সাহস সংগ্রাম নেতৃত্বে অবিচল

এইমাত্র জাতীয়

যতদিন বেঁচে আছি যেন সম্মানের

সঙ্গেই বাঁচতে পারি: প্রধানমন্ত্রী

 

বিশেষ প্রতিবেদক : নিজের ৭৪তম জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতদিন বেঁচে আছি সম্মানের সঙ্গে যেন বাঁচতে পারি। আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষের যেন উপকারই হয়, মানুষ যেন ভালো থাকে, সেই কাজটুক যেন করতে পারি। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, এই দেশটাকে যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে পারি। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, ওই টুকই আমার প্রচেষ্টা, আর কিছু না। নইলে বাবা-মা ভাই সব হারিয়ে রিক্ত নিঃস্ব হয়ে এই দেশে এসে কাজ করা, এটা খুবই কঠিন কাজ। তারপরেও শুধু একটা কথা চিন্তা করেছি যে দেশটাকে আমার বাবা এতো ভালোবেসেছেন, সে দেশের মানুষকে তাদের জন্য কিছু করে যেতে হবে। তার (বাবার) স্বপ্নটা যেন অপূর্ণ না থাকে, সেটা যেন পূর্ণ করতে পারি, সকলের সহযোগিতায় আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। হয়তো করোনাভাইরাস না আসলে আরও অনেক কাজ করতে পারতাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত বাধা বিঘœ আসুক সেটা অতিক্রম করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের আছে। এজন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সকলের কাছে দোয়া চাই যেন যতদিন বেঁচে আছি, যেন সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারি। আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষের যেন উপকারই হয়, মানুষ যেন ভালো থাকে সেই কাজটুক যেন করতে পারি।
সাহস সংগ্রাম নেতৃত্বে অবিচল : মহামারি কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যবস্থা। বৈশ্বিক এ মহামারির নিদারুণ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। অথচ এমন ঘোর অমানিশার মাঝেও আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন তিনি। তিনি-ই সম্প্রতি রিজার্ভ ও রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়ার খবর দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মহামারিকালে জরুরি ভিত্তিতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে। একইভাবে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভ ও রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ প্রণোদনা প্যাকেজ মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই বিচক্ষণতার প্রকাশ।
বাংলাদেশের এমন অর্জন আর উন্নয়নের গল্প এখন হাজারও। বিশেষ করে এক যুগ ধরে অগ্রযাত্রার মোড়কে যে বাংলাদেশকে চিনছে বিশ্ব, তার কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোজ বুনন দিচ্ছেন এমন স্বপ্নকথার। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্ব নেতারাও। বিজয়ের কেতন উড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বয়সের ফ্রেমে সোমবার ৭৪ বছরে পা রাখছেন বঙ্গবন্ধুতনয়া রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পরিণত বয়সে এক পরিণত বাংলাদেশের রূপও দেখছে মানুষ।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল। জাতির ক্রান্তিকাল। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হলেও বিদেশে থাকার কারণে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।
এমনই ক্রান্তিকালে দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত থাকার পর জীবনবাজি রেখে বাবার হাতে গড়া দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। শত প্রতিকূলতা আর জীবনবিনাশী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা এগিয়ে চলছেন এক অদম্য গতিতে। যেন তার হাতেই আজ পাঁচ দশকের বাংলাদেশ অধিক নিরাপদ, নিশ্চিত নির্ভার।
প্রত্যাবর্তনের দিন বিমানবন্দরে নেমে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আজ আমি এসেছি বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে। আমার আজ হারানোর কিছু নেই।’ দেশে তখন গণতন্ত্রের বদলে সামরিক শাসন। সামরিক শাসনের এমন দিনে শেখ হাসিনা এসেছিলেন মুক্তির দিশারী হয়ে। আঘাত করলেন গণতন্ত্রের বদ্ধ দুয়ারে। হাল ধরলেন, বাবার হাতে তিল তিল করে গড়ে ওঠা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।
দায়িত্ব পেয়েই বাবার দেখানো পথে দলকে পুনর্গঠন করতে থাকেন শেখ হাসিনা। দলের মধ্যে একক নেতৃত্বে অবস্থান করেন তিনি। দীর্ঘ সংগ্রাম আর আন্দোলনের পর তারই নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষামতায় আসে। দলের সভাপতি পদে থেকেই প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের পর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও নিজেদের ভুল শুধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ফের গণমানুষের দলে রূপ নেয়।
১/১১-এর পর মাইনাস টু-ফর্মুলায় শেখ হাসিনাকে দল থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। কিন্তু দলের প্রতি আনুগত্য এবং তৃণমূলের নিরঙ্কুশ সমর্থন থাকায় শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার হাতেই দলের দায়িত্ব থেকে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিশাল সংগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা হন তৃতীয় মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী।
ধারাবাহিক নেতৃত্বে শেখ হাসিনা আজ সরকারের মধ্যে যেমন অধিক শক্তিশালী, তেমনি দলের মধ্যে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সুদিনে সবাইকে পাশে নিয়ে আর দুর্দিনে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বন্ধুর পথে এগিয়ে চলছেন।
সংগ্রামের এ পথচলায় বহুবার হামলার শিকার হয়েছেন শেখ হাসিনা। সাড়ে তিন যুগের রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্য মামলার আসামিও হতে হয়েছে তাকে। গ্রেফতার হয়েছেন একাধিকবার। তবুও যেন ইস্পাতসম মনোবল। এমন মনোবল নিয়েই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসায় বিশ্বনেতারা। নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়।
বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সীমান্ত চুক্তি আর সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি ছিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের দুটি বড় অর্জন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা আজ বিশ্ব স্বীকৃত। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে শেখ হাসিনা আজ আপসহীন নেতা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েও বিশ্বনন্দিত তিনি।


বিজ্ঞাপন