে পর্যটন বিকাশের সুযোগ সৃষ্টিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, করোনাকালীন সময়ে প্রকল্প সমূহে অতিরিক্ত ব্যয় হ্রাসে খরচ কমিয়ে আনার জন্য বারবার তাগিদ দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপ্রয়োজনে বিদেশ সফর বাতিলের ব্যপারেও জোড় তাগিদ দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। তবুও প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করায় প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশ আমলে নেওয়া হচ্ছে না বেশির ভাগ প্রকল্পেই। সম্প্রতি একনেক সভায় উঠানোর আগে এমনেই একটি প্রকল্পের তথ্য প্রকাশ হওয়ায় এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সর্বত্রই।