মোস্তাফিজুর রহমান : দুজনের কথোপকথনের সারমর্ম যখন সাদৃশ্য খুজে পায়, তখন এক অন্যের প্রতি মানসিক দুর্বলতার শিকার হয়। দুজনের অনুভূতির নির্যাসে ভালবাসার আনুপাতিক হার কমবেশী থাকলেও উভয়ের অনুভূতির সুক্ষ কীটেরা ভাবাবেগকে কুড়েকুড়ে খায়। কেউ ফুটিয়ে তুলে আবেদনের ভাষাকে খোলসা করে, কেউবা সুপ্ত বাসনায় সান্নিধ্যে পেতে চায়। শুরুটা খুব সুনিপুণ ভাবে সংঘটিত হলেও ক্রমান্বয়ে তিক্ততাগুলোর বংশবৃদ্ধি হয় । উভয়ের নিছক কিছু পছন্দের অমিল নিয়েই হৃদয়ের স্ক্রিনে ছোট্ট ছোট্ট আচড় লেগে ভালবাসার অনুভূতির কীটগুলো লজ্জাবতীর মতো নিজকে সংকুচিত করে নেয়। এতটুকুর মধ্যেই ভালবাসার স্মৃতিগুলো অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে সর্বনাশার জাল বুনে ফেলে।
কাউকে সহজেই কাছে টেনে নেওয়া সহজ কিন্তু তার ইচ্ছাশক্তি, পছন্দ ও ভালবাসার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য প্রত্যয়ী হতে হয়। ছেলেবেলার পুতুল খেলার মতো ভাঙ্গাগড়ার সংস্কৃতিতে উদ্দুদ্ধ হয়ে অন্যের মর্যাদা রক্ষা করাটা কঠিন বিধায় আমরা ভালবাসার নদীকে খরস্রোতা হারানোর মতো ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠি। হৃদয়ের ক্ষতচিহ্নগুলো মুছে দেওয়ার জন্য অয়েন্টমেন্ট নয়, একমাত্র প্রতিষেধক হলো মর্যাদার স্থিতিশীলতা।
ভালবাসার মুক্ত বিহঙ্গে উড়ার অভিলাষে আমরা অনেকেই আগ্রহী কিন্তু অন্ধত্ব বরণ করে অন্যের হৃদয়ের গভীরে মর্যাদাশীল হয়ে কতটা বিচরণ করা সম্ভব, এটাই সুক্ষ বিবেচনার বিষয়। সাইলেন্ট রেসপেক্ট হলো ভালবাসাকে প্রগাঢ় করার অন্যতম প্রধান রসদ। সম্পর্ক হয়তো ভেঙ্গে যায়, কিন্তু হৃদয়ের ক্ষতগুলো নিয়ে অনাদিকাল বয়ে বেড়াতে হয় ভিকটিমকে। সম্পর্কের বন্ধনে দলিলাদী নেই সত্য কিন্তু দায়বদ্ধতা বলতে যতটুকু আছে, সেটার অস্তিত্ব রক্ষা করাটাই হলো ভালবাসা। আপেক্ষিক এই মন লেনাদেনার খুদ-কুটাকে পরম মমতা দিয়েই আটকে রাখতে হয়। ভালবাসার খুদ কুটাগুলো যেন চড়ুই পাখিরা ভক্ষণ করতে না পারে সে দিকেই যত্নবান হলেই ভালবাসার জয়জয়কার, নতুবা ভালবাসা শব্দটি ঘৃনাভরেই হৃদয়ে স্থান করে নেয়।
ভালবাসার কুরুক্ষেত্রে হেরে গিয়ে অন্যকে ধিক্কার দেওয়া যায়, গগনচেরা আর্তচিৎকারে কারো বুকে নতুন করে কম্পন ধরানো যায় কিন্তু ভিকটিমের ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের জীবানুগুলোকে স্তিমিত করে দেওয়ার সক্ষমতার কথা একবার হলেও ভাবা দরকার। অভিযোগের তীরটি নিজের হৃদয়ে ছুড়ে দেখুন, রক্তক্ষরণ হয় কি না? ভালবাসা শুধু বিরহ দেয়না প্রশান্তিও দেয়, যদি পরম মমতায় আগলে রাখা যায়।