নকল ও ভেজাল ওষুধ বাজারজাতে কারসাজী

সারাদেশ স্বাস্থ্য

 

আজকের দেশ ডেস্ক : দেশের ওষুধ শিল্পে তালিকাভুক্ত ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল কোম্পানীর মধ্যে বগুড়ায় ৩৪টি কোম্পানী থাকলেও ৪/৫টি কোম্পানী মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করছে বলে জানা গেছে। বাকীগুলোর অবস্থা রমরমা একমাত্র নকল-ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ বাজারজাতের কল্যাণে। বিশেষ করে, রেমেক্স ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, কিউব ফার্মাসিউটিকাল ইউনানী, প্রিভেন্টিস বাংলাদেশ ইউনানী, নিকো আয়ুর্বেদিক, জনতা ড্রাগ ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, কনফিডেন্স ফার্মাসিউটিকাল আয়ু, আরকে ইউনানী, এডল্যাব ফার্মাসিউটিকাল আয়ু, ইউনিজেম ফার্মাসিউটিকাল ইউনানী, ফেয়ার ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস ল্যাব: ইউনানী, বিজি ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, পিএম ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, নিরাময় ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ফার্মাজেম ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, রেডরোজ ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ইউনিকেয়ার বাংলাদেশ ইউনানী, ইউনিয়ন ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, উত্তরা ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, এমী ল্যাবরেটরিজ আয়ু, ইষ্টল্যান্ড ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, লিবারেট ল্যাবরেটরিজ আয়ু, দি ওরিয়েন্ট ল্যাবরেটরিজ আয়ু অন্যতম। তথ্য সূত্র দৈনিক সকালের সময়।
রেমেক্স ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর জেলরেক্স, নুজাভিট-প্লাস, জিনক্যাপ, আমরেক্স, ইরোক্যাপ, মেনোসেফ, ভিক্যাল-প্লাস, লিউসেইফ, ইরোক্যাপ, কনেক্স, ট্রুগ্রেইন, ম্যাফাক্যাল, নিমটেক্স, ফেরোভাল, জাইভেন, আইপোমেট ও রেনসিড ওষুধ উৎপাদনে ক্ষতিকারক উপাদান ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। গত ০৩/০৪/২০১৯ইং তারিখ বগুড়ায় সাত মাথার খান মার্কেটের ৪র্থ তলায় কোম্পানীর গোডাউনে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে সাত লাখ টাকা মূল্যের যৌনবর্ধক ওষুধ ও অবৈধ্য ফুডসাপ্লিমেন্ট জব্দ করেন। তাছাড়া বিএসটিআইর লোগো লাগিয়ে শ্যাম্পু ও সাবান বিক্রির অভিযোগে গোডাউন সিলগালা করে জরিমানা করেন। তারপরও রেমেক্স ল্যাবরেটরিজ পুরানো ব্যবসার কারসাজী এখনো বন্ধ হয়নি। ফেয়ার ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর ৭টি ওষুধ জেনেরিক নামে অনুমোদন থাকলেও ট্রেড নামে বাজারজাত করছে এসিভিট, এ্যাকটিভিট, ফেবিটন, ফাইলেক্স, ফিউমা, সেব-প্লাস, জিনসিন-এফ, নিশাত-এফ, পিওর-৩০, সাইট্রিনা, কাইলোসিন, ফাইলেক্স, জিজিটন, নিমটেক্স, মোকাব্বি ও আইরোফেন সিরাপ। কোম্পানীর মাজুন সুপারী প্যাক সেমিসলিড হলেও লিকুইড হিসেবে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া ক্যাপসুল-ট্যাবলেট উৎপাদনের অনুমতি না থাকলেও ভিটামিন ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। জিনসিন-এফ, নিমটেক্স, ফাইলেক্স, আতফাল, নিশাত-এফ, পাওয়ার-৩০, একটিভিট, ফেভিটন, সেব-প্লাস এর অনুমোদন না থাকলেও প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। গত ১৩/১১/২০২০ইং তারিখ বগুড়া জেলা মেজিষ্টেড ফেয়ার ল্যাবরেটরীজের কারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকার অবৈধ ও ভেজাল ওষুধ জব্দ করে ৩০ হাজার টাকা জরিমান করেন। ইতিপূর্বে সাবেক ড্রাগ সুপার ইকবাল হোসাইন প্রায় ১ লাখ টাকার অবৈধ ওষুধ জব্দ করে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন। মালিকানা পরিবর্তন ও নবায়নবীহিন কোম্পানীর কারখানা সিলগালা না করায় স্বঘোষিত কোম্পানীর মালিক বেলাল হোসেন ভেজাল ব্যবসায় এখনো সক্রিয়। কিউব ফার্মাসিউটিকাল ইউনানীর নাম ও প্রডাক্টের নাম ড্রাগের ওয়েব সাইটে না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি বাজারজাত করছে কিউভিট-প্লাস, এক্সেল-পাওয়ার, এ-টু-জেট ভিটামিন, আমলা-১০, ভিগার, গ্যাস্টোলিন, ভিডাপেক্স, কিউ-ফ্লাম, ক্যাল-কিউব, জিনসিন, হাব্বে নিশাত, দিনার, কিউ-নুকরা, কিউ-রাল জি, কুড়চি ও কিউ-প্রোফেরন। প্রতিটি ঔষধের লেবেল-কার্টনে হারবাল ভিটামিন, মিনারেল ঔ এ-টু-জেড লাগিয়ে বাজারজাত করছে। আর কিউভিট-প্লাস ও জিনসিন-এ ভিটামিন এ ও সি অভাবজনিত রোগের শ্লোগান দিয়ে যৌনবর্ধক ওষুধ বিক্রি করে আসছে। ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস ল্যাবরেটরিজ ইউনানী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইউ-প্লেক্স, আমলা, এনার্জী-গেইন, তুলশী, ম্যাক্স-গোল্ড বিক্রি করলেও এসব ওষুধ ট্রেডনামে অনুমোদন নেই। এমনকি ড্রাগের ওয়েব সাইটে কোম্পানীর নাম ও প্রডাক্টের নামের তালিকা না থাকলেও ২০ প্রকারের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিজেম ফার্মাসিউটিকাল ইউনানীর বাজারজাত করা ইনোভিট-গোল্ড, ইউনিফেরন, জিনজেম-জিনসিন, স্টামিনা-৩,সেফজেম, ইউনিফোর্ট, ইউনি-এক্স, রুচিক্যাপ ও ইউনিক্যাল-ডি, নামের ঔষধে ক্ষতিকারক উপাদান মেশানোর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, ইউনিড্রাগ ইউনানীর ইউনি-লাহাম ও ইউনিফেরন নামের ২টি ওষুধ নকল করে বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি নাকি সবার আগে এই ঔষধের অনুমোদন নিয়েছে। ড্রাগের ওয়েব সাইটের তালিকায় প্রডাক্টের নাম না থাকা প্রসঙ্গে জানা গেছে, ইউনিকেয়ার ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর নামে প্রস্তাবনা আবেদিত হলেও প্রডাক্টের তালিকা আপগ্রেড করা হয়নি। জনতা ড্রাগ ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর বাজারজাত করা ইউরোটিন, ইউনিটন, জে-ফেম, এক্সটাপ্লেক্স, ফেরিরন, হানিলেক্স, অস্টোডি, হার্টেক্স, স্পীরুলীনা, মিল্ক-থিসল জিনসিং ঔষধের ছবি অনলাইনে প্রচার করে ডিলার নিয়োগ ও ওষুধ বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন কোম্পানীর এমপিও পারভেজ ও আরিফ। এ ধরনের অনলাইন প্রচারনা ড্রাগ আইন বহির্ভূত অপরাধ। নিকো আয়ুর্বেদিক ল্যাবরেটরিজের বাজারজাত করা নিকোরোক্স-ডিএস, লিভোরিস্ট, নিকোফেম, ইনোমেট, নিকো-জিংক, নিকো-প্লেক্স, নিকোডেক্স ও ফিভাবিল নিয়ে নানা ধরনের বির্তক উঠেছে। ইউনিয়ন ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর নিজস্ব প্রেস থাকায় বগুড়ার অধিকাংশ কোম্পানীর নকল লেবেল-কার্টন ছাপিয়ে দিতেন। পরবর্তীতে র‌্যাব ও ডিবির অভিযানে অনৈতিক কর্মকান্ড বেরিয়ে আসায় এখনার অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত নয়। তবুও ইউনিফেরন, ইউনিসেব, ইউনিপেপ, ইউনিকফ, ইউ-জয়েন, লিভাটন বাজারজাত করছেন তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এসব ঔষধে ক্ষতিকারক উপাদান মেশানোর অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে এডলাব ফার্মাসিউটিকাল আয়ুর ট্রেড নামের অনুমোদন না থাকলেও বাজারজাত করছে সিনোভিট-এ, জুম-এক্স, ইরোফোর্ড, এম-ট্যাব, ভিম্যাক্স-এন, এক্সকোর নামের ওষুধ। অপরদিকে রেড রোজ ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগে সাবেক ড্রাগ সুপার শফিকুর রহমান কারখানা সিলগালা করার পর প্রায় ৩ বছর যাবৎ মালিকানা পরিবর্তন ও নবায়ন ছাড়াই ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। বর্তমানে রংপুর ও দিনাজপুরে যেসব ওষুধ বিক্রি করছে তার অধিকাংশ ওষুধ ট্রেড নামের অনুমোদন নেই। এখন নাকি নতুন কারখানা করে বগুড়া ড্রাগ অফিসের সহকারী সাইফুলের সহায়তায় আগের মতই কারসাজী চালিয়ে যাচ্ছে। কনফিডেন্স ফার্মাসিউটিক্যাল আয়ুর কারখানায় অবৈধ মালামাল উৎপাদন করে কারখনার পাশে বাসার বেডরুমে রেখে সারাদেশে বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। বিজি ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, ইষ্টল্যান্ড ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, পিএম ল্যাবরেটরীজ ইউনানী ও প্রিভেন্টিস বাংলাদেশ ইউনানী একইভাবে নকল ভেজাল ও অনুমোদনহীন ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতে সক্রিয় রয়েছে। বগুড়ায় অনেক ড্রাগ সুপার আসা-যাওয়া করলেও অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ এখানে অবস্থান করায় নকল-ভেজাল ওষুধ কোম্পানীর সাথে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দূর্নীতিবাজ সাইফুলকে রংপুর বদলী করলে সাবেক একজন মহাপরিচালকের শ্বশুরবাড়ী গাইবান্ধা হওয়ার সুবাধে বদলি ঠেকিয়ে বগুড়া থাকতে সক্ষম হয়। তার অবৈধ আয়ের অর্থ দিয়ে বগুড়ার মালতীনগরে স্ত্রীর নামে বাড়ী ও গাইবান্ধায় কয়েক বিঘা জমির মালিক হওয়ার পাশাপাশি ইষ্টল্যান্ড ল্যাবরেটরীজের একজন অংশীদার। এখন বিভিন্নভাবে বর্তমান ড্রাগ সুপারকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের সেইফ গার্ড হিসেবে সক্রিয় থাকায় র‌্যাব ও ডিবির চোখের আড়ালে ভেজাল ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। মাঝে মধ্যে ড্রাগ সুপার অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করলেও অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে নকল-ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ ব্যবসায়ীর তালিকায় বগুড়া এখনো শীর্ষে রয়েছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ফুট সাপ্লিমেন্ট ও ফ্রুট সিরাপ উৎপাদন করে অসাধু ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। অফিস সহকারী সাইফুলের কল্যাণে ভেজাল ব্যবসায়ীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেহেতু সাইফুলের বিরুদ্ধে প্রচলিত নিয়মে ব্যবস্থা নিলে অভিযুক্ত কোম্পানীর অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাছাড়া এমনো কিছু কোম্পানী রযেছে যারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ ব্যবসাকে বৈধ বানিয়ে মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছে। উল্লেখ্য এসব কোম্পানীর ওষুধ বগুড়া অঞ্চলে বিক্রি না হলেও নওগা, খুলনা, চিটাগাং, সিলেট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও নারায়নগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বগুড়ার সচেতন ওষুধ ব্যবসায়ীরা ড্রাগ প্রশাসনের মহাপরিচালকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।


বিজ্ঞাপন