ঝুঁকির মধ্যে বঙ্গবাজার

এইমাত্র রাজধানী

আদালতের রিটে মার্কেট ভাঙা ও মেরামত বন্ধ
ডিএসসিসি পূণ:নির্মানের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবাজার ঢাকার প্রাচীনতম এক পরিচিত বাজার। দেশের সকল এলাকার এবং বিদেশেরও অসংখ্য ক্রেতা প্রতিদিন ব্যক্তিগত ব্যবহার বা উপহারের জন্য তৈরি পোশাক কিনতে আসে এ বাজারে। যদিও বাজারটি অত্যান্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ বিক্রেতাদের। ক্রেতা-বিক্রেতার উভয়ের মনে নানান শঙ্কা কাজ করে সারাক্ষণ।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইতোমধ্যে বাজারে একটি সতর্কতামূলক ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে বঙ্গবাজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হলো’। অথচ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বাজারটি ভেঙে পূণসংস্কারের উদ্যোগ নিলে এক ব্যবসায়ির রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে ঝুঁলে আছে বাজার সংস্কার কাজ। একাধিক ব্যবসায়ি এ প্রতিবেদককে জানান, বাজারটি যেকোনো সময় রানা প্লাজার মতো ধসে পড়তে পারে অথবা অগ্নিকা-ের মতো ঘটনা ঘটলে বহু হতাহতের শঙ্কা থেকে যায়। তারপরও কেনো বাজার কমিটি এ বাজারটি পূণসংস্কারে উদ্যোগ নিচ্ছে না তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
এই বাজারটির ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৬৫ সনে বাজারটি নানা ধরনের খুচরা পণ্যের হকার ও ছোট দোকানদারদের ব্যবসায় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। সে সময় ফুলবাড়িয়ার এই জায়গাটি ছিল ঢাকার প্রধান রেলস্টেশনের একেবারে সংলগ্ন এবং এ কারণে বাজারটিও হালকা খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও স্যুভেনির বিক্রয়ের একটি আদর্শ স্থানে পরিণত হয়েছিল। বাজার গড়ে ওঠার বছর চারেকের মধ্যেই ফুলবাড়িয়া থেকে রেলস্টেশন কমলাপুরে সরিয়ে নেওয়া হলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংযোগস্থল বলে স্থানটির গুরুত্ব আগের মতোই রয়ে যায়। ফলে হকার ও অন্যান্য দোকানদার এই বাজার পরিত্যাগ না করে বরং এখানে স্থায়িভাবে থাকার ব্যবস্থা করে। তাদের অনেকেই আবার অবৈধভাবে অস্থায়ী টিনশেড তৈরি করে।
দেশে এবং বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবাজার এমনিতে যে পরিচিত অর্জন করেছিল তা আরও ব্যাপক হয় ১৯৯৫-এর একটি দুর্ঘটনার মাধ্যমে। ওই বছর এক বিশাল অগ্নিকা-ে গোটা বাজার ভস্মীভূত হয়ে যায় এবং ঘটনাটি পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশনে সবিস্তার প্রচারিত হয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এরপর বাজারটিকে নতুন করে গড়ে তোলে। এর মধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স এবং সুন্দরবন কমপ্লেক্স নামে দুটি দশ তলা বাজার ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। পরিকল্পনায় এদের প্রথমটি বঙ্গবাজার এবং দ্বিতীয়টি মহানগরী ও আদর্শ হকার্স মার্কেট-এর দোকানিদের জন্য নির্ধারণ করা আছে।
বাজারটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রাজধানীর এই মার্কেটটি। পুরাতন এবং ভঙ্গুর একতলা মার্কেটের ওপর কাঠ দিয়ে আরও দুইতলা বানিয়ে নিয়েছে মার্কেট কমিটি। কোনও প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই বাজারটির আয়তন বড় করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়িদের অভিযোগ। দূর্যোগ প্রতিরোধেও রাখা হয়নি বিশেষ কোনো ব্যবস্থা। বাজারের প্রবীন ব্যবসায়ি আব্দুর রহিম মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, অগ্নিকা- প্রতিরোধে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না রেখে অবৈধভাবে বাড়ানো হচ্ছে মার্কেটের আয়তন। মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত ভরের কারণে পাটাতনের কাঠ খসে পড়ার ঘটনাও শোনা যায়। এছাড়া মার্কেটের ভেতরে-বাইরে, ডানে-বামে ছড়িয়ে আছে গ্যাসের সিলিন্ডার। ফলে যেকোন সময় মার্কেটটিতে আরেকটি রানা প্লাজা বা চুড়িহাট্টার মতো ট্রাজেডি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
জানা গেছে, গত বছরের ৬ জানুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন মার্কেটটি ভেঙে পুননির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডারে অংশ নেয়া সর্বনি¤œ দরদাতাকে ওই বছরের ১০ এপ্রিল কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজার কমিটির প্রভাবশালী এক নেতার ইন্ধনে কয়েকজন ব্যবসায়ি এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে রিট করেন। ফলে থেমে যায় মার্কেট ভাঙা ও মেরামতের কাজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে সিটি কর্পোরেশন জায়গাটির মালিকানা পায় এবং ১৯৮৯ সালের মধ্যে পরিকল্পিত পাকা বিপণি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করে। নতুনভাবে তৈরি বাজারটির মোট আয়তন ২১,২৫০ বর্গফুট। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ এই পাঁচ বছরেই মূলত বাজারটি তৈরি পোশাকের বাজার হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বাজারটি বঙ্গবাজার নামে নিজ পরিচিতি অর্জন করলেও বস্তুত এখানে গুলিস্তান, মহানগরী ও আদর্শ হকার্স মার্কেট নামের অন্য তিনটি সংলগ্ন বাজারের দোকান একত্রে মিশেছে। এদের সীমানা এখন আলাদা করা দুরূহ।
দেখা গেছে, মোট ২,২০০ দোকানের জন্য বঙ্গবাজারের পরিসর অপ্রতুল বলে এর ভিতরে দোকানের সারিগুলি অপ্রশস্ত। অনেক সময় ক্রেতার ভিড়ে ভিতরটা হয়ে ওঠে অসহ্য। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতা ছাড়াও খুচরা ও পাইকারি ভিত্তিতে পোশাক সামগ্রী কেনার জন্য এখানে আসে ভারত, নেপাল, ভুটান, রাশিয়া, ইরান ইত্যাদি দেশের ব্যক্তি ও ব্যবসায়ি ক্রেতারা। বাংলাদেশে অবস্থিত অনেক দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত বিদেশিরাও এ বাজারে প্রায় নিয়মিত আসে। বাজার খুলা থাকা অবস্থায় অগ্নিকা-েরমতো ফের কোনো ঘটনা ঘটলে দেশি-বিদেশী প্রচুর মানুষের প্রাণের সংশয় থেকে যায় বাজারটিতে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদনের বাহিরে অবৈধভাবে ঘরে ওঠা দোকানগুলো ভয়ে আনতে পারে আরো বড় ধরনের বিপত্তি।
এসব বিষয়ে বাজার কমিটির সভাপতি জানান, মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ভালোবেসে আমাকে বারবার নির্বাচিত করেন। বঙ্গবাজার মার্কেটটি পুননির্মাণের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


বিজ্ঞাপন