অতি সহিষ্ণু ও সংগ্রামী রাজনতিক বাংলার অকৃত্তিম বন্ধু প্রণব মূখার্জী

জাতীয় সারাদেশ

নিজাম উদ্দিন খান নিলু : মানুষের নিজের ব্যক্তিত্ব ও আদর্শের বুনিয়াদ প্রধানত আলোকিত কোন মহাপুরুষেরই অনুকরণেই সূচিত হয়। শিক্ষাজীবন থেকেই অফুরাণ রাজনৈতিক জ্ঞান-অভিজ্ঞতা অর্জনের আকন্ঠ তৃষ্ণা থাকায় ও দেশ বিদেশের রাজনৈতিক মহীহষীকূলের জীবনাদর্শের প্রতি আমার আন্তরিক মোহ থাকায় যথাসম্ভব প্রিয় ও বরেণ্য মহাপুরুষগণের জীবনী পাঠ ও তাঁদের কার্যক্রমকে প্রতক্ষ্যভাবে চর্চার প্রচেষ্টা করতাম।
আমার ক্ষুদ্র এ জীবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ যে কয়েকজন কালজয়ীর পদযুগল স্পর্শ করার বাসনা হৃদয়ে জেগেছে তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে বাংলার অকৃত্তিম বন্ধুবর, ভারতের সদ্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জীর নামটি সে তালিকার অগ্রভাগেই ছিলো।
আমি খুব কাছ থেকে আমার নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখেছি, তাঁর বিমোহিত চেতনা, স্নিগ্ধ ও মমতাময় হাসিমাখা মুখখানি হৃদয়ে অন্তস্থ্য করে মমতার পরম স্নেহাবিষ্ট হবার সুযোগ পেয়েছি, প্রায় ততখানিই মোহিত- বিমোহিত ও পুলকিত হয়েছি মান্যবর প্রণব মূখার্জী মহোদয়ের স্নেহ পরশ প্রাপ্তিতে।


বিজ্ঞাপন

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের অত্যন্ত সফল ও সুযোগ্য ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জীর অতি সহিষ্ণু ও সংগ্রামী রাজনৈতিক কর্মজীবন সুদীর্ঘ ছয় দশকব্যাপী বিস্তৃত ছিলো। তিঁনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা। বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের সফল ও সুযোগ্য অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় দূরদর্শিতা সম্পন্ন অণ্যতম সমস্যা-সমাধানকারী নেতা।
সুচারু চেতনা ও বিরল রাজনৈতিক মেধাসম্পন্ন বরেণ্য এ রাজনৈতিক অভিভাবকের জন্ম ভারতে হলেও তিঁনি নিজের পারিবারিক বন্ধনের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন বাংলাদেশের মাটি বেঁয়ে নড়াইল জেলা অভ্যন্তরে। তিঁনি তাঁর বৃশ্চিক রাজনৈতিক জীবনের মাঝে আজীবনের ভালোবাসার সুগন্ধী পুস্পবৃক্ষ রোপন করেছিলেন নড়াইলের উর্বর এ মাটিতে। নড়াইলের মানুষের অকৃত্তিম হৃদয়ের শুভ্র ফুলের মালা গলে তুলে নেন – প্রণব মূখার্জী। তাঁর আজীবনের সুখ, দুঃখ, সংগ্রাম, প্রাপ্তীর অংশীদার করেণ আমাদের নড়াইলের মেয়ে শুভ্রা মুখার্জীকে।
নিঃচ্ছিদ্র ও কঠোর সাংগঠনিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচীর খানিকটা সময়কে ছেদ করে তিঁনি বেশ কয়েকবার নিজের প্রানের টানেই চলে এসেছেন বাংলাদেশে, রাষ্ট্রীয় কঠোর প্রটোকল গলিয়ে অতি সাধারণ একজন জামাই বেশে সস্ত্রীক আতিথিয়তা উপভোগ করছেন নিজ শশুরালয় নড়াইলে।
২০১৩ সালের ৫ মার্চ তিঁনি নড়াইলে তাঁর শশুরালয়ে পদধুঁলির মহেন্দ্রক্ষণে এ মহারথী অনণ্য মহাপুরুষের একান্ত সান্নিধ্য সহ তাঁকে বরণের আয়োজনের খনিকটা দ্বায়ীত্ব আমি পেয়েছিলাম, যা নিঃসন্দেহে আমার জন্য অনণ্য গর্বের এক অধ্যায়।
তিঁনি আত্মীয়তার স্নেহের ধারায় অতি সাবলীল ভাবে আমাকে নিজ সন্তানের আসনে ঠাঁই দিয়ে তাঁর সুবিশাল হৃদরাজ্যে নিমন্ত্রণ করেণ। মহাবীরের আন্তরিক নিমন্ত্রণে পরবর্তিতে বেশ কয়েকবার ভারতে তাঁর ও তাঁর সুযোগ্য সহধর্মীনি শুভ্রা মূখার্জীর সান্নিধ্য ও পরম আতিথিয়তার সুযোগ প্রাপ্ত হই।

হয়তো এমন একজন মহারথী, মহাবীরের অকৃত্তিমতা, মহানুভবতা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতার গোটা অধ্যায় ঘুরে আসা বা তাঁর ব্যক্তিত্বের একাংশও বর্ণনা করা আমার মতো অতি নগণ্যের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।

আজ তাঁর শোকাবহ মহা প্রয়ানে বিশ্ব সত্যিই একজন বিচক্ষণ, সুশাসক ও রাজেন্দ্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারানোর পাশাপাশি আমি নিজেও হারালাম আমার অতি প্রিয় ও শ্রদ্ধাবর একজন মহা-অভিভকবককে!

জীবনের একটি পর্বে প্রকৃতিক চারিত নিয়মেই হয়তো একজন প্রণব মূখার্জী নিজের দেহকেত্যাগ করেছেন, তবে তাঁর সংগ্রামী, কর্মচঞ্চল ও অফূরাণ অবদান- সফলতার মাঝে তিঁনি আদর্শের পতাকা উড়িয়ে ঐক্য, শান্তি ও স্নিগ্ধতার জানান দিতে থাকবেন- অনন্তকাল।

বিদায় হে কালান্তরের ক্ষণজন্মা কালজয়ী মহাপুরুষ জগৎবিজয়ী ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণের মহাধিকারী – প্রণব মূখার্জী।