নিজস্ব প্রতিবেদক : জঞ্জালে পরিণত হওয়া রাজধানীর ঝুলন্ত তার অপসারণে সিটি করপোরেশন জোরালো পদক্ষেপ নিলেও তাদের সে উদ্যোগ বার বার ভেস্তে যাচ্ছে ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন সেবা ব্যবসায়ীদের কারণে।
নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, এই তার সরানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সেবা সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হচ্ছে। কিন্তু কাজ হয়নি। অগত্যা সম্প্রতি ঝুলন্ত তার অপসারণে অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এসব অবৈধ তার অপসারণের পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের এ অভিযানের প্রতিবাদে গত ১৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করেন ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। এসময় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, ‘যদি আমাদের দাবি পূরণ না হয় এবং ডিএসসিসি আগামীকালের মধ্যে ঝুলন্ত তার অপসারণ থেকে সরে না আসে, তাহলে আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে সব ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সেবা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে বন্ধ রাখা হবে।’
এরপর গত ১৮ অক্টোবর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও কেবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তার কাটার বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়।
বৈঠকের পর মেয়র তাপস বলেন, ‘দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে রাস্তায় কোনো ঝুলন্ত তার আজকের পর থেকে কাটা হবে না। আমাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারা নিজ খরচে মাটির নিচ দিয়ে তারের সংযোগ নেবেন এবং সেইসাথে উপরে ঝুলন্ত তার সরিয়ে ফেলবেন। আর এটা আগামী নভেম্বরের মধ্যেই তারা শেষ করবেন বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে নিতে রাস্তা খোঁড়ারও অনুমতি দেয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘বিনা খরচে, অর্থাৎ বিনামূল্যে আমরা সেটা করার সুযোগ তাদের দিচ্ছি। আমাদের মধ্যে কিছু দ্বিমত ছিল, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে সব রকম ছাড় দিয়েছি। এমন কি সড়ক খোঁড়ার পর মেরামতের কাজও আমরাই করে দেব।’
সে সময় নভেম্বরের মধ্যেই তার অপসারণ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছিলেন আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম।
বক্তব্যের ১৩ দিন পর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি বলছেন, বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে শুধু রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ঝুলন্ত তার অপসারণ করা সম্ভব। এরপর ডিসেম্বরে বলা যাবে, পুরো নগরের তার অপসারণে কী পরিমাণ সময় লাগবে বা খরচ কেমন হবে।
রোববার বিকেলে এম এ হাকিম বলেন, ‘আমরা তারগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড করব। সেই কাজ চলছে। আমরা নভেম্বরের মধ্যে ধানমন্ডি এলাকাটা ঝুলন্ত তার মুক্ত করে ফেলতে পারব।’
নভেম্বরের মধ্যে পুরো নগরের তার অপসারণ সম্ভব কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেকোনো টেকনিক্যাল লোকও বলবে এটা সম্ভব নয়। নন টেকনিক্যাল লোকও বলবে এটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বয়স ৫০ বছর। এই সময়ে যে আবর্জনা হয়েছে, কেউ যদি বলে এটা ৩০ দিনে সমাধান করব, সেটা আলাদীনের চেরাগ ছাড়া সম্ভব নয়।’
এম এ হাকিম বলেন, ‘আমরা দুই সিটির তার সরিয়ে নিয়ে কাজ করছি। দুইটা দুই মডেলে করা হচ্ছে। খরচটা আমরা আমাদের পকেট থেকে নতুন করে ইনভেস্ট করে দিচ্ছি।’
এ কাজে কি পরিমাণ সময় লাগবে এবং কত খরচ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দুটি প্রশ্নেরই উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। কাজ শুরু করলে একটার পর একটা সমস্যা সামনে আসে। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে যেটুকু কাজ করতে পারি, তখন বোঝা যাবে ঢাকা সিটি পুরোটা করতে কত সময় লাগতে পারে কিংবা কি পরিমাণ খরচ হতে পারে।
বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে করপোরেশনের সঙ্গে বোঝাপড়া কেমন হবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যখন দেখবে এটা যৌক্তিক সময়ে এগোচ্ছে, আমার মনে হয় না মেয়র মহোদয় এটাতে নেগেটিভ কিছু বলবেন।’
ঝুলন্ত তার মাটির নিচে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলা অবস্থায় সেবা গ্রহীতাদের সেবা পেতে কোনো সমস্যা হবে না বলেও জানান এই ইন্টারনেট ব্যবসায়ী।