নানা সঙ্কটেও সাফল্য

এইমাত্র জাতীয়

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর

 

বিশেষ প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে সারাবিশ্ব। এর ফলে অর্থনীতি, শিক্ষা, শিল্প, স্বাস্থ্য সকল ক্ষেত্রেই মানুষ বিপর্যয়ের সম্মুখিন। এতসব সঙ্কটের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (এইচইডি) দেখিয়েছে বড় এক সাফল্য। করোনাভাইরাস আক্রান্তের চিকিৎসায় দেশে-বিদেশে ব্যপক আলোচিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নির্মিত দেশের বৃহত্তম হাসপাতাল। ফিতা কেটে ২০১৩ শয্যার এই হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বসুন্ধরার কাছ থেকে আইসিসিবি’র সকল স্থাপনা বুঝে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দিতে গত ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (এইচইডি)। জনবল নিয়োগসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৭ মে চিকিৎসাসেবার জন্য খুলে দেয়া হয় হাসপাতালটি। করোনায় লকডাউন থাকায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনতে দেরি হওয়ায় অতিরিক্ত আরো ১৫ দিন লাগলেও প্রায় একমাসের মধ্যে ২০১৩ শয্যার একটি হাসপাতাল তৈরি করে নজির স্থাপন করলেন এইচইডি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ২০১৩ শয্যার এই আইসোলেশন সেন্টারটি দেশের সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টার। এছাড়া এখানে অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনসহ ৭১ বেডের আইসিইউ প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। প্রয়োজন হলেই রোগীকে আইসিইউ সেবা দেওয়া যাবে। এত বড় একটি হাসপাতাল করার সুযোগ করে দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ ও নির্মানকারি প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ। এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথমে ৫০০ রোগীর চিকিৎসার জন্য জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। রোগীর ওপর ভিত্তি করে পরে আরও ৫০০ রোগীর জন্য জনবল নিয়োগ করা হবে। এভাবে ধাপে ধাপে বাকি শয্যাগুলোর জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মোল্লা এ বিষয়ে বলেন, এ হাসপাতালটি স্থাপন করতে বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে আমরা সব ধরণের সহযোগিতা পেয়েছি। এখানে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল একটা ওয়াশিং প্লান্ট। কারণ, ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর কাপড়-চোপড়, বিছানার চাদর হাতে ধোয়ার নিয়ম নেই। এজন্য একটা ওয়াশিং প্লান্ট বিদেশ থেকে আনা হয়। বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এটা আনতে দেরি হচ্ছিল। এছাড়া এতবড় স্থাপনা করা হয়েছে, এখানে সবসময় কিছু না কিছু কাজ থাকবে। বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে, এসির সমস্যা হতে পারে। এজন্য চিকিৎসা চলা থাকাকালীন আমরা প্লাম্বার, ইলেক্ট্রিশিয়ান সব ধরণের লোক এখানে রাখব।
তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে হবে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)।
জানা গেছে, বাংলাদেশের নিভৃত পল্লীর জনগণসহ আপামর জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা তথা স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য উইং এর অধীনে ১৯৭৪ বিল্ডিং প্ল্যানিং এন্ড ডিজাইন ইউনিট (বিপিডিইউ) এবং পরিবার পরিকল্পনা উইং এর অধীনে ১৯৭৯ সালে কনষ্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট সেল (সিএমসি) নামে দুটি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট/সেল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ৪র্থ জনসংখ্যা এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় ১৯৯১ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, গতিশীলতা ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিপিডিইউ এবং সিএমসি’কে একীভূত করে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ইউনিট (সিএমএমইউ) শীর্ষক প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ০১ জানুয়ারি ১৯৯৭ খ্রিঃ তারিখ হতে সিএমএমইউ এর ৩৮৬ টি পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হয়।
মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কর্মপরিধি বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কাজে গতিশীলতা আনয়নের স্বার্থে এবং সরকারের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়), অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সচিব কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-স্বাপকম/নির্মাণ/ঐঊউ-২৭/০৩ (অংশ)/১০২, ২২ মার্চ, ২০১০ এর মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে মন্ত্রণালয়ের অধীন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ইউনিট (সিএমএমইউ) কে সংযুক্ত দপ্তর (অঃঃধপযবফ উবঢ়ধৎঃসবহঃ) হিসাবে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা ঐবধষঃয ঊহমরহববৎরহম উবঢ়ধৎঃসবহঃ (ঐঊউ) এ উন্নীত করা হয়।


বিজ্ঞাপন