আমদানীকৃত পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি

অর্থনীতি

এ কে এম মাহবুবুর রহমান : শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা, ২০০০ অনুযায়ী আমদানীকৃত পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি নিম্নরূপ:
১। Transaction Value (বিনিময় মূল্য)
২। Value of Identical Goods (অভিন্ন পণ্যের বিনিময় মূল্য)
৩। Value of Similar Goods (সমতুল্য পণ্যের বিনিময় মূল্য)
৪। Deductive Value (অবরোহী মূল্য)
৫। Computed Value (হিসাবকৃত মূল্য)
৬। Fall back method (অন্যান্য পদ্ধতি)


বিজ্ঞাপন

☘ Transaction Value (বিনিময় মূল্য): আমদানিকৃত পণ্যের বিনিময় মূল্য বলতে উক্ত পণ্য বাবদ পরিশোধিত বা পরিশোধযোগ্য প্রকৃত মূল্যকে বুঝাবে। বিনিময় মূল্যের স্বপক্ষে বিধি ১১ অনুযায়ী আমদানীকারক আমদানিকৃত প্রতিটি পণ্যের বিপরীতে মূল্য ঘোষণা ফরমে ঘোষণা দিতে হবে।

☘ অভিন্ন পণ্যের (Identical Goods)বিনিময় মূল্য: ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে যোগসাজশের কারণে কোন আমদানীকৃত পণ্যের বিনিময় মূল্য যদি নির্ধারণ করা সম্ভব না হয় তাহলে একই সময়ে বা ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে আমদানিকৃত অভিন্ন পণ্যের বিনিময় মূল্য উক্ত আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য হবে। তবে অভিন্ন মূল্য একাধিক পাওয়া গেলে সর্বাপেক্ষা কম বিনিময় মূল্যের ভিত্তিতে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। অভিন্ন পণ্য বলতে একই দেশ, একই রপ্তানিকারক, একই পণ্য, একই এইচএস কোডভুক্ত, একই মডেল ইত্যাদি হতে হবে। যেমন: সনি ব্রাভিয়া টেলিভিশন এর ৪২” মডেলের অভিন্ন পণ্য হবে হুবহু একই পণ্য হতে হবে। সনি ব্রাভিয়ার অন্য কোন মডেল এক্ষেত্রে অভিন্ন পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।

☘ সমতুল্য পণ্যের (Similar Goods)বিনিময় মূল্য: বিনিময় মূল্য অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় এবং বিগত ৯০ দিনের মধ্যে অভিন্ন পণ্যের মূল্য না পাওয়ার কারণে যদি কোন আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সমতুল্য পণ্যের বিনিময় মূল্যের সাথে তুলনা করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশ একই, প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশে আমদানিকৃত সমতুল্য বা সমজাতীয় পণ্যের বিনিময় মূল্য উক্ত আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য হবে। সনি ব্রাভিয়া ৪২” টেলিভিশন এর সমতুল্য পণ্য হিসেবে স্যামসাং ৪২” টেলিভিশনকে বিবেচনা করা যাবে।

☘ অবরোহী মূল্য (Deductive Value): বিনিময় মূল্য অগ্রহণযোগ্য এবং বিগত ৯০ দিনের মধ্যে অভিন্ন কিংবা সমজাতীয় পণ্যের মূল্যের ভিত্তিতে যদি কোন আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব না হয় তাহলে একই সময় অথবা প্রায় সময়ে আমদানিকৃত পণ্য অথবা অভিন্ন পণ্য অথবা সমতুল্য পণ্য যে অবস্থায় আমদানি করা হয়েছে, সে অবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত নন এইরূপ ক্রেতার নিকট সর্বোচ্চ পরিমাণ যে একক মূল্যে বিক্রয় করা হয়েছে সেই মূল্য হইতে কমিশন, মুনাফা, পরিবহন, শুল্ক, কর, বীমা এবং অন্যান্য সাধারণ ব্যয় বাদ দিয়ে উক্ত আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

☘ হিসাবকৃত মূল্য (Computed Value): বিনিময় মূল্য অগ্রহণযোগ্য এবং বিগত ৯০ দিনের মধ্যে অভিন্ন কিংবা সমজাতীয় পণ্যের মূল্যের ভিত্তিতে বা অবরোহী পদ্ধতিতে যদি কোন আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব না হয় তাহলে আমদানিকৃত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অথবা উৎপাদনের উপকরণের মূল্য এবং উক্ত পণ্য প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণ ব্যয়, মুনাফার পরিমাণ এবং অন্যান্য ব্যয়ের সমষ্টিই হবে উক্ত পণ্যের হিসাবকৃত মূল্য। এই পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণ করতে হলে রপ্তানীকারক দেশে গিয়ে পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে পণ্যের মূল্য হিসাব করে বের করতে হবে।

☘ Fall back method (অন্যান্য পদ্ধতি): শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা, ২০০০ অনুযায়ী প্রথম ৫টি পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করার পরও যদি কোন আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব না হয় তাহলে মূল্য সংক্রান্ত প্রকাশনা অথবা খ্যাতিসম্পন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মূল্য অথবা শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে রক্ষিত মূল্য তালিকা (valuation database) হতে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা যাবে।