পানি সংকট বেড়েছে জুরাইনে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : এমনিতেই সারাবছর পানি সংকট থাকে রাজধানীর জুরাইন এলাকায়। মাঝে মধ্যে যেটুকু পানি আসে, তাতেও দুর্গন্ধ, ভাসে ময়লা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে চলা এই পানি সংকট সপ্তাহ দুয়েক ধরে আরও চরমে পৌঁছেছে।
অনেকে মনে করছেন, গত মাসের শেষের দিকে জুরাইনবাসীর ওয়াসার এমডিকে ‘শরবত খাওয়ানোর চেষ্টা’র পর হঠাৎ করেই এই সংকট বেড়ে গেছে।
এলাকাবাসী বলছেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জুরাইনের বেশিরভাগ এলাকায় ওয়াসার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু জায়গায় পানি পাওয়া গেলেও তা ময়লা-দুর্গন্ধে ভরা, যা ফুটিয়েও ব্যবহারোপযোগী করা যাচ্ছে না। ফলে খাওয়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে এখন জুরাইনবাসীর ভরসা বোতলজাত পানি অথবা স্থানীয় মসজিদগুলোর পানির পাম্প।
এ বিষয়ে জুরাইন এলাকার ব্যবসায়ী আমিনুদ্দীন বলেন, গত সাত-আট বছর ধরে পানি সমস্যা নিয়ে ওয়াসাকে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও বিষয়টি তারা আমলে নেয়নি। এমনকি পানির সমস্যা চরম আকার ধারণ করলে সাত বছর আগেই বাসিন্দারা গণস্বাক্ষর করে সেটি ওয়াসার দফতরে জমা দেয়। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কার্যত কোনো উদ্যোগই নেয়নি সমাধানের জন্য।
সম্প্রতি টানা দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানির চরম সংকট ও সংস্থাটির নির্বিকার আচরণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ওই এলাকার প্রয়াস সংঘের সদস্য মিষ্টি দোকান এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, এতদিন যে সমস্যা ছিল তা ছিল কিছুটা হলেও সহনশীল। কিন্তু এখন যেটি হচ্ছে সেটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এলাকায় পানিই আসছে না। মাঝে মাঝে পানি এলেও তা এতটাই ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা যে কোনোভাবেই ব্যবহারযোগ্য না। কিন্তু পবিত্র রমজান মাসেও পানির এমন সংকট সমাধানে এখন পর্যন্ত ওয়াসার কেউ সেখানে একবারের জন্যও পরিদর্শনেও আসেনি।
মতিউর রহমানের অভিযোগ, এপ্রিলের শেষের দিকে জুরাইনবাসী ওয়াসার এমডিকে শরবত খাওয়ানোর চেষ্টার পর পানির সংকট আরও চরম আকার আকার ধারণ করেছে।
জুরাইনের মুরাদপুর, মাদরাসা রোড, মেডিকেল রোড, ইসলাসাবাদ, ঋষিপাড়া, কাশিনারা রোডসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুরাইন এলাকার সব জায়গাতেই রয়েছে পানির হাহাকার। রমাজানে এ হাহাকার আরও বেড়েছে। তাদের পানি কিনতে হচ্ছে খাওয়া-রান্না ও গোসলের জন্য।
যাদের বাসা স্থানীয় মসজিদের পাশে, তারা মসজিদের স্থায়ী পাম্প থেকে লিটার প্রতি দুই টাকার বিনিময়ে পানি কিনছেন। আর যারা তা পারছেন না, তারা বোতলজাত কিংবা জারের পানি কিনে ব্যবহার করছেন। এভাবেই কাটছে বাসিন্দাদের রমজান মাস। কোনো কোনো মসজিদে পর্যাপ্ত পরিমাণে অজুর পানিও মিলছে না।
পূর্বজুরাইনের ৫৩৩ হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা শফিউল আজম ফারুক বলেন, মাসখানেক ধরে পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ এত বেশি প্রকট হয়েছিল যে ফুটিয়েও ব্যবহার করতে পারিনি। গত ১৫ দিন ধরে সেই ময়লা পানির দেখাও তো পাচ্ছি না। এ বিষয়ে ওয়াসাকে কয়েকবার অভিযোগ করেছি। কিন্তু কেউ সমাধানের জন্য আসেনি।
স্থানীয় আনন্দময়ী মন্দিরের সভাপতি শ্রীনন্দন দাস বলেন, পানির এমন সংকটে মসজিদ-মন্দিরগুলোতেও প্রভাব পড়েছে। ভাগ্যিস এলাকার ১৫-২০টি মসজিদের পাশে গভীর নলকূপ বসানো আছে। এসব গভীর নলকূপের কারণে টাকা দিয়ে হলেও পানির দেখা মিলছে।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন প্রয়াস সংঘের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, পানির এমন সমস্যার কারণে ২০১২ সালে আমরা এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর করে ওয়াসার অফিসে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো সমাধান আজ পর্যন্ত হয়নি। উল্টো সমস্যা আরও বাড়ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নূর হোসেনও স্বীকার করে নিলেন পানি সংকটের কথা। তিনি বলেন, দেড় বছর আগে ডিএসসিসিতে এক সভায় ওয়াসার এমডির সামনে জুরাইনের পানি সমস্যার চিত্র তুলে ধরা হয়। তখন তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু আজও সমাধান হয়নি। শুধু তাই নয়, গত চার বছর ধরে বহুবার ডিএসসিসির মেয়রের সমন্বয়ে ওয়াসাকে চিঠি দিয়েছি। একটারও কোনো উত্তর পাইনি।
ওয়াসার মোডস জোন-৭-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবিদ হোসেন বলেন, জুরাইনে পানির সমস্যা চলছে, এটা ঠিক। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানে আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই ওই এলাকায় নতুন পাম্প বসানো হবে। তবে কবে নাগাদ এই পাম্প বসানো হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
ওয়াসার এমডিকে শরবত খাওয়ানোর চেষ্টার পর থেকে পানির সংকট বেড়েছে— এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আবিদ হোসেন বলেন, এ অভিযোগ ঠিক নয়। জনগণের দুর্ভোগ সমাধান করাই আমাদের কাজ, দুর্ভোগ তৈরি করা নয়।


বিজ্ঞাপন

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *